বিপদসীমার উপরে তিস্তা, পানিবন্দি হাজারো মানুষ

তিস্তার পানি বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ব্যারাজে কর্তৃপক্ষ নিয়েছে বাড়তি সকর্তকতা। পানির চাপ কমাতে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাটের সবকটি খুলে দেওয়া হয়েছে।

নীলফামারী প্রতিনিধিলালমনিরহাট ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2015, 07:44 PM
Updated : 1 July 2015, 07:44 PM

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (ডালিয়া) মোস্তাফিজুর রহমান বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিস্তা নদীর পানি বিপদ সীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।”

পানি বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার কয়েকটি এলাকাসহ পাটগ্রাম, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার অন্তত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে।

হাতীবান্ধার গড্ডিমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন বুলু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আকস্মিকভাবে বুধবার বিকাল থেকে বাড়তে থাকে নদীর পানি। এতে শুধু তার ইউনিয়নেরই কমপক্ষে অর্ধ শতাধিক বাড়ি হুমকির মধ্যে রয়েছে।

সন্ধ্যায় হাতীবান্ধার চর গড্ডিমারী ও নিজ গড্ডিমারী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, যেসময়ে মানুষের ইফতারের আয়োজন করার কথা ঠিক সেসময়ে সেখানে পড়েছে কান্নার রোল।

“হঠাৎ করে আছরের নামাজের পর থেকে হু হু করে বাড়তে থাকে তিস্তার পানি। কিছু বুঝে উঠার আগেই বাড়িতে ঢুকতে থাকে পানি। এরপর সন্ধ্যার অন্ধকার নামতে না নামতেই যা ছিল তার সবটাই নদীগর্ভে।”

বুধবার ঠিক ইফতারের সময় কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন ভ্যানচালক শফিকুল ইসলাম (৩৬)।

বিকাল পর্যন্ত তাঁর বাড়ি ছিল লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার চর গড্ডিমারী এলাকার বাঁধে। নদীগর্ভে বসতবাড়িটি চলে যাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে রাতে কোথায় থাকবেন, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন তিনি।

 

লোকজন যে যেভাবে পারছেন নিজের শেষ সম্বলটুকু নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউবা নিজের থাকার ঘরটি রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।

সেখানকার লোকজন জানান, সন্ধ্যায় ঘণ্টাখানেকের মধ্যে অন্তত ৫০টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

পানি বেড়ে যাওয়ায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানি, ঝুনাগাছ চাপানী, গয়াবাড়ি এবং চলডাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ি, শৈলমারী ও কেমারী ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রামের পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

টেপখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন বিডিনিউজ টোযেন্টিফোর ডটকমকে জানান, সকাল থেকে নদীর পানি বাড়লেও দুপুরের পর থেকে নদীর তীরবর্তী ডিমলার ৯টি ইউনিয়নের ১৩টি চরগ্রামের নিম্নাঞ্চল ও জলডাকা উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ৭টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

এসব গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলেও জানান তিনি।

ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের চেগ্রাম ছোটখাতার মরিয়ম বেগম (৪৮) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সকাল থেকে পানি বাড়তে বাড়তে দুপুরের দিকে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে।

একই গ্রামের  পারিউন্নয়ন বোর্ডের ছোটখাতা বাঁধে আশ্রয় নেওয়া একই গ্রামের রওশন আরা বেগম বিডিনিউজ টোয়্যেন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পানিতে বাড়িঘর তলিয়ে রয়েছে।”

পরিবারে সদস্যদের নিয়ে রওশন আরা আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধে।