বৃহস্পতিবার দুপুরে উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিনের কার্যালয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার নেতাকর্মীদের নিয়ে এ ঘটনা ঘটান বলে অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বেলা ১টার দিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, সহ-সভাপতি শাহাদাত হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আব্দুল মুমিন, সাধারণ সম্পাদক জেডু সরকার, মতিহার থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান, সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দীনসহ ১৫-১৬ জন আওয়ামী লীগ নেতা কোনো পূর্বানুমতি ছাড়া উপাচার্যের দপ্তরে প্রবেশ করেন।
এ সময় উপাচার্য দপ্তরে ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এন্তাজুল হক, শিক্ষক সমিতির সভাপতি আনন্দ কুমার সাহাসহ কয়েকজন শিক্ষক।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ডাবলু সরকার উপাচার্যকে তাদের দলের নেতাকর্মীদে কর্মচারী পদে নিয়োগ দেওয়ার অনুরোধ করার কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
এদিকে নিয়ম মেনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানান উপাচার্য।
এর এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষককে নেতারা গালাগাল দেন।
এ পরিস্থিতিতে উপাচার্য আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কোনো কথা বলবেন না বললে তারা বের হয়ে যান বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শিবিরের হাতে নিহত ছাত্রলীগকর্মী ফারুকের বোনের চাকরি স্থায়ী করা, আহত ছাত্রলীগ নেতা মাসুদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করাসহ কিছু দাবি নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কারও সঙ্গে কথা বলবেন না বলে জানান।
ডাবলু বলেন, এ সময় নেতারা উঠে আসতে গেলে তাদের সহ-সভাপতিকে এক শিক্ষক হাত ধরে টান দেন। এতে নেতাকর্মীরা ক্ষিপ্ত হলে ‘কিছুটা উত্তেজনা’ হয়।
এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সব বিধি-বিধান মেনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রকার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। আমরাও তার ব্যতিক্রম ঘটাব না।”
আওয়ামী লীগ নেতাদের শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক ইলিয়াছ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আওয়ামী লীগ নেতারা কোনো পূর্বানুমতি ছাড়াই উপাচার্যের চেম্বারে প্রবেশ করেন। তারা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের যেভাবেই হোক চাকরি দেয়ার কথা বলেন। এ নিয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতারা শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দপ্তরে এভাবে যখন তখন নেতাকর্মীরা প্রবেশ করে যা ইচ্ছে বলে যাবেন, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অপমানজনক।
“আজকের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কমিউনিটি মর্মাহত,” বলেন তিনি।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-বিধি মেনে সবকিছু হবে এটাই স্বাভাবিক। এখানে উপাচর্যের দপ্তরে এ ধরনের আচরণ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করাটা দুঃখজনক।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে অনেক অতিরিক্ত নিয়োগ হয়ে আছে। এজন্য এখন আরও নিয়োগ দেওয়া সম্ভব না। উপাচার্য তাদের এটা জানিয়েছেন।
এরপরও এ ধরনের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের জন্য গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে এ ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে রাবি ছাত্রলীগের একাংশ।
রাবি ছাত্রলীগ সভাপতি মিজানুর রহমান রানার নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা প্রশাসন ভবনের সামনে থেকে মিছিল শুরু করে টুকিটাকি চত্বরে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
সমাবেশে ছাত্রলীগ সভাপতি বর্তমান উপাচার্য জামায়াত-শিবির তোষণ করেন বলে অভিযোগ করেন।
এদিকে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সোহরাব হোসেন নিন্দা জানিয়ে বলেন, এ ধরনের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অপমানজনক।