বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের কাছ থেকে নিরপেক্ষতা চাই। অন্য কিছু চাই না।
“আরেকটি বিষয় হচ্ছে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, চোরাচালান, মাদকদ্রব্য-এর বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার থাকতে হবে। এসবের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে আমি অনুরোধ জানাবো।”
মানুষ পুড়িয়ে মারার বিরুদ্ধেও সোচ্চার হওয়ারও আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আয়োজিত অনুষ্ঠানে ইফতারের বেশ কিছুক্ষণ আগেই অনুষ্ঠানস্থলে আসেন শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছেই বিভিন্ন টেবিল ঘুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন তিনি।
বিএফইউজে সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিএফইউজের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল ভূঁইয়া, ডিইউজের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান প্রমুখ।
বক্তারা সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের আকার বড় করা, সাংবাদিকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা, নতুন আরেকটি ওয়েজ ঘোষণা করা, প্রেসক্লাবকে আরও উন্নত করতে সহায়তা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী কাছে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব দাবির বিষয়ে কথা বলেন।
“আওয়ামী লীগ সবসময়ই সাংবাদিকদের কল্যাণের জন্য চিন্তা করে। আর সাংবাদিকরা সবসময় আওয়ামী লীগের সমালোচনাটা একটু বেশিই করে। এটাও ঠিক।”
এসময় তিনি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্নে খাতে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যদি আমরা আরও সহযোগিতা সকলের কাছ থেকে পেতাম তাহলে বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম।”
এসময় তার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় দেশে প্রথম বেসরকারি টেলিভিশন চালুর কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, “এর ফলে কত মানুষের চাকরির সুযোগ হয়েছে তা আপনারাই বিবেচনা করে দেখেন।”
বেসরকারি খাতে টেলিভিশন ছাড়াও রেডিও এবং কমিনিউনিটি রেডিও চালুর কথাও তুলে ধরেন তিনি।
এছাড়া সাংবাদিকদের গ্রেপ্তারের আইনও পরিবর্তন, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন, প্রেসক্লাবের উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়েরও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
শুধু সরকারি অনুদানের উপর নির্ভরশীল না থেকে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টে দান করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যত সাংবাদিক ও যত মালিক আছেন, আপনারা এক টাকা করেও যদি পারেন এই ট্রাস্টে দান করেন।”
সম্প্রচার নীতিমালার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সম্প্রচার নীতিমালা কমিশন গঠন করা হয়েছে। আমি মনে করি এই নীতিমালা হলে এখানে একটা ডিসিপ্লিন ফিরে আসবে।”
সাংবাদিকদের জন্য প্লটের পরিবর্তে ভবিষ্যতে ফ্ল্যাট দেওয়া যায় কি না তা দেখারও আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।
“আমরা কিন্তু প্লট দিয়েছিলাম। সে প্লটের মালিকরা প্লট কি করেছেন সেটা আমরা জানি না। এখন অবশ্য ওইভাবে জনে জনে প্লট না দিয়ে, সব প্লটগুলিকে একটা দাগে একটা জায়গায় এনে সেখানে যদি মাল্টিস্টোরড ফ্ল্যাট করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতাম তাহলে বহু সাংবাদিকের আবাসনের ব্যবস্থা হত। ভবিষ্যতে সেই ব্যবস্থা যাতে হয় সেটা অবশ্যই আমরা দেখবো।”
নতুন ওয়েজ বোর্ডের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ইতোমধ্যে আমরা অষ্টম ওয়েজ বোর্ড দিয়েছি। কেউ কেউ বাস্তবায়ন করেছেন, কেউ কেউ করেননি। ভবিষ্যতে যাতে আবার ওয়েজ বোর্ড হয় সে ব্যবস্থাও করা হবে।
“ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে যারা কাজ করেন তাদের জন্য বোধহয় একটা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। সেখানেও কিছু করা যায় কিনা সেটাও আমরা দেখবো।”
প্রেসক্লাবের আধুনিকায়নেও সরকারের সহযোগিতার আশ্বাস দেন শেখ হাসিনা।
“আর এই প্রেসক্লাবটা, এটা একটি আধুনিক, সুন্দর, উন্নতমানের; দেশি বিদেশি সকলের কাছে দৃষ্টিনন্দন প্রেসক্লাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। এক্ষেত্রে যা সহযোগিতা লাগে আমরা করবো।”