মাতৃভূমিতে ‘স্বপ্নের সফরে’ মার্কিন নৌ-কর্মকর্তা

চৌদ্দ বছর বয়সে মার্কিন মল্লুকে পাড়ি জমিয়েছিলেন বাংলাদেশি কিশোর শুভ চৌধুরী। সেদেশের নাগরিকত্ব পেয়ে এখন তিনি দিব্যি মার্কিন নৌবাহিনীর সদস্য।

মিন্টু চৌধুরী চট্টগ্রাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2015, 07:40 PM
Updated : 3 Oct 2015, 07:40 PM

কাজ করছেন ১৬ বছর ধরে, বর্তমানে তিনি এ বাহিনীর ওয়েস্টার্ন প্যাসিফিক টাস্কফোর্স-৭৩ এর নন কমিশনড লজিস্টিক অফিসার।

বাবা-মা বাংলাদেশে থাকলেও সেভাবে আর দেশে ফেরা হয়নি শুভর। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ নৌ-মহড়াই সুযোগ করে দিল তাকে নিজভূমে অন্যরকমভাবে ফেরার।

এ সফরকে মার্কিন নৌ অফিসার শুভ চৌধুরী বলছেন, “এটা আমার জন্য স্বপ্নের সফর।”

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর পঞ্চম যৌথ মহড়া ‘কারাট’ চট্টগ্রাম নৌ-অঞ্চলে শুরু হয়েছে গত বুধবার থেকে। এ মহড়ায় অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর টাস্কফোর্স-৭৩ এর একটি দলের সঙ্গে আসেন শুভ চৌধুরী। গত ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা হয়ে চট্টগ্রামে আসেন তিনি।

যৌথ এ মহড়া শেষ হবে রোববার। শনিবার চট্টগ্রামের জহুরুল বিমান ঘাঁটিতে মহড়া চলাকালে মার্কিন নৌ কর্মকর্তা শুভ চৌধুরীর সাথে কথা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে।

এই সময় তার সঙ্গে টাস্কফোর্স-৭৩ এর পাবলিক রিলেশন অ্যাফেয়ার্স অফিসার অর্লো আব্রাহামসনও ছিলেন।

ইংরেজি-বাংলা দুই ভাষাতেই শুভ চৌধুরী তার উচ্ছ্বাস, আবেগ-অনুভূতির কথা তুলে ধরেন।

ঢাকার ওয়ারির স্থায়ী বাসিন্দা শ্রীপ্রকাশ চৌধুরী ও মায়া চৌধুরীর বড়ছেলে শুভ। শ্রীপ্রকাশ শিল্প ব্যাংকে চাকরি শেষে ডাচবাংলা ব্যাংকেও চাকরি করেন কিছুদিন।

শুভ চৌধুরী বলেন, “বাবা-মা কিছুদিন আমেরিকায় থাকলেও আবার ঢাকায় ফিরে খিলক্ষেত এলাকায় বসবাস করছেন। একমাত্র ছোটবোন সুবর্ণা চৌধুরীও তার স্বামীর সাথে থাকেন অস্ট্রেলিয়া।”

“১৯৯৪ সালে ঢাকার সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থাতেই ‘ডাইভারসিটি ভিসা’র আওতায় আমেরিকায় যাই। এরপর ১৯৯৯ সালে মার্কিন নেভিতে যোগ দিই।

“ঢাকা হয়ে চট্টগ্রামের মহড়ায় এলেও বাসায় যাওয়া হয়নি। ঢাকা এয়ারপোর্টে দেড়-দুইঘণ্টার জন্য বাবা-মার সাথে দেখা হয়েছিল। মহড়া শেষ করে ঢাকা হয়ে ফিরব। খুব সম্ভবত বাসায় যাওয়া হবে না।”

এয়ারপোর্টেই বাবা-মার সঙ্গে দেখা হবে, বললেন তিনি।

মার্কিন নৌবাহিনীর হয়ে জন্মভূমিতে মহড়ায় অংশ নিতে আসা নিজের জন্য একটি বড় পাওয়া জানিয়ে শুভ পরিষ্কার ইংরেজিতে বললেন, “ইটস অ্যা ড্রিম ট্যুর ফর মি।”  

তিনি  বলেন, বাংলাদেশে এসে এ মহড়ায় অংশ নিতে পারা আমার জন্য গৌরবের। এ মহড়ার মধ্য দিয়ে দুইদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও বাড়বে। এর মাধ্যমে উভয় বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের অভিজ্ঞতা বাড়াতে পারবে।

মার্কিন নৌবাহিনীর সদস্য হিসেবে নিজে গর্ববোধ করেন জানিয়ে শুভ চৌধুরী বলেন, “আমি এখন নন কমিশনড লজিস্টিক অফিসার হিসেবে কাজ করছি। ভবিষ্যতে মাস্টার চিফ (লজিস্টিক অফিসারদের প্রধান) হতে চাই।”

নিজের জন্মভূমি সম্পর্কে তার অভিমত, “বাংলাদেশ সব সময়ই খুব সুন্দর। এত সুন্দর যে তা কখনো পাল্টায় না। এদেশের মানুষগুলোও খুব ভালো।”

এক প্রশ্নের জবাবে শুভ বলেন, ছোটবেলার স্কুল এবং স্কুলের শিক্ষকদের কথা তার মনে পড়ে খুব। সেসময় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম তেমন না থাকায় তার পুরান ঢাকার বন্ধুদের সাথে আর যোগাযোগ নেই।

তিনি বাংলাদেশি তরুণদের উদ্দেশে বলেন, “কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই।”   

৩৫ বছর বয়সী শুভ চৌধুরী এখনো অবিবাহিত। আগামী বছরের শুরুতে তার ফিলিপিনো বান্ধবীকে বিয়ে করবেন বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশে আসা যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর কর্মকর্তা অর্লো আব্রাহামসন তার সহকর্মী শুভ চৌধুরী সম্পর্কে বলেন, “সে একজন মেধাবী লজিস্টিক অফিসার।”

মার্কিন নৌবাহিনীতে বিভিন্ন দেশ থেকে এসে স্থায়ী হওয়া অনেক পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যখন আমরা মার্কিন নৌবাহিনীতে কাজ করি তখন আমরা সকলেই আমেরিকান।”