গ্রায়েম স্মিথ, আলভিরো পিটারসেনরা বিদায় জানিয়েছেন ক্রিকেটকে। এই টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস শুরু করেছে নতুন এক জুটি। ডিন এলগার ও স্টিয়ান ফন জিল। শুরুটা খারাপও হয়নি দুজনের। টেস্টের প্রথম দিনে ৫৮ রানের জুটি গড়েছিলেন দুজন। দুজনই অবশ্য হতাশায় পুড়েছেন থিতু হয়েও বড় ইনিংস খেলতে না পারায়।
তবে আসল চমক তারা দেখিয়েছেন বল হাতে। নিয়মিত বোলার নন দুজনের কেউই। চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে এই দুজনই যেন দক্ষিণ আফ্রিকার ‘গোল্ডেন আর্ম’! দুই প্রোটিয়া ওপেনার বল হাতে নিয়ে আউট করলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনারকে। স্লো মিডিয়াম পেসে নিজের প্রথম ওভারেই ইমরুল কায়েসকে ফিরিয়ে ৪৬ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন ফন জিল। এলগারের বাঁহাতি স্পিনে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড ৫৭ রান করা তামিম।
একসঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করতে নামা দুই ব্যাটসম্যানের হাতে প্রতিপক্ষের দুই ওপেনারের আউট হওয়ার এটি মাত্র পঞ্চম ঘটনা। সবশেষটি ছিল ২৫ বছর আগে। সেই ঘটনাটি অবশ্য ছিল দারুণ মজার। ম্যাচের তৃতীয় ইনিংসে ভারতীয় ওপেনার উরকেরি রমনকে ফিরিয়েছিলেন ড্যানি মরিসন, আরেক ওপেনার মনোজ প্রভাকরকে বোল্ড করেন মার্টিন স্নেডেন। চতুর্থ ইনিংসে জয়ের জন্য নিউ জিল্যান্ডের সামনে লক্ষ্য ছিল মাত্র ২ রান। নিউ জিল্যান্ড ওপেনিংয়ে নামিয়ে দেয় দুই পেসার মরিসন ও স্নেডেনকে! দুজন ৫ বলেই জিতিয়ে দেন দলকে।
অনেকটা একই রকম ঘটনা ঘটে ১৯৮৩ সালে ভারত-পাকিস্তানের নাগপুর টেস্টে। প্রথম ইনিংসে ভারতের ওপেনার সুনিল গাভাস্কারকে আউট করেছিলেন আজিম হাফিজ, অংশুমান গায়কোয়াড়কে ফিরিয়েছিলেন তাহির নাক্কাশ। ম্যাচের শেষ ইনিংসে পাকিস্তান যখন ব্যাটিং পেল, ড্র তখন নিশ্চিত। পাকিস্তান তাই ব্যাটিং ওপেন করিয়েছিল দুই পেসারকে দিয়ে! দুজন রানও করেছিলেন সমান, ১৮! অপরাজিত ছিলেন নাক্কাশ। আর হাফিজকে বোল্ড করেছিলেন কিপিং গ্লাভস ছেড়ে বোলিংয়ে আসা সৈয়দ কিরমানি!
দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রেভর গডার্ড এবং এডি বারলোর ঘটনা এই চট্টগ্রাম টেস্টের মতোই। ১৯৬৭ সালে পোর্ট এলিজাবেথে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১১২ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েছিলেন দুজন। পরে অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক ও ওপেনার ববি সিম্পসনকে আউট করেছিলেন গডার্ড। আরেক ওপেনার বিল লরির উইকেট নিয়েছিলেন বারলো! বলা হয়, বর্ণবাদের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা নিষিদ্ধ না হলে সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন হতে পারতেন এই বারলো। পরবর্তীতে নব্বই দশকের শেষ দিকে কোচ হয়েছিলেন বাংলাদেশের। অসুস্থতার কারণে কাজ শেষ করতে পারেননি, তবু এখনও পর্যন্ত তাকে মনে করা হয় বাংলাদেশের সেরা কোচ।
আর এই ইতিহাসের শুরুটাও ছিল দারুণ মজার ঘটনা। সেই ১৮৮৬ অ্যাশেজের লর্ডস টেস্ট। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ডব্লিউ জি গ্রেসকে আউট করেছিলেন অফ স্পিনার জোয়ি পালমার, উইলিয়াম স্কটনকে ফিরিয়েছিলেন পেসার টম গ্যারেট। পরে ফলো অনে পড়া অস্ট্রেলিয়া বৃষ্টিভেজা উইকেটে মূল ব্যাটসম্যানদের বাঁচাতে ওপেনিংয়ে নামিয়ে দিয়েছিল দুই বোলার পালমার ও গ্যারেটকে!
আরও দুইবার অবশ্য এরকম ঘটনা ঘটেছে টেস্টে। তবে সেই দুবার একসঙ্গে ব্যাটিং ওপেন করেননি দুই ওপেনার। দুই ইনিংসে ছিল ভিন্ন জুটি। ১৮৮৫ সালে মেলবোর্নে ইংলিশ ওপেনার আর্থার শ্রুশবারি সিনিয়রকে আউট করেছিলেন স্যাম মরিস। আরেক ওপেনার উইলিয়াম স্কটনকে ফিরিয়েছিলেন উইলিয়াম ব্রুস। পরে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে প্রথম ইনিংসে ওপেন করেছিলেন মরিস, দ্বিতীয় ইনিংসে ব্রুস।
এটিরই প্রায় পুনরাবৃত্তি দেখেছে ক্রিকেট প্রায় ১২৩ বছর পর। ২০০৮ সালে গায়ানায়। শ্রীলঙ্কান ওপেনার মাইল ভ্যানডর্টের উইকেট নিয়েছিলেন ক্রিস গেইল, মালিন্দা ওয়ার্নাপুরাকে আউট করেছিলেন ডোয়াইন ব্রাভো। গেইল যথারীতি ইনিংস ওপেন করেছিলেন ব্যাটিংয়ে। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে গেইলের জায়গায় ওপেন করেন অলরাউন্ডার ব্রাভো।
এবার বিরল এই ঘটনার স্বাক্ষী হলো বাংলাদেশ ও চট্টগ্রাম। তবে যেভাবে হলো, রোমাঞ্চের চেয়ে বিষাদটাই বেশি হওয়ার কথা বাংলাদেশের। পার্ট টাইমারদের হাতে ওপেনারদের উইকেট খোয়াতে চায় কোন দল!
দুই ওপেনারের শিকার প্রতিপক্ষের দুই ওপেনার :
ব্যাটসম্যান | বোলার | ম্যাচ | সাল |
ডব্লু জি গ্রেস ও উইলিয়াম স্কটন | জোয়ি পালমার ও টম গ্যারেট | ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া | ১৮৮৬ |
ববি সিম্পসন ও বিল লরি | ট্রেভর গডার্ড ও এডি বারলো | অস্ট্রেলিয়া-দ. আফ্রিকা | ১৯৬৭ |
সুনীল গাভাস্কার ও অংশুমান গায়কোয়াড় | আজিম হাফিজ ও তহির নাক্কাশ | ভারত-পাকিস্তান | ১৯৮৩ |
উরকেরি রমন ও মনোজ প্রভাকর | ড্যানি মরিসন ও মার্টিন স্নেডেন | ভারত-নিউ জিল্যান্ড | ১৯৯০ |
তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস | স্টিয়ান ফন জিল ও ডিন এলগার | বাংলাদেশ-দ.আফ্রিকা | ২০১৫ |