অপসাংবাদিকতা ঠেকান: সাংবাদিকদের বললেন প্রধানমন্ত্রী

সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা প্রত্যাশা করার পাশাপাশি অপসাংবাদিকতার বিরুদ্ধেও সোচ্চার হতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 July 2015, 12:02 PM
Updated : 16 July 2015, 12:22 PM

বৃহস্পতিবার নিজের কার্যালয়ে ‘সাংবাদিক সহায়তা ভাতা ও অনুদান প্রদান’ অনুষ্ঠানে তিনি পেশাদার সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে এই আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা দেশে বস্তুনিষ্ঠ ও গঠনমূলক সাংবাদিকতা দেখতে চাই। স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির সাংবাদিক নামধারী ব্যক্তিবর্গ সমাজে অপসাংবাদিকতা চর্চার চেষ্টা করছে। পেশার স্বার্থে এসব ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে আপনাদেরই সোচ্চার হতে আহ্বান জানাচ্ছি।”

সরকারের কার্যক্রম নিয়ে সাংবাদিকদের গঠনমূলক সমালোচনা করতেও আহ্বান জানান তিনি।

“সমালোচনা যত হোক, আমার আপত্তি নেই। আমি সমালোচকদের কখনও ভয় পাই না। বরং সমালোচনা বেশি হলে একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়; সেখান থেকে জানতে পারি কোন কাজটা ভালো হচ্ছে, আর কোন কাজটা মন্দ হচ্ছে- সেটা দেখার একটা সুযোগ হয়। তবে এই সমালোচনা যেন গঠনমূলক হয়।”

সমালোচনা করতে গিয়ে অনেক সময় সাংবাদিকরা ‘মিথ্যা ও ভুল তথ্য’ পরিবেশন করেন বলে মন্তব্য করেন সরকার প্রধান।

এ বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “এমন সমালোচনা যেন না হয়, যেটা আমার দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য ক্ষতিকারক।”

সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, নাশকতা এবং আন্দোলনের নামে মানুষ পোড়ানোর বিরুদ্ধে জনমত গঠনে সাংবাদিকদের ভূমিকাও প্রত্যাশা করেছেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, সাংবাদিকতা এখন পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং এই খাতে কর্মসংস্থানও বেড়েছে।

১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর বেসরকারি মালিকানায় টেলিভিশন সম্প্রচার উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।

তথ্য অধিকার আইন প্রণয়নসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সুযোগ, সুবিধা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার কথাও বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী এদিন অনুদান ও সহায়তা পাওয়া ১৭৭ সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের মধ্যে ৬৩ জনের হাতে চেক তুলে দেন। প্রতিটি সাংবাদিক ন্যূনতম ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত সহায়তা ও অনুদান পেয়েছেন।

২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬২৩ জন সাংবাদিককে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা অর্থ সহায়তা দিয়েছে সরকার।

সাংবাদিকদের সহায়তার জন্য স্থায়ী তহবিল গঠনে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টে সরকারের পাশাপাশি সম্পদশালী গণমাধ্যম মালিক ও সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

সাংবাদিকদের আবাসনের জন্য সরকারের নতুন উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি এখন থেকে প্লটের পরিবর্তে ফ্ল্যাট দেওয়ার কথা বলেন।

“আমরা অনেক সাংবাদিককে প্লট দিয়েছি। অনেকেই প্লট পেয়েছেন, কিন্তু প্লট নিবন্ধন করার মতো টাকা নেই। তাই ভবিষ্যতে আমরা ভিন্নভাবে পরিকল্পনা করছি। এখন আমরা নতুন যে ফ্ল্যাট তৈরি করছি ঢাকা শহরে, সেখানে আমরা হায়ার-পারচেজ (ভাড়া মূল্য হিসেবে পরিশোধ হওয়া) ভিত্তিতে যাতে দেওয়া যায় সে ধরণের উদ্যোগ আমরা নিয়েছি।”

খুব শিগগিরই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন তিনি।

যেসব গণমাধ্যম সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করবে না, তাদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা ‘সীমিত’ করে দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নিজের গ্রেপ্তার হওয়ার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

“জেলে থাকতে আমার কাছে অনেক রকম প্রস্তাব, অনেক কিছু বলা হয়েছে। আমার একটাই কথা ছিল- আমি নির্বাচন চাই, আমি গণতন্ত্র চাই।”

বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনতে ওই সময় সাংবাদিকদের সাহসী ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

বাংলাদেশকে উন্নত দেশে ‍উন্নীত করতে কাজ করে যাওয়ার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।

এসময় দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ক্রিকেট দলের সিরিজ জয়ের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “এখান থেকেই তো আপনারা বুঝতে পারেন যে, বাংলাদেশের যদি সবাই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে, তাহলে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিতে বেশি সময় লাগার কথা না, লাগবে না।

“কাজেই সমালোচনা যারা করবেন করেন কোনো আপত্তি নেই। শুধু আমার একটাই অনুরোধ থাকবে এই যে অগ্রযাত্রা এটা যেন ব্যাহত না হয়। আর শত্রুর মুখে কথা যেন জোগান না দেওয়া হয়। এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে।”