বিচারহীনতায় পরাজয়ের অনুভূতি: সুলতানা কামাল

বাংলাদেশে বর্তমানে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে দাবি করে মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেছেন, সেই কারণে মানুষের মধ‌্যে পরাজয়ের অনুভূতি কাজ করছে।

চট্টগ্রাম ব‌্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2016, 02:44 PM
Updated : 24 Oct 2016, 02:44 PM

সোমবার চট্টগ্রাম নগরীর ডিসি হিলে এক সমাবেশে তিনি বলেন, “সার্বিক পরিস্থিতিতে আমরা ক্রমশ মাথা নত করে ফেলছি।

“যদিও বা আমাদের কেউ অনবরত মারছে না, হত্যা করছে না, যদিও বা আমাদের প্রত্যেকটা নারীকে প্রতিক্ষণ ধর্ষণ করা হচ্ছে না; তবুও প্রতিটি মানুষ পরাজয়ের অনভূতি বহনে বাধ্য হচ্ছি।”

এই সব ঘটনার বিচার নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে সুলতানা কামাল বলেন, “এভাবে আমরা মাথা নত করে ফেলছি। অর্থাৎ যে একুশ আমাকে মাথা নত না করতে শিখিয়েছে সেটা আজ ভুলে গেছি। যে একাত্তর আমাদের শিখিয়েছিল ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে, সেটাও আমরা ভুলে গেছি।”

ধর্মান্ধতা, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আয়োজিত এই সমাবেশে তিনি বলেন, “জঙ্গিবাদ আমাদের শেখায় একমাত্র আমি বা আমার মতো মানুষ ছাড়া আর কেউ বাঁচবে না। সাম্প্রদায়িকতা শেখায় আমার ধর্ম শ্রেষ্ঠ।

“এভাবে আমরা মানবসমাজে ক্রমশ ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে যাচ্ছি। একা হয়ে দুর্বল হচ্ছি। ফলে ভালোবাসা বা বন্ধুত্ব নয় অস্ত্রই হয়ে উঠছে অস্তিত্ব জানান দেওয়ার একমাত্র কায়দা, নৃশংসতা দিয়েই প্রমাণ করতে হচ্ছে আমি আছি।”

তিনি তরুণদের উত্তরাধিকার ও ইতিহাসকে জেনে নিজেদের করণীয় নির্ধারণ করতে আহবান জানান।

চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজের নেতৃস্থানীয় পাঁচজন সমাজবিজ্ঞানী অনুপম সেন, কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, শহীদজায়া বেগম মুশতারি শফি, অধ্যাপক রণজিৎ দে ও অধ্যাপক মইনুল ইসলামের আহবানে এই সমাবেশ হয়।

অনুষ্ঠানে নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার সাম্প্রদায়িকতার সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে দিয়েছে।

“আমরা বায়ান্নতে বিজয়ী হয়েছি, একাত্তরে বিজয়ী হয়েছি, স্বৈরচারের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। কিন্তু সে বিজয় আমাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। আমরা আমাদের চেতনাকে বিসর্জন দিয়েছি। বিসর্জন দিয়েছি সংবিধানের মৌলনীতিগুলোকে।”

গণজাগরণের আবেদন ফুরিয়ে যাওয়াটাকেও বিসর্জন আখ্যা দিয়ে রামেন্দু মজুমদার বলেন, “সাম্প্রতিক অতীতে এমন জাগরণ বাঙালির জাতীয় জীবনে আসেনি। অথচ সেটাকেও আমরা বিসর্জন দিয়ে দিলাম।”

তিনি মনে করেন, আন্দোলন শুরুর পর যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব‌্যুনাল আইন সংশোধনের পরই কর্মসূচি বন্ধ রাখা উচিৎ ছিল। প্রয়োজনে সময়ে সময়ে আন্দোলনের ডাক দিলে গণজাগরণের আবেদন টিকে থাকত।

লেখক, ব্লগার, সংস্কৃতিকর্মীদের হত্যার সময় সরকারের ‘নির্লিপ্ততার’ সমালোচনাও করেন রামেন্দু মজুমদার।

হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও তিনি বলেন, “এভাবে জঙ্গিবাদ হয়ত দুর্বল হবে, কিন্তু নির্মূল হবে না। নির্মূল করতে হলে সমাজের গহীনে যে সাম্প্রদায়িকতার চাষ হয়েছে সেটাকে নির্মূল করতে হবে।”

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক অনুপম সেন। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসান। সাংস্কৃতিক সংগঠক সরওয়ার আলীও বক্তব‌্য রাখেন।