বিদায় বেলায় সাঙ্গাকারার চোখে জল

ক্রিকেট মাঠে আবেগ ছুঁয়ে গেছে তাকে সামান্যই। তবে বিদায়ী বক্তৃতার এক পর্যায়ে আবেগের কাছে আত্মসমর্পণ করতেই হলো কুমার সাঙ্গাকারাকে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 August 2015, 04:43 PM
Updated : 24 August 2015, 04:43 PM

কলম্বোর পি সারা ওভালে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন কুমার সাঙ্গাকারা। অসাধারণ বাগ্মিতার জন্য তার খ্যাতি বরাবরই। সোমবার বিদায়ী কথামালাতেও ছুঁয়ে গেলেন সবার হৃদয়।

বরাবরের মতোই দারুণ গোছানো ছিল তার কথামালা। সেই ছেলেবেলা থেকে আজকের সাঙ্গাকারা হয়ে ওঠা পর্যন্ত পথচলায় পাশে পাওয়া সবাইকে জানিয়েছেন ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

কিন্তু বাবা-মার প্রসঙ্গ আসতেই ধরে এলো সাঙ্গাকারার গলা। ছলছল করে উঠলো চোখ।

“অনেকেই জিজ্ঞেস করে, আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে কে। আমি সবসময়ই বলেছি, অনুপ্রেরণার জন্য আমাকে নিজের বাড়ি থেকে খুব বেশি দূর তাকাতে হয়নি। কারণ আমার বাবা-মা ছিলেন সবচেয়ে অসাধারণ, একজন সন্তান যতটা চাইতে পারে!’

বিদায়ী বক্তৃতার সময় সাঙ্গাকারার খুব কাছেই ছিলেন তার বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান ও পুরো পরিবার। সেদিকে তাকিয়ে নিজেকে সামলে সাঙ্গকারা কোনো রকমে কণ্ঠে ফুটিয়ে তুললেন কৃতজ্ঞতার ভাষা।

“আমার ভাই-বোনেরাও অসাধারণ। ক্রিকেট খেলি আর না খেলি, ভালো করি আর না করি, বছরের পর বছর ধরে যে ভালোবাসা তারা আমার জন্য জমা রেখেছে, একটি জায়গাকেই আমি সবসময় নিজের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় ভেবেছি, আমাদের বাড়ি! ধন্যবাদ আম্মা ও অ্যাপাচি (বাবা)। ধন্যবাদ!’

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা স্ত্রী ইয়েহালি ও মা কুমারি সাঙ্গাকারাও তখন চোখের জল মুছছিলেন রোদ চশমার আড়াল থেকে, আবেগ আপ্লুত দাঁড়িয়ে বাবা স্বর্ণকুমারা সাঙ্গাকারা।

আবেগের কাছে নিজের আত্মসমর্পণ নিয়েও আবার গুছিয়ে কথা বললেন সাঙ্গাকারা।

“কথায় আছে, লোকে কেবল তার বন্ধু-বান্ধবই নিজে বাছাই করতে পারে, বাবা-মা কেমন, তার ওপর কারও হাত নেই। কিন্তু আমি সত্যিই খুশি ও গর্বিত যে আমি তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই। এমনিতে আবেগ আমাকে খুব একটা স্পর্শ করে না। কিন্তু আমার বাবা-মা, পুরো পরিবার মাঠে এসে এভাবে আমাকে দেখেছে খুব কম সময়ই। সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।”

দেশের ক্রিকেটের অন্যতম মহানায়কের বিদায়ী দিনে পি সারা ওভালের গ্যালারিতে ছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, অনেক সংসদ সদস্যসহ অনেকেই। বক্তৃতায় যেটিকে ‘বিরল’ এক মুহূর্ত বলে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সাঙ্গাকারা।

ধন্যবাদের তালিকায় ছিল তার সব সাবেক কোচ, যেখান থেকে আজকের সাঙ্গাকারা হয়ে ওঠার শুরু যেখান থেকে ক্যান্ডির সেই ট্রিনিটি কলেজ, তার ম্যানেজার ও একসময়ের ক্রিকেট লিখিয়ে চার্লি অস্টিন, ছিল বর্তমান-সাবেক সব সতীর্থ, প্রতিপক্ষ অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও তার দল, ভক্ত-সমর্থক সবাই।

ক্রিকেট মাঠে অর্জনে ভরা ক্যারিয়ার, তবে সাঙ্গাকারার কাছে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি লোকের ভালোবাসা।

“১৫ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছি। লোকে জিজ্ঞস করে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন কি, এত এত সেঞ্চুরি, বিশ্বকাপ জয় (২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ)…কিন্তু আজ যখন আমি ওপরে ওই বক্সে (কাঁচঘেরা গ্যালারি) তাকিয়ে দেখি এত এত বন্ধু-বান্ধব আমার, ৩০ বছর ধরে যাদের সঙ্গে সম্পর্ক, নি:শর্ত ভাবে যারা আমাকে ভালোবেসেছে, এখানে মাঠে এত এত মানুষ…সবার ভালোবাসাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। শ্রীলঙ্কার সব সমর্থককে বলছি, শ্রীলঙ্কাকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারা ছিল দারুণ তৃপ্তির। শ্রীলঙ্কার মানুষ, ভক্তদের সামনে খেলতে পারা, তাদের সমর্থন-ভালোবাসা সবসময়ই বিশেষ কিছু।”

সাঙ্গাকারা জানিয়ে দিলেন, মাঠকে বিদায় বলে দিলেও বারবার ফিরে আসবেন মাঠে।

“আমার ইনিংস এখানেই শেষ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আর খেলব না। তবে আমি ঠিকই ফিরে আসব থেত্তারামায় (প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম), গলে, তামিল ইউনিয়ন মাঠে, এসএসসি মাঠে। ফিরে আসব তরুণ ক্রিকেটারদের দেখতে।”