চনমনে মেজাজে বাংলাদেশ দল

টানা তিন টেস্টে বাংলাদেশের সঙ্গী আক্ষেপ। তিন ম্যাচেই তারা হেরেছে ড্র করার মতো দারুণ জায়গা থেকে। তাতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের আগে নড়ে যেতেই পারে মুশফিকুর রহিমের দলের আত্মবিশ্বাস। সেটাকে ঠিক জায়গায় ফিরিয়ে এনেছেন তামিম ইকবাল, মুমিনুল হক।

মোরাটুয়া থেকে অনীক মিশতাকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 March 2017, 02:10 PM
Updated : 2 March 2017, 02:15 PM

মোরাটুয়ার ডি সয়সা স্টেডিয়ামে টস জিতে কেন দিনেশ চান্দিমাল ফিল্ডিং নিলেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না কেউই। নবম ওভারে সৌম্য সরকার ক্যাচ দিয়ে ফেরার পর মনে হচ্ছিল, সবুজ উইকেটে পেসারদের দিয়ে বাংলাদেশকে থামানোর প্রচেষ্টা স্বাগতিকদের।

সেই পরিকল্পনা থাকলেও তামিম-মুমিনুলের দৃঢ়তার সঙ্গে পেরে উঠেনি লঙ্কানরা। তামিম ইকবালের শতক আর মুমিনুল হক-লিটন দাসের অর্ধশতকের ওপর ভর করে প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেটে ৩৯১ রান করে বাংলাদেশ।

শুরুতে পাল্টা আক্রমণে ইনিংসের সুরটা ঠিক করে দেওয়ার কৃতিত্ব তরুণ মুমিনুলের। স্পিনারদের পেছনের পায়ে যেমন স্বচ্ছন্দ্যে খেলেছেন, এগিয়ে এসেও তেমনি পাল্টা আক্রমণে গেছেন।

চমৎকার ব্যাটিংয়ে তামিমকে ছায়ায় ঢেকে দিয়েছিলেন মুমিনুল। দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচের প্রথম দিনের খেলা শেষে অতিথিদের সবচেয়ে প্রাপ্তি এই তরুণের দৃঢ়তাভরা ব্যাটিং।

প্রথম দিনের খেলা শেষে দলের ম্যানেজার ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদের কণ্ঠে ছিল সেই কথাই।

“আজকে সবচেয়ে ভালো ব্যাপার ছিল মুমিনুলের ব্যাটিং। ওর সঙ্গে তামিমের জুটিটাও দারুণ ছিল। তামিমও চমৎকার ব্যাটিং করেছে। শেষের দিকে লিটন খেলেছে অসাধারণ এক ইনিংস। ব্যাটিংয়ে দিনটি পুরোপুরি সন্তুষ্ট হওয়ারই মতো। তবে আমরা নতুন বলে কখনও উইকেট দিতে চাই না।”

সবচেয়ে বেশি বল আর সময় খেলার সুযোগ মিলেছে তামিমের। ভালো শুরু পাওয়া বাঁহাতি এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান চাইলে আরও বেশি সময় ব্যাট করতে পারতেন, তাকে মাঠ থেকে ডেকে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল না দলের। দেশসেরা উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তৃতীয় সেশনে নিজে থেকেই আর ব্যাটিংয়ে নামেননি। শতরানের এক ইনিংসেই কখনো টেস্ট, কখন ওয়ানডে কখনও বা টি-টোয়েন্টি মেজাজে খেলে দিয়েছেন বড় কিছু করার ইঙ্গিত।

যা করতে চাচ্ছিলেন তাই হচ্ছিল তামিমের। স্পিনারদের উড়িয়েছেন মাথার ওপর দিয়ে। স্কয়ার দিয়ে সীমানার বাইরে পাঠিয়েছেন পেসারদের। অনেক সময় মাথা নীচু করে পার করে দিয়েছেন বিপজ্জনক কোনো স্পেল।

দারুণ কাটানো দিনে কাঁটা হয়ে বিধছে সৌম্যর দ্রুত ফেরা। কোনো অবস্থাতেই নতুন বলে উইকেট দিতে চায় না বাংলাদেশ। থিতু হওয়া ব্যাটসম্যানদের দ্রুত ফেরাও দেখতে চায় না তারা। কিন্তু তা আর হয়নি। মিডলঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান মুশফিক, সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ ফিরেছেন বড় ইনিংস খেলার আশা জাগিয়ে।

কিপিং ছাড়লে চার নম্বরে মুশফিকের ব্যাটিং করা নিশ্চিত। সেক্ষেত্রে ছয় নম্বরে নেমে যেতে পারেন মাহমুদউল্লাহ। উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান লিটন দাসকে জায়গা দিতে গিয়ে বাদ পড়তে পারেন সাব্বির রহমান। প্রস্তুতি ম্যাচের দলেও আছে তার স্পষ্ট ছাপ।

টেস্ট দলে কিপার হিসেবে নুরুল হাসানের চেয়ে লিটনকে এগিয়ে রেখেছে ব্যাটিং। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনও সেভাবে জ্বলে উঠতে না পারা এই তরুণ দেখিয়েছেন তার সামর্থ্যের খানিকটা। পুরনো বলে স্পিন খুব ভালো সামলেছেন, শেষ বেলায় পেসারদের অফ স্টাম্প ঘেঁষা বলেও উতরে গেছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুর্ভাবনা দ্বিতীয় ইনিংস। দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে ঠিকঠাক মতো দ্বিতীয় ইনিংস খেলার সুযোগ মেলে না। শুক্রবার বরং বোলিংয়ে তাসকিন আহমেদ-মুস্তাফিজুর রহমান কেমন করে সেটা জানার জন্যই উন্মুখ হয়ে থাকবে বাংলাদেশ দল।