ধর্মঘটের খবর জানা থাকলেও ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় প্রতিদিনই ভারত থেকে বেনাপোল দিয়ে দেশে ফিরছেন অনেক যাত্রী। তবে টানা চার দিন গণপরিবহন বন্ধ থাকায় গন্তব্যে যেতে ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা।
ফরিদপুরের মধুখালীতে বেনাপোলগামী সোহাগ পরিবহনের একটি নৈশকোচে সোমবার রাতে ডাকাতির পর যাত্রীদের অভিযোগে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাসটির চালক ও তার এক সহকারীকে আটক করে। পরে ডাকাতির মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
তবে ডাকাতির পর চালক বাস নিয়ে মধুখালী থানায় জিডি করতে গেলে পুলিশ তাদের আটক করে কারাগারে পাঠায় বলে দাবি করেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা।
এরপর আটক দুই পরিবহন শ্রমিকের নিঃশর্ত মুক্তি এবং ফরিদপুরের পুলিশ সুপার ও মধুখালীর ওসিকে প্রত্যাহারের দাবিতে খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, নড়াইল ও ফরিদপুর থেকে ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ১৮টি রুটে বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক আসে।
শনিবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বেনাপোল বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, মাদারীপুর, বগুড়া, ময়মনসিংহ, বরিশাল, ঝালকাঠি ও গোপালগঞ্জগামীসহ কোনো রুটের কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।
দূরপাল্লারসহ আন্তঃজেলার রুটগুলিতেও যানবাহন চলাচল না করায় ভারত ফেরত যাত্রীদের গন্তব্যে ফিরতে ভোগান্তি আরও বেড়েছে। বিকল্প ব্যবস্থায় অনেকেই প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস ভাড়া করে অথবা রেলপথে কমিউটার ট্রেন ধরে গন্তব্যে যাত্রা করছেন।
সকালে সস্ত্রীক ভারত থেকে দেশে ফেরেন ঢাকার বাড্ডা এলাকায় বসবাস করা সাজ্জাদ হোসেন। সরকারি চাকরিজীবী সাজ্জাদকে রোববার কর্মস্থলে যোগদান করতে হবে, তাই হন্নে হয়ে বাড়ি যাওয়ার উপায় খুঁজছিলেন। অবশেষে দুপুরে সাড়ে ১০ হাজার টাকায় একটি প্রাইভেট কার ভাড়া করে তিনি গন্তব্যে যাত্রা করেন।
সাজ্জাদ বলেন, “ভারত ভ্রমণে গিয়ে নয় দিনের ছুটি কাটিয়েছি, তাই রোববার অবশ্যই অফিসে যোগ দিতে হবে। এ কারণে বাধ্য হয়েই এভাবে যেতে হচ্ছে।”
তবে বাড়ি ফিরতে খরচ করার মতো এত বেশি অতিরিক্ত টাকা সঙ্গে নেই সিলেটের রাজু আহমেদের কাছে। এক মাস পর ভারতের আগ্রা থেকে ফিরেছেন তিনি। দুপুরে গ্রিনলাইন পরিবহনের বিশ্রামাগারে তার সঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কথা হয়।
রাজু বলেন, “ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় দেশে ফিরেছি। টাকা পয়সা যা ছিল শুধু ভাড়ার টাকা রেখে সবই কেনাকাটা করেছি। কাছে অতিরিক্ত টাকা পয়সা না থাকায় এখন কী করব, তা ভেবে পাচ্ছি না।”
গ্রিনলাইন পরিবহনের বিশ্রামাগারে অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায় ভারত ফেরত ঢাকার এসএম রেজাউল, নোয়াখালীর শাহাবুদ্দিন আহমেদ, খুলনার কহিনূর বেগম এবং ভারতের কলকাতার নীলিমা সাহাকে।
নোয়াখালীর শাহাবুদ্দিন তার বাবার ক্যান্সারের চিকিৎসা করিয়ে দেশে ফিরেছেন। তিনি বলেন, “ভারত থেকে চিকিৎসা শেষে সকালে দেশে ফিরে পড়েছি মহা সমস্যায়। অসুস্থ বাবাকে নিয়ে পরিবহন কাউন্টারে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।”
এত যাত্রী দুর্ভোগের পরও সহসাই কাটছে না এ অচল অবস্থা। শনিবার যশোরে এক সংবাদ সম্মেলন করে আগামী তিনদিনের মধ্যে দাবি আদায় না হলে পরদিন থেকে সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘট ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা।
বাংলাদেশ পরিবহন সংস্থা শ্রমিক সমিতি যশোরের সভাপতি আজিজুল আলম মিন্টু বলেন, “সংকট নিরসনে শুক্রবার রাতে যশোরে প্রশাসনের সঙ্গে পরিবহন নেতাদের বৈঠক হলেও উভয়পক্ষের অনড় অবস্থানের কারণে কোনো সমাধান আসেনি।”