সব দায় নিজের কাঁধেই নিলেন তামিম

লেগ সাইডে সীমানায় একটিই ফিল্ডার। ফুল লেংথ বলের ফাঁকে ফাঁকে টিম সাউদি মিশিয়ে দিচ্ছিলেন শর্ট বল। উদ্দেশ্য পরিষ্কার। মাঠে থাকা সবাই, টিভি পর্দার সামনে সবাইও হয়ত বুঝতে পারছিলেন। তামিম ইকবালের না বোঝার কারণ নেই। দেখলেন, বুঝলেন এবং ফাঁদে পা দিলেন। নিজের বক্স ফাঁকা রেখে তামিম প্রতিপক্ষের বক্সে ‘টিক’ দিয়ে এলেন!

ক্রীড়া প্রতিবেদক ক্রাইস্টচার্চ থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2017, 01:01 PM
Updated : 23 Jan 2017, 02:55 PM

রণাঙ্গনে কামানের সামনে বুক পেতে দেওয়ায় বীরত্বের কিছু নেই। বরং কামানের গোলা থেকে নিজে আড়াল করে পাল্টা আক্রমণ করাই বীরদের কাজ। তামিম করে এসেছেন প্রথমটি। লড়াইয়ের শুরুতে সেনাপতির আত্মহত্যা, দায়িত্ব নেওয়ার মতো এগিয়ে এলেন না কেউ, বাকি সেনাদলও ছেড়ে পালাল রণাঙ্গণ।

মাঠে দায়িত্ব নিতে না পারলেও মাঠের বাইরে দায়িত্বটা নিচ্ছেন তামিম। নিজের কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন নিজেকে। দলের ব্যর্থতার দায় পুরোটাই নিলেন নিজে।

“আমি যেভাবে আউট হয়েছি সেটা খুব বাজে ছিল। বাজে বলের জন্য অপেক্ষা করতে পারতাম, লম্বা সময় ক্রিজে থাকতে পারতাম। আমি থাকলে হয়ত আমাকে ঘিরে জুটি গড়ে উঠত। তাহলে চিত্রটা ভিন্ন হতে পারতো। আমি এর পুরো দায়-দায়িত্ব নিচ্ছি, কারণ শুরুটা আমিই করেছিলাম।”

“যেহেতু আমি অধিনায়ক, আমার ব্যাটিং দিয়ে আমি আরও ভালোভাবে দলকে নেতৃত্ব দিতে পারতাম। যেভাবে আমি দ্বিতীয় ইনিংসে আউট হয়েছি, আমার মনে হয় না, এভাবে আউট হলে কোনো নেতার কাছ থেকে ভালো বার্তা যায়।”

এই ইনিংসেই শুধু নয়, গোটা সফরেই তামিম আপন চেহারায় ছিলেন কম সময়ই। সফরজুড়ে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১১ ইনিংসে মাত্র দুবার পঞ্চাশ ছুঁতে পেরেছেন তামিম, সর্বোচ্চ মোটে ৫৯!

এই আত্মউপলব্ধি তামিমেরও আছে। যথারীতি পুরো সিরিজের ফর্ম নিয়েও কোনো অজুহাত দাঁড় করালেন না।

“পুরো সিরিজে এমন একটা ইনিংস ছিল না যখন আমি ধুঁকেছি। স্কোর যাই করি, খুব ভালো খেলেছি। সমস্যা হয়নি। কিন্তু পুরো সফরে তা কাজে লাগাতে পারিনি। হয়তো একটা দুইটা পঞ্চাশ, চল্লিশ করেছি। কিন্তু আমার প্রতি আমার দলের, এমনকি প্রত্যাশা অনেক বেশি। যদি ধুঁকতাম, তাহলে মানা যেত। কিন্তু কোনো সময় ভুগিনি, তাও কাজে লাগাতে পারিনি, এটা ক্রাইম। আমিই এজন্য দায়ী।”

তামিম তো সব দায় নিলেন, কিন্তু অন্যরা? ক্রিকেট খেলাটা এমন যে দলীয় খেলা হলেও ভেতরের লড়াইটা অনেক সময়ই ব্যক্তিগত। সেনাপতি ফিরে গেলেই তাই নায়ক হতে পারতেন যে কেউ। একটি লড়িয়ে ইনিংস, একটি ভালো জুটিই ম্যাচে ফেরাতে পারত বাংলাদেশকে। কিন্তু পারেননি ব্যাটসম্যানদের কেউই। তামিম সেসবও মেনে নিলেন অকপটে।

“আমরা নিবেদন দেখাতে পারিনি। আমার শট বলেন, বা অন্য যারা আউট হয়েছে... এমন নয় যে, আমরা খুব ভালো বলে আউট হয়েছি। নিজেদের দোষে আউট হয়েছি। তারই ফল এটি, যা আমরা নিজেরাই পরিবর্তন করতে পারতাম।”

“কিছু ডিসমিসাল ছিল যেগুলো আমরা আরও ভালোভাবে সামলাতে পারতাম। আমি থেকে শুরু করে সিনিয়র ক্রিকেটার যারা আছে, আমি নিশ্চিত সবাই চিন্তা করছে, আরও ভালো করা যেত। একটা ভালো সুযোগ ছিল, যেটা আবার আমরা নষ্ট করলাম...।”

সুযোগ হাতছাড়া করার আক্ষেপের গল্প শুরু হয়েছিল প্রথম ওয়ানডে থেকেই। মাশরাফি বিন মুর্তজার কণ্ঠে শোনা গেছ নিয়মিত। পরে মুশফিকুর রহিমও সামিল হয়েছেন কোরাসে। শেষ হলো তামিমকে দিয়ে।

অকপটে দায় স্বীকারে তামিম প্রশংসা পেতেই পারেন খানিকটা। তবে আক্ষেপের ক্ষতে কি প্রলেপ পড়বে তাতে? নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে এমন সুযোগ বারবার আর কবে আসবে!