মীর কাসেমের সর্বোচ্চ দণ্ড বহালের প্রতীক্ষায় তারা

একাত্তরে চট্টগ্রামের বদর কমান্ডার মীর কাসেম আলীর ফাঁসির দণ্ড আপিল বিভাগে বহাল থাকার প্রতীক্ষায় আছেন তার পরিচালিত টর্চার সেলে নির্যাতিতরা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2016, 04:04 PM
Updated : 7 March 2016, 07:02 PM

একাত্তরে চট্টগ্রামে আলবদর বাহিনীর ‘টর্চার সেল’ হিসেবে খ্যাত ডালিম হোটেলে নির্যাতিতরা মনে করেন, সেসময় চট্টগ্রাম শহরে আলবদর বাহিনীর প্রধান এবং অপারেশন কমান্ডার হিসেবে সব ধরনের নির্যাতন ও হত্যার দায় মীর কাসেম আলীর ওপরই বর্তায়।

তাই আপিলের রায়েও তার সর্বোচ্চ সাজা বহালের পর তা দ্রুত কার্যকরের আশা প্রকাশ করেছেন তারা।

মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রামের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন আহমেদসহ আটজনকে হত্যার দুটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তখনকার আলবদর কমান্ডার মীর কাসেমকে ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মঙ্গলবার ওই রায়ের বিরুদ্ধে তার আপিলের রায় দেবে সুপ্রিম কোর্ট।

একাত্তরে নভেম্বরের শেষে ডালিম হোটেলে ধরে নেওয়ার পর বদর সদস্যরা অমানষিক নির্যাতন করে মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক নাসিরউদ্দিন চৌধুরীকে। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীনের পর তিনি সে টর্চার সেল থেকে মুক্তি পান।

মীর কাসেম আলীর বিচারে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন তিনি। আপিলের রায়ের আগের দিন সোমবার তার সঙ্গে কথা হয়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নাসিরউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “বদর বাহিনীর চট্টগ্রামের কমান্ডার হিসেবে কাসেম আলীর নির্দেশেই ডালিম হোটেলসহ আরও দুটি টর্চার সেলে নির্যাতন-হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধা ও এর পক্ষের লোকজনদের।”

এসবের নির্দেশদাতা হিসেবে মৃত্যুদণ্ডই তার প্রাপ্য দাবি করে তিনি বলেন, “মানুষ রায়ের দিকে চেয়ে আছে। মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকবে এ আশা করছি।”

ডালিম হোটেলে নির্যাতনের শিকার মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মো. এমরানও আপিলের রায়ে মীর কাসেমের সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকার প্রতীক্ষায় আছেন।

তিনি জানান, একাত্তরের ৩০ নভেম্বর চান্দগাঁওয়ের বাড়ি থেকে তাকে ও তার পরিবারের পাঁচ সদস্যকে মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনারা ধরে নিয়ে যায় চট্টগ্রামের পুরাতন টেলিগ্রাফ অফিস রোডের মহামায়া ভবনে, যেটি পরে ডালিম হোটেল নামে পরিচিতি পায়।

এমরান বলেন, সেদিন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ধরে এনে নির্যাতনের পর হত্যা করতে চেয়েছিল। দেশ স্বাধীন হয়ে যাওয়ার পর তারা পালিয়ে যায়।

“ট্রাইব্যুনালের রায়ে কাসেম আলীর ফাঁসির দণ্ড হওয়ার পর আমরা খুশি হয়েছি। আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা আশায় আছি, আপিলের রায়ে ফাঁসির দণ্ড বহাল থাকার পাশাপাশি সে রায় দ্রুত কার্যকরে উদ্যোগ নেওয়া হবে।” 

মীর কাসেম আলী (ফাইল ছবি)

ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রামে মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৪টি অভিযোগ এনেছিল প্রসিকিউশন। এর মধ্যে দশটি ‘সন্দেহাতীতভাবে’ প্রমাণিত হয়েছে বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়। আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে।

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন গ্রেপ্তার করার পর ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে মীর কাসেমকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার যুদ্ধাপরাধের বিচার। 

২০১৪ সালের ২ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ডের রায় দিলে ৩০ নভেম্বর আপিল করেন মীর কাসেম। দেড়শ’ পৃষ্ঠার মূল আবেদন ও এক হাজার ৭৫০ পৃষ্ঠার নথিপত্রসহ করা আপিলে তিনি সাজা বাতিল করে খালাস চান।

উভয়পক্ষের শুনানি ও যুক্তিতর্কের পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ ৮ মার্চ রায়ের দিন নির্ধারণ করেন।