বন্দর ধ্বংস করতে ‘মাফিয়া চক্র’ সক্রিয়: মহিউদ্দিন

চট্টগ্রাম বন্দরকে ধ্বংস করতে ‘আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্র’ সক্রিয় রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2015, 02:14 PM
Updated : 31 August 2015, 02:14 PM

সোমবার দুপুরে নগরীর চশমা হিলে নিজ বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন।

মহিউদ্দিন বলেন, “চট্টগ্রামে অনেক নেতা আছেন। কেউ এ বিষয়ে কথা বলেন না। অনেকের সৎসাহসও নেই। কেউ কেউ ব্যক্তি লাভের জন্যও চুপ থাকেন।”

বন্দরে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও সরকারিভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না জানিয়ে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র বলেন, “দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ার পরও ব্যবস্থা না নেওয়ায় মানুষের মনে ক্ষোভ আছে। এটা অন্যায় হচ্ছে।

“মাফিয়া চক্রকে প্রতিহত করতে শক্ত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এখনো শক্ত সিদ্ধান্ত নিইনি। অনেকে মনে করেন আমার বয়স হয়ে গেছে।”

জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে যে কোনো অপশক্তিকে প্রতিহত করা সম্ভব বলেও মত দেন তিনি।

“এসএসএ এসেছিল, তাড়িয়েছি। কোনো প্রলোভনে পিছু হটিনি। তাদের গুমর ফাঁস করেছি।”

তবে ‘বন্দর রক্ষায়’ এবার এখনও কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেননি এই বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা।

বন্দর ধ্বংস করতে ‘সুপরিকল্পিত নীলনকশা’ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে চলছে অভিযোগ করেন মহিউদ্দিন।

তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার অনুসারে, সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা জরিপ চালিয়ে সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হলেও হঠাৎ করে তা পায়রা বন্দরে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে।”

পায়রা বন্দরে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের প্রয়োজনীয় নাব্যতা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, “সেখানে গভীর সমুদ্র বন্দর হলে চোরাচালানের একটি নিরাপদ ঘাঁটি গড়ে উঠবে।”

চট্টগ্রাম বন্দর বর্তমানে মাফিয়াদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এই বন্দর মাদক ও অস্ত্র চোরচালানের ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।”

একটা মাফিয়ার অধীনে চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র এসেছিল জানিয়ে ‘সেটার বিচার হয়েছে’ বলে স্বস্তি প্রকাশ করেন তিনি।

সেসময় তিনি অভিযোগ করেন, “এবার এখানে কোকেন ধরা পড়ল। জাহাজ বাইরে থেকে মালামাল আনলে এলসি করতে হয়। এলসি ছাড়া মালামাল কিভাবে আসল?”

বন্দরে দায়িত্বরত বিভিন্ন সংস্থার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মহিউদ্দিন।

“কোস্টগার্ড, নেভি, কাস্টমস ছিল। এখানে এনএসআই, ডিজিএফআই সক্রিয় থাকার পরও কীভাবে এক মাস এসব কোকেন বন্দরে থাকল?”

অপকর্মকারীরা বন্দরের রাঘব-বোয়ালদের আপন করে নিয়েছে বলেই কোকেন এখানে এসেছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।

“চট্টগ্রাম বন্দরকে আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রের কাছে হস্তান্তর এবং একে ধ্বংস করার নানাবিধ পরিকল্পনা ও আলামত সম্পর্কে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও সংসদীয় কমিটি নির্লিপ্ত ও উদাসীন” বলেও অভিযোগ আনেন তিনি।

বন্দরের জেটি পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি বার্থ অপারেটর সাইফ পাওয়ার টেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে মহিউদ্দিন বলেন, “এখন তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক মাফিয়া সিন্ডিকেটের রাঘব বোয়ালরা। তাই তারা এখন অনেক শক্তিশালী।”

সাইফ পাওয়ার টেকের কাজ পাওয়া নিয়েও আবারো অভিযোগ তোলেন নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি।

“দরপত্রে এমনভাবে শর্ত জুড়ে দেওয়া হচ্ছে যাতে করে সাইফ পাওয়ারটেক ছাড়া অন্য কারো কাজ পাওয়ার সুযোগ নেই।”

এর আগে গত বছর ২৫ অগাস্ট বন্দর রক্ষা পরিষদের সংবাদ সম্মেলন থেকে সাইফ পাওয়ার টেকের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন মহিউদ্দিন।

চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি ও এনসিটি (আংশিক) জেটি পরিচালানাকারী বেসরকারি বার্থ অপারেটিং প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ার টেক।

এদিকে গত ২৫ জুন এনসিটির চার ও পাঁচ নম্বর জেটি পরিচালনার কাজটি যৌথভাবে পেয়েছে সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড, এম এইচ চৌধুরী লিমিটেড এবং এ অ্যান্ড জে ট্রেডার্স।

এছাড়া বন্দর কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া, কর্ণফুলীর ড্রেজিংয়ের নামে লুটপাট, নদীর নাব্যতা হ্রাস করে বন্দরের এক ও দুই নম্বর জেটিকে নিস্ক্রিয় করে ফেলাসহ বিভিন্ন অভিযোগ সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন মহিউদ্দিন।