আসছে উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতাল ‘অরবিস ইন্টারন্যাশনাল’

আধুনিক চক্ষু চিকিৎসা প্রযুক্তি হস্তান্তর ও আন্তর্জাতিক মানের চক্ষু সেবার ধারণা দিতে চট্টগ্রামে আসছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতাল ‘অরবিস ইন্টারন্যাশনাল’।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Dec 2016, 04:55 PM
Updated : 27 Dec 2016, 04:55 PM

আগামী বছরের নভেম্বরে অরবিস উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতালটি চতুর্থবারের মত চট্টগ্রামে আসবে বলে মঙ্গলবার নগরীতে পাহাড়তলীতে এক সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়।

চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাহাড়তলী ক্যাম্পাসে ‘অরবিস’র আগমন উপলক্ষে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতালের ম্যানেজিং ট্রাস্টি ও তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন।

তিনি বলেন, অরবিস পৃথিবীর ৯২টি দেশে কাজ করছে। ২০০১ সাল থেকে অরবিস চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সাথে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

অরবিস বিভিন্ন দেশের চক্ষু হাসপাতালের টেকনেশিয়ানদের যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে বলে জানান তিনি।

ডা. রবিউল জানান, অরবিসের সহযোগিতায় তৃণমূলে চক্ষু চিকিৎসা সেবা সম্প্রসারিত করতে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কেরানিহাটে ও মিরসরাই উপজেলার বারৈয়ারহাটে দুটি ‘ভিশন সেন্টার’ স্থাপন করেছে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল।

এসব ‘ভিশন সেন্টারে’ স্থানীয়দের চক্ষু চিকিৎসা ছাড়াও স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের চক্ষু পরীক্ষা গ্রাম ডাক্তার ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রাথমিক চক্ষু পরিচর্যা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

আগামী বছর নোয়াখালীতে আরও একটি ‘ভিশন সেন্টার’ প্রতিষ্ঠার কথা জানিয়ে ডা. রবিউল বলেন, এসব ভিশন সেন্টারের মাধ্যমে উপজেলার প্রায় সাত-আট লক্ষাধিক মানুষের চক্ষু চিকিৎসা সম্ভব।

“এসব ভিশন সেন্টার গ্রাম পর্যায়ের চক্ষু রোগের প্রায় ৮০ ভাগ চিকিৎসা প্রদান করতে সক্ষম। চট্টগ্রাম বিভাগে প্রতিবছর একটি করে ‘ভিশন সেন্টার’ স্থাপন করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।”

‘অরবিস’ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি অলাভজনক সংগঠন। এটি বিশ্বব্যাপী নিরাময়যোগ্য অন্ধত্ব নিবারণে কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৮২ সাল থেকে সংগঠনটি তাদের কার্যক্রম শুরু করে।

প্রায় ৯২টি দেশের তিন লাখ ২৫ হাজার চক্ষু চিকিৎসক ও টেকনেশিয়ানদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে সংগঠনটি। চক্ষু সেবা দিয়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষকে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রদান করা ডগলাস ডিসি-৮-২১ এয়ারবাস দিয়ে কার্যক্রম শুরু করলেও এটি এখন এমডি-১০ বিমানে তাদের চক্ষু চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

অরবিসের আগমন উপলক্ষে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলন থেকে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডও তুলে ধরেন ডা. রবিউল হোসেন।

তিনি জানান, ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আট লাখ চোখের অপারেশন ও ৮০ লাখ মানুষকে চক্ষু সেবা দিয়েছে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

দেশের তিনটি আই রেফারেল সেন্টারের মধ্যে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র অন্যতম। বছরে ২০ হাজার চোখের অপারেশন ও চার লাখ রোগীকে চোখের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

“সে হিসেবে গত ৩৫ বছরে আমরা ৮০ লাখ মানুষকে চক্ষু সেবা দিয়েছি। পাশাপাশি আট লাখ চোখের অপারেশন করিয়েছি। ভিয়েতনাম, ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশের চিকিৎসকরা প্রশিক্ষণের জন্য আসছে এখানে,” বলেন ডা. রবিউল।

চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রিজোওনাল কোয়ালিটি ট্রেনিং অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার হিসেবে উপমহাদেশে পরিচিতি পাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

চক্ষু চিকিৎসার গুণগত মান বাড়াতে চক্ষু হাসপাতালের ক্যাম্পাসে ‘ইনস্টিটিউট-অব-কমিউনিটি অফথালমোলজি’ স্থাপন করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রবিউল।

এছাড়াও ডিপ্লোমা ইন-কমিউনিটি অফথালমোলজি ও অপটোমেট্রি (স্নাতক) কোর্সও চালু করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

“এ অঞ্চলে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতালটি রেফারেল আই সেন্টার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ শিশু। তাই স্বতন্ত্রভাবে শিশুদের জন্য ‘শিশু চক্ষু বিভাগ’ স্থাপন করা হয়েছে।”

প্রতিষ্ঠার পর থেকে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল প্রায় ২৭০ জন চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে বলেও জানান অধ্যাপক রবিউল।

তিনি বলেন, দেশের জনসাধারণকে নিরাময়যোগ্য অন্ধত্বের হাত থেকে বাঁচাতে অরবিসের সহায়তায় চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল কাজ করে যাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মনির আহমদ, ইনস্টিটিউট অব কমিউনিটি অফথালমোলজির অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ওসমানি এবং চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মো. কামরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।