৩ লাখ মামলা নিয়ে বিলাসিতা চলে না: প্রধান বিচারপতি

মামলা জট কমাতে উচ্চ আদালতে ১৮৬ দিন ছুটির বিপক্ষে নিজের মত জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2015, 05:52 PM
Updated : 17 April 2015, 06:32 PM

সেই সঙ্গে বছরের পর বছর কারাগারে আছেন- এমন ব্যক্তিদের জামিন শুনানি আগে করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। 

শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ল’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ‘বৈশাখী উৎসবে’ যোগ দিতে এসে নিজের মতামত তুলে ধরেন প্রধান বিচারপতি। 

তিনি জানান, বাংলাদেশের হাই কোর্টে ১৮৬ দিন ছুটির কথা শুনে কোরিয়ার বিচারপতিরা তার কাছে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছিলেন- ‘তাহলে বাংলাদেশ চলছে কীভাবে?’

বিচারপতি সিনহা বলেন, “তিন লাখ মামলা নিয়ে আমরা বিলাসিতা করতে পারি না। আমরা বছরে ১৮৬ দিন ছুটি নিতে পারি না।”

তিনি বলেন, সব ছুটি যোগ করলে বাংলাদেশে একজন বিচারক বছরে ছয় মাসের বেশি সময় ছুটি ভোগ করেন। 

“এটা রিয়েলিটি। এটা কেউ আমরা ধামাচাপা দিয়ে পারব না। এই ছুটি নিয়ে আমরা যদি চলি তাহলে তিন লাখ মামলা থেকে ১০ লাখ মামলা হবে আরও দশ বছরে।”

শুধু বিচারক নন, আইনের শাসন নিশ্চিত করতে আইনজীবীদেরও যে ‘অনেক করণীয় রয়েছে’, তা মনে করিয়ে দেন প্রধান বিচারপতি।

তিনি বলেন, “আগে আইনজীবীদের মধ্যে এত দলাদলি, বিভক্তি ছিল না। সুপ্রিম কোর্টকে রক্ষার জন্য আইনজীবীদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। আর সুপ্রিম কোর্টকে রাখতে হলে , ‘রুল অব ল’ কে নিশ্চিত করতে হলে মামলা জট কমাতে হবে।”

এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে একদিকে যেমন ‘ভালো লেগেছে’, তেমনি কিছু বিষয়ে ‘বিব্রত’ হতে হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি। 

তিনি বলেন, “আইনজীবীরা নতুন মামলা অর্থাৎ ফাইলিংটিকে বেশি গুরুত্ব দেন। কারণ এতে বেশি অর্থাগম ঘটে। পুরনো মামলার শুনানিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা আদালতে হাজির থাকেন না। এতে ক্ষতি হয় বিচারপ্রার্থীর।”

প্রধান বিচারপতি জানান, তিনি সকাল ৮টায় আদালতে চলে যান, কারণ তিনি না গেলে কর্মচারীরা কেউ আদালতে তাড়াতাড়ি যাবেন না।

আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “বৈপ্লবিক কোনো পরিবর্তন না হোক, মামলা জট সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য আমরা বিচারকরা চেষ্টা করছি। আপনারা যদি সহযোগিতা না করেন তবে তা সম্ভব হবে না। ’

এর আগে বক্তব্য দিতে এসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ল’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের বদরুদ্দোজা বাদল ও রবিউল আলম বুদু আগাম জামিনের জন্য বেঞ্চ বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।

এর জবাব দিতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন রাখেন, “শুধু এন্টিসিপেটরি বেইলের জন্য বেশি বেঞ্চ? যে বছরের পর বছর জেলে রয়েছে তার জামিন শুনানি  আগে করবেন, না যাকে পুলিশ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তার জন্য জামিন শুনানি আগে করবেন?”

জামিনের বিষয়ে পাশের দেশ ভারতে নতুন আইন বেঁধে দেওয়ার কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধান বিচারপতি। 

তিনি বলেন, “আমাদের দেশে মামলার আরজি ও লিখিত জবাবে প্রতিকার পাওয়ার কোনো যুক্তি বা বক্তব্য থাকে না। হাই কোর্টে শুধু এফিডেভিট বা হলফনামা দিয়েই আবেদন দাখিল করা হয়। এক মামলার বক্তব্য অন্য মামলার দরখাস্তে ঢুকে যায় অমনোযোগিতার কারণে। জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা কনিষ্ঠদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষা দেবেন।”

অনুষ্ঠানের আরেক আলোচক বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান বলেন, “বেশি বেঞ্চ বা বেশি বিচারক, বিচারপতিদের ছুটি কমিয়ে দেয়া নয়- যেটা বেশি জরুরি, সেটা হলো মানসিকতার পরিবর্তন।”

বেঞ্চ বাড়ানোর প্রস্তাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে এ রকম দাবি করা সমীচীন নয়। আপনারা অনেক মামলার শুনানিতে অনুপস্থিত থাকার কারণে মামলা ডিসমিস করতে বাধ্য হই। এতে আপনারা মোটেও ক্ষতিগ্রস্ত হন না। ক্ষতি হয় বিচারপ্রার্থীদের।”

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, “নববর্ষ উদযাপন আরও ছড়িয়ে পড়ুক। আপনাদের এই সংগঠনের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন যৌথ উদ্যোগে আমাদের কোর্ট কম্পাউন্ডের পাশে বাংলা নতুন বছরকে বরণের অনুষ্ঠান ও মেলা শুরু করতে পারে। জঙ্গিবাদীরা এই অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে পারেনি, পারবেও না।”

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী পরিষদের সভাপতি কামরুজ্জামান কচি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও আইনজীবীরা এতে অংশ নেন।