চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের মিছিলে শিবিরের হামলা, আটক ২

বন্দর নগরীর চকবাজার এলাকায় চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বের হওয়া ছাত্রলীগের মিছিলে ইসলামী ছাত্রশিবির কর্মীরা হামলা চালিয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Feb 2016, 11:50 AM
Updated : 6 Feb 2016, 11:50 AM

শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মিছিলের সময় রাস্তার পাশের ভবনে থাকা শিবির নিয়ন্ত্রিত কোচিং সেন্টার থেকে হামলার সময় গুলি চালানো হয় বলেও অভিযোগ ছাত্রলীগের।

এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুইজনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে ‍পুলিশে দিয়েছে ছাত্রলীগ। তবে অস্ত্রসহ কাউকে আটক করা যায়নি।

এদিকে মিছিলের হামলার ঘণ্টাখানেক পর শিবির নিয়ন্ত্রিত কয়েকটি কোচিং সেন্টারে ভাংচুর চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

চকবাজার থানার ওসি আজিজ আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মিছিলে হামলার ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে যাচাই বাছাই চলছে।”

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে চকবাজার থেকে হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজের মূল ফটক পর্যন্ত ঝটিকা মিছিল করে ইসলামী ছাত্রশিবির।

আর চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসের মহসীন কলেজ পাশের অংশ থেকে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মিছিল বের করে ছাত্রলীগ।

মিছিলটি চট্টগ্রাম কলেজের প্যারেড মাঠ পেরিয়ে চকবাজারা মোড়ের দিকে যাওয়ার সময় ফিউচার কোচিং সেন্টারের সামনের ভবন থেকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়।

নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইটের আঘাতে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের নেতা মাহমুদুল করিম মাথায় ব্যথা পান। এসময় ধাওয়া করে কয়েকজনকে আটক করা হয়।”

রনি বলেন, “ইট-পাথর নিক্ষেপের সময় গুলির আওয়াজও শোনা গেছে। তবে গুলিতে কেউ আহত হয়নি।

“যে ভবন থেকে হামলা করা হয় সেটিতে শিবির নিয়ন্ত্রিত চারটি প্রতিষ্ঠান আছে।”

চকবাজারের ওসি আজিজ আহমদও বলেন, “মিছিলে গুলির বিষয়ে শুনেছি। তবে এরকম কোনো আলামত এখনো পাইনি।”

ঘটনাস্থলে সরেজমিনে দেখা যায়, ছাত্রলীগের মিছিলে হামলার পরপর চকবাজার এলাকার স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত হয়ে দোকানপাট বন্ধ করে দেয়।

হামলার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা চকবাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে। এসময় কয়েকটি পটকাও ফোটায় ছাত্রলীগ এবং ওই ভবনে ঢুকে ‘প্রত্যাশা’ নামের একটি কোচিং সেন্টারে ভাংচুর চালায়।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা রনি বলেন, “মিছিলে হামলা চালানোয় নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ ছিল। তারা শিবির নিয়ন্ত্রিত কোচিং সেন্টারে ভাংচুর করে। ওই ভবনে শিবিরের ৫০-৬০ জন নেতাকর্মী ছিল।

“তারা বড় কোনো ঘটনা ঘটানোর প্রস্তুতি নিয়েই হামলা করে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রবেশের আগেই পেছনের সিঁড়ি দিয়ে তারা পালিয়ে যায়।”

বিকাল পৌনে ৩টার দিকে চকবাজার এলাকায় আবার দোকান খোলেন ব্যবসায়ীরা।

গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কলেজের শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে হামলার শিকার হয় ছাত্রলীগকর্মীরা। এরপর ইসলামী ছাত্র শিবিরের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ওইদিনই সংঘর্ষের পর চট্টগ্রাম কলেজের শিবির নিয়ন্ত্রিত সোহরাওয়ার্দী ও শেরেবাংলা ছাত্রাবাসে তল্লাশি চালিয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করে পুলিশ।

১৬ ডিসেম্বর বিকালেই চট্টগ্রাম কলেজের চারটি ও মুহসীন কলেজের দুটি ছাত্রাবাস বন্ধ করে দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরদিন প্রায় তিন দশক পর ক্যাম্পাসে মিছিল করে ছাত্রলীগ।

এরপর ২ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে কলেজ দুটি শিবির মুক্ত করতে আট দফা দাবি দেয় নগর ছাত্রলীগ।

এর আগে প্রায় তিন দশক ধরে চট্টগ্রাম নগরীর কেন্দ্রে অবস্থিত চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসীন কলেজের নিয়ন্ত্রণ ছিল শিবিরের হাতে।

কলেজ দুটির অদূরে চকবাজার এলাকায় অধিকাংশ কোচিং সেন্টার ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণও শিবিরের হাতে। এছাড়া আশেপাশে এলাকায় মেসগুলোতে শিবিরের শক্ত অবস্থান আছে।