স্ত্রী ‘নির্যাতনকারী’ মেজরের শাস্তি দাবিতে ঢাবিতে কর্মসূচি

এক ছাত্রীকে নির্যাতনের জন্য তার সেনা কর্মকর্তা স্বামীকে দায়ী করে এর শাস্তির দাবি তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 April 2015, 11:32 AM
Updated : 1 April 2015, 06:27 PM

বুধবার ক্যাম্পাসের অপরাজেয় বাংলার সামনে মানববন্ধন করে এই দাবি জানান তারা। এরপর মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে এই ঘটনার প্রতিকারে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

ব্যবস্থাপনা বিভাগের এমবিএ প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান তুষ্টির জন্য এই কর্মসূচি পালিত হয়। তিনি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে রয়েছেন।

টাঙ্গাইলের কালিহাতিতে শ্বশুর বাড়ি থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় সোমবার রাতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়।

মঙ্গলবার রাতে এই ছাত্রীকে দেখে এসে উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেন, “হেন নির্যাতন নেই যে তাকে করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে বন্য পশুর মতো নির্যাতন মেনে নেওয়া যায় না।”

নুসরাতের ওপর নির্যাতনের অভিযোগের মুখে থাকা তার স্বামী নাজির উদ্দিন সেনাবাহিনীর মেজর। তিনি চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে কর্মরত বলে নুসরাতের বাবা নুরুল ইসলাম ভূইঁয়া জানিয়েছেন।

কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নুসরাতকে আনতে গিয়ে তিনি, তার স্ত্রী শাহনাজ আক্তার ও ছেলে মুঈদ হাসানও মারধরের শিকার হন।

সোমবার সকালে মেয়ের ওপর নির্যাতনের খবর পেয়ে তার শ্বশুরবাড়ি কালিহাতি রওনা হন নুরুল ইসলাম।

“মেয়ে ফোন দিয়ে বলেছিল- ‘বাবা, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে, আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও’।”

সপরিবারে বিকালে কালিহাতি পৌঁছান নুরুল। সেখানে তাদের সামনেই নুসরাতকে তার স্বামী নাজির ও শ্বশুর সাবেক সেনা কর্মকর্তা ইদ্রিস আলী কয়েক দফা মারধর করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

নুসরাতের সঙ্গে স্বামী নাজির উদ্দিন

সহপাঠী অপূর্ব মজুমদারের তোলা ছবিতে নুসরাতের ওপর নির্যাতনের ক্ষত

“বাধা দিতে গিয়ে আমরাও আহত হই,” বলে নিজের হাতে মারধরের দাগ দেখান নুসরাতের বাবা।

মুঈদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আপা গোপনে ফোন করে তার ওপর নির্যাতনের কথা বলেছিল। সেখানে গিয়ে সমঝোতা করে আপা ও ভাগ্নেকে নিয়ে আসতে চাইলে আমাদের ওপর হামলা চালায় তারা।”

পরে থানায় গিয়ে অভিযোগ করা হলে পুলিশ গিয়ে সন্ধ্যায় নুসরাতকে উদ্ধার করে। তবে কালিহাতি থানা মামলা নেয়নি দাবি করে মুঈদ বলেন, তারা এখন আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

২০১৩ সালে নুসরাতের সঙ্গে বিয়ে হয় সেনা কর্মকর্তা নাজিরের। তাদের একমাত্র সন্তানের বয়স ১৩ মাস। 

বিয়ের পর থেকে নাজির যৌতুক চাইছিল বলে অভিযোগ করেন নুরুল ইসলাম। কয়েক দফায় কয়েক লাখ টাকা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

“নাজির মেজর হওয়ার পর তার চাহিদা আরও বেড়ে যায়। পাঁচ কোটি টাকা ও ঢাকায় ফ্ল্যাট দাবি করে সে মেয়ের ওপর নির্যাতন চালাতে থাকে। কিন্তু ছেলের মুখ চেয়ে সব সহ্য করছিল আমার মেয়ে।”

নুরুল ইসলাম জানান, ইদ্রিস আলী ও নাজির শুক্রবার তাদের ঢাকার বাসা থেকে নুসরাতকে টাঙ্গাইলে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় বলেছিল, তিন-চার দিন পর নাজির স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় ফিরে আসবে।

“কিন্তু সেখানে নিয়ে আমার মেয়েকে নির্মমভাবে মেরেছে,” বলতে বলতে আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েন অবসরপ্রাপ্ত এই ব্যাংক কর্মকর্তা।

নুসরাতের ওপর নির্যাতনের বিচার দাবিতে মানববন্ধনে যোগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আতাউর রহমান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে যৌতুকের দাবিতে যে মেজর এরকম নির্যাতন করতে পারেন, সে অবশ্যই মানুষ নয়, পশু। ওই মেজরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।”