তুরাগ ঘিরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

ঢাকা ঘিরে থাকা চার নদীর তীর অবৈধ দখলমুক্ত করার অংশ হিসেবে সাভারের তুরাগ নদের আশেপাশে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে কর্তৃপক্ষ।

আশিক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 June 2015, 08:47 AM
Updated : 28 June 2015, 08:47 AM

আমিনবাজার সার্কেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ঢাকা জেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারুক আহমেদের নেতৃত্বে রোববার সকাল থেকে বিরুলিয়া সেতুসংলগ্ন এলাকায় এ অভিযানে বেশ কিছু দোকানপাট ও স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়, যার মধ্যে শ্রমিক লীগের একটি কার্যালয়ও রয়েছে।

‘মুক্তিযোদ্ধা পল্লী পুনর্বাসন প্রকল্পের’ কার্যালয় সরিয়ে নিতে একদিন সময় দিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়া নদের মাঝখানে রাখা একটি সিমেন্ট কারখানার ড্রেজারও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ওই সিমেন্ট কারখানার একট অংশ বর্ধিত করার জন্য নদীর উপর বালি ফেলা চলছিল। কারখানা কর্তৃপক্ষকে বালি ও নির্মাণ কাজের যন্ত্রপাতি সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

মিরপুর বেড়িবাঁধ দিয়ে ভেতরের দিকে ঢুকতেই দেখা যায় তুরাগ তীর ধরে বালু ফেলার মহোৎসব। কিছু দূর পরপর রয়েছে বিভিন্ন আবাসন কোম্পানির বিলবোর্ড। তৈরি হচ্ছে মসজিদ, রেস্তোরাঁ ও থিম পার্ক।

১৮ বছর ধরে চলতে থাকা বিরুলিয়া সেতুর নির্মাণ কাজ মাত্র দুই মাস আগে শেষ হয়েছে। এখনো আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হলেও সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। 

এই সেতুর আশেপাশের চিত্র তুলে ধরে শনিবার একটি দৈনিকে ‘এভাবেই দখল হচ্ছে তুরাগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেতুর গোড়ায় তুরাগ নদের জমি দখল করে শ্রমিক লীগের কার্যালয়, পুনর্বাসন প্রকল্প এবং মসজিদ গড়ে তোলার কথাও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

রোববার সেখানে গিয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ঢাকা বিভাগ শ্রমিক লীগের সাইন বোর্ড লাগানো একটি টিনের ঘর ভেঙে ফেলা হয়।     

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে শ্রমিকরা বিরুলিয়া সেতুর পাশে নদের জমি দখল করে নির্মাণ করা ‘মুক্তিযোদ্ধা পল্লী পুনর্বাসন প্রকল্পের’ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিলে প্রকল্পের উপদেষ্টা মো. আলী আজম স্থানীয় এক সাংবাদিককে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন।

তিনি জমির কাগজ দেখালে ম্যাজিস্ট্রেট তা দেখে বলেন, “এটি সঠিক কাগজ না। এ স্থানটি পানি উন্নয়ন বোর্ড অধিগ্রহণ করেছে। অধিগ্রহণ করা জমি কেউ কারও নামে বরাদ্দ দিতে পারে না।”

এ সময় আলী আজম বলেন, “আমরা ভূমিমন্ত্রীর কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছি। ঢাকা জেলার এডিসিও বিষয়টি জানেন।”

ফারুক আহমেদ এ সময় বলেন, “সেগুলোর কাগজ তো আপনি দেখাতে পারেননি। আর এডিসি যদি অনুমতি দেন, সেটি আমার জানার কথা। এ স্থানটিতে এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করতে দেয়ার কারণ নেই। আইনত এটি সম্ভব নয়। এ স্থানে

স্থাপনা তৈরির ক্ষেত্রে হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।”

এরপর পুনর্বাসন প্রকল্পের টিনের ঘর এবং বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি দুটো সরিয়ে নিতে ১০ মিনিট সময় দেন ম্যাজিস্ট্রেট।

এ সময় আলী আজম বারবার অনুরোধ করতে থাকলে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য সোমবার দুপুর পর্যন্ত সময় দেন সহকারী কমিশনার।

তিনি বলেন, “আগামী কাল দুপুর ২টার পরে যদি কোনো স্থাপনা থাকে, তাহলে সেটি আমরা উচ্ছেদ করে দেব।” 

নদের ওই অংশের বিভিন্ন স্থাপনা অভিযানে ভেঙে ফেলা হলেও ‘বঙ্গবন্ধু জামে মসজিদ’ এর সাইন বোর্ড লাগানো একটি টিনের স্থাপনা অক্ষত থাকতে দেখা যায়।

ফারুক আহমেদ পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেহেতু মসজিদ একটি স্পর্শকাতর বিষয়, তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে মসজিদ ছাড়া বাকি স্থাপনাগুলো আগামী কালকের মধ্যে উচ্ছেদ করা হবে।”

তিনি জানান, নদী দখলমুক্ত করতে এই উচ্ছেদ কার্যক্রম অব্যহত থাকবে।

“ঢাকার চারটি মূল নদী দখল করে যেসব অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠছে, সেগুলো উচ্ছেদের জন্য নিয়মিতই অভিযান চলে। এটা তারই অংশ,” বলেন এই ভূমি কর্মকর্তা।