এলাকায় আমি দানবীর: তুষ্টির শ্বশুর

যৌতুকের দাবিতে পুত্রবধূ নুসরাত জাহান তুষ্টিকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে তার শ্বশুর ইদ্রিস আলী বলেছেন, এলাকার মানুষ তাকে ‘দানবীর’ হিসাবে জানে।

ফয়সাল আতিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 April 2015, 09:02 AM
Updated : 3 April 2015, 09:03 AM

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের এমবিএ প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান তুষ্টিকে টাঙ্গাইলের কালিহাতির শ্বশুরবাড়ি থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে সোমবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে তিনি ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসাধীন।

নুসরাতের বাবা নুরুল ইসলাম ভূইঁয়ার অভিযোগ, তার সামনেই তুষ্টিকে নির্মমভাবে মারধর করেছে তার স্বামী সেনাবাহিনীর মেজর নাজির উদ্দিন ও শ্বশুর ইদ্রিস আলী। ঠেকাতে গিয়ে তিনি নিজে, তুষ্টির মা শাহনাজ আক্তার ও ছোট ভাই মুঈদ হাসান তড়িৎও মারধরের শিকার হয়েছেন।

অন্যদিকে ইদ্রিস আলীর দাবি, তাকে হেয় করতে যৌতুক ও নির্যাতনের খবর ছড়ানো হচ্ছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “তাদের কাছে যৌতুক দাবি করব কেন? বিয়ের পর থেকে ওই মেয়ের পেছনে উল্টো ১৩ লাখ টাকার বেশি খরচ করেছি। ঢাকায় যে বাসায় থাকে, তার ভাড়াও দিয়েছি অনেক দিন।”

তুষ্টির ওপর নির্যাতনের অভিযোগে তার স্বামীকে সেনাবাহিনী থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। গত মঙ্গলবার থেকে প্রতিদিনই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হচ্ছে।

নুসরাত জাহানের সহপাঠী অপূর্ব মজুমদারের তোলা ছবি

গত মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে গিয়ে এই শিক্ষার্থীকে দেখে এসে উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেন, “হেন নির্যাতন নেই যে তাকে করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে বন্য পশুর মতো নির্যাতন মেনে নেওয়া যায় না।”

হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) সমন্বয়কারী ডা. বিলকিস বেগম বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তুষ্টির সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মাথায় ভারি বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল বলে ক্ষত দেখে মনে হয়েছে।

তারপরও অভিযোগ অস্বীকার করে তুষ্টির শ্বশুর বলেন, “এলাকায় আইসা দেখেন- কমিউনিটি সেন্টার আমি করে দিয়েছি। প্রাইমারি স্কুলের দাতা মেম্বার আমি। গ্রামের মসজিদের টাইলস করে দিয়েছি। বাসস্ট্যান্ড গোরস্থান মসজিদে একলাখ ত্রিশ হাজার টাকা দিয়েছি। এলাকায় আমি একজন দানবীর হিসেবে পরিচিত।”

নুসরাত জাহান তুষ্টির সঙ্গে দুই বছর আগে বিয়ে হয় নাজির উদ্দিনের, যিনি এখন চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে কর্মরত।

পারিবারিক কলহের মাঝেও বিবিএ শেষ করে এখন এমবিএ পড়ছেন তুষ্টি। তাদের ১৩ মাস বয়সী একটি ছেলে রয়েছে।

তুষ্টির মা শাহনাজ আক্তার অভিযোগ করেন, বিয়ের কথাবার্তা চলার সময় নাজিরের বাবা-মা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও বিয়ের পর এ নিয়ে ‘নানা রকম ঝামেলা’ শুরু করেন। এছাড়া মেয়ে জামাই নাজির বিভিন্ন সময়ে তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়।

এক পর্যায়ে মেজর নাজির ঢাকায় ফ্ল্যাট ও একটি প্রাইভেট কার অথবা পাঁচ কোটি টাকা চেয়ে বসে। এসব নিয়ে তুষ্টিকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয় বলে তার মায়ের অভিযোগ।

নুসরাত জাহানের সহপাঠী অপূর্ব মজুমদারের তোলা ছবি

ছোট ভাই তড়িৎ বলেন, বিভিন্ন সময় পারিবারিক কলহ হলে নাজির চোখ তুলে ফেলার, এমনকি মেরে ফেলারও হুমকি দিতেন তুষ্টিকে।

তবে নাজিরের বাবা ইদ্রিস আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে দাবি করেন, ঢাকার সেগুনবাগিচায় তুষ্টি তার বাবা-মায়ের সঙ্গে যে ফ্লাটে থাকেন সেটি কিনে দিতে নাজিরকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। 

তাতে সায় না দেওয়ায় ‘বিপদে ফেলার জন্য’ যৌতুক ও মারধরের অভিযোগ আনা হয়েছে বলে ইদ্রিস আলী দাবি করেন।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইল জেলা জজ আদালতে মামলা করেছেন নুসরাতের বাবা কৃষি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম ভূঁইয়া। মেজর নাজিরকে চট্টগ্রামের কর্মস্থল থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে বলে দুই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।