চবি ছাত্রলীগ: কমিটি পূর্ণাঙ্গ হওয়ার আগেই স্থগিত, ক্ষোভের সঙ্গে স্বস্তিও

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নতুন কমিটি পূর্ণাঙ্গ হওয়ার আগেই স্থগিত হওয়ায় ক্ষুব্ধ বিভিন্ন পদে মনোনয়ন চাওয়া নেতারা।

আজিজ আহমদ,  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Feb 2016, 05:27 PM
Updated : 10 Feb 2016, 05:27 PM

তারা মনে করেন, সভাপতি আলমগীর টিপু ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী সুজনের ‘গড়িমসির’ কারণে পূর্ণাঙ্গ হয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি আর তাদের অনুসারীদের মধ্যে কয়েকদফা সংঘর্ষের জেরে সেই কমিটি এখন স্থগিত হয়ে গেল।

এ নিয়ে তারা প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বিষোদগারও করছেন।

এদিকে কমিটি স্থগিত হওয়ায় ‘স্বস্তি’ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক কয়েকজন নেতা। তাদের আশা, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের হস্তক্ষেপে ‘দ্রুতই’ পূর্ণাঙ্গ কমিটি পাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।

গত ২০ জুলাই দুই সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠনের পর সাত মাসে চার দফা সংঘর্ষের পর মঙ্গলবার রাতে কেন্দ্র থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে সংঘর্ষের কারণ দর্শাতেও বলেছে কেন্দ্র।

টিপু-সুজনের কমিটির পর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২৫ অগাস্ট সোহরাওয়ার্দী হলের কক্ষ ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় তাদের অনুসারীরা। ২ নভেম্বর ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে ভর্তিচ্ছুদের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে ফের সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তারা। সর্বশেষ গত সোম ও মঙ্গলবার সংঘর্ষে জড়ায় তারা।

এ প্রেক্ষাপটে কমিটি স্থগিত হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করে চবি ছাত্রলীগের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক মো. মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ব্যর্থ এ কমিটি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ। সাধারণ নেতাকর্মীদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অবহেলা করার ফলেই স্থগিত হয়েছে এ কমিটি।”

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক ইমাদ আহমেদ সাহিল বলেন, সাত মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেননি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

“উল্টো ভর্তি পরীক্ষার সময়সহ বিভিন্ন সময় তাদের অনুসারীদের সংঘর্ষে সংগঠনের বদনাম হয়েছে।’’

‘ত্যাগী ও স্বচ্ছ ইমেজের’ কর্মীদের দিয়ে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের দাবি জানান তিনি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-মানব বিষয়ক সম্পাদক সাখাওয়াত রায়হানের অভিযোগ, সভাপতি টিপু ও সাধারণ সম্পাদক সুজন ‘তাদের দল’ ভারী করতে ছাত্রদল-শিবিরসহ অন্য সংগঠনের কর্মীদের ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পদ পাওয়ার পরপরই বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের দল ভারী করতে ছাত্রদল ও শিবিরের যেসব লোককে সংগঠনে ঢুকিয়েছেন তারাই বারবার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।”

‘অনুপ্রবেশকারীদের’ বাদ দিয়ে ‘ত্যাগীদের’ নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার আগ পর্যন্ত বিশৃঙ্খলা থামবে না বলে মনে করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েল সাবেক এ ছাত্রলীগ নেতা।

পূর্ণাঙ্গ হওয়ার আগেই কমিটি স্থগিত হওয়ায় তৃণমূল কর্মীদের ‘হতাশার’ কথা জানা গেল ছাত্রলীগের ভিএক্স পক্ষের কর্মী মিজানুর রহমান বিপুলের বক্তব্যে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দিনরাত পরিশ্রম করে আমরা যারা তৃণমূলে রাজনীতি করি তারা হতাশ।

“ছোটভাইরা কমিটির জন্য খুব চাপ দিচ্ছে। কিন্তু সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরোধে কমিটি তো পূর্ণাঙ্গ হল না; উল্টো মারামারির কারণে স্থগিতই হয়ে গেল।”

সাবেক নেতা ও বর্তমান কর্মীদের এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে কমিটি স্থগিত হওয়ার পর বেশ কয়েকদফা চেষ্টা করেও টিপু ও সুজনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার রাতে কমিটি স্থগিত হওয়ার আগে সভাপতি টিপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “বারবার অস্থিরতা কারণে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা পিছিয়ে গেছে। সুযোগসন্ধানী অনুপ্রবেশকারীদের কারণেই এ অবস্থা হয়েছে।”

পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা হয়েছিল বলেও দাবি করেছিলেন তিনি।

সাধারণ সম্পাদক সুজন তখন বলেছিলেন, কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে আরও দেড় মাস সময় লাগবে।