বার্গম্যানের সাজা: ২৩ বিবৃতিদাতার বিরুদ্ধে অবমাননার রুল

ব্রিটিশ নাগরিক ডেভিড বার্গম্যানের সাজায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতিদানকারী ৫০ জনের মধ্যে ২৩ জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 April 2015, 12:15 PM
Updated : 1 April 2015, 12:30 PM

তাদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- তার ব্যাখ্যা তাদের দিতে হবে আগামী ২৩ এপ্রিলের মধ্যে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জাফর উল্লাহ চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, নারী অধিকারকর্মী শিরিন হক, নৃ-বিজ্ঞান গবেষক রেহনুমা আহমেদ, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক সি আর আবরার, সাংস্কৃতিক কর্মী লুবনা মারিয়াম, অধিকারকর্মী মুক্তাশ্রী চাকমা সাথী ও নারী গ্রন্থ প্রবর্তনার নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতারকে এই জবাব দিতে হবে। 

সাংবাদিক ও লেখক আফসান চৌধুরী, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষক বীণা ডি কস্টা, লেখক শবনম নাদিয়া, লেখক মাহমুদ রহমান, চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসরিন সিরাজ এ্যানি, আলাল ও দুলাল ব্লগের সম্পাদক তীব্র আলী, নৃবিজ্ঞানী দেলোয়ার হোসেন, মাসুদ খান, অ্যাডভোকেট জিয়াউর রহমান, জরিনা নাহার কবির, আলী আহম্মেদ জিয়াউদ্দিন, সঙ্গীতশিল্পী আনুশেহ আনাদিল, অধিকারকর্মী হানা শামস আহমেদ ও সাংস্কৃতিক কর্মী লিসা গাজীকেও রুলের জবাব দিতে বলেছে আদালত।    

বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ বুধবার এই রুল জারি করে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী অধিকারকর্মী রেজাউর রহমানের পক্ষে এদিন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার আনিসুর রহমান নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে রেজাউরকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় ট্রাইব্যুনাল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সি আর আবরারের পক্ষে এদিন ওকালতনামা দাখিল করেন ব্যারিস্টার আনিসুর রহমান। রেহনুমা আহমেদ ও আলী আহমেদ জিয়াউদ্দিনের পক্ষে ওকালতনামা দেন অ্যাডভোকেট আখতার ইমাম।

ব্লগে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ লেখার মাধ্যমে বিচারাধীন বিষয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর দায়ে সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে গত ২ ডিসেম্বর সাজা দেয় ট্রাইব্যুনাল। এরপর ২০ ডিসেম্বর দৈনিক প্রথম আলো ৫০ নাগরিকের উদ্বেগ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে।

ওই সংবাদ ‘বাংলাদেশের বিচার বিভাগের প্রতি কটাক্ষ’ বলে মনে হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল প্রথম আলোর কাছে ওই বিবৃতির ‘পূর্ণাঙ্গ কপি’ দেখতে চায়। সে অনুযায়ী প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ ওই ৫০ নাগরিকের পক্ষে বিবৃতি পাঠানো হানা শামস আহমেদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় ও ঠিকানা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে।

আদালতের নির্দেশে বিবৃতিদাতা ৫০ নাগরিকের মধ্যে ৪৯ জনের পরিচয় ও ঠিকানা গত ১৪ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক। নাম-ঠিকানা পাওয়ার পর বিচারক বিবৃতিদাতাদের আচরণের ব্যাখ্যা দিতে বলেন।

৫০ নাগরিকের মধ্যে মানবাধিকার কর্মী ও নারীনেত্রী খুশি কবির ওই বিবৃতি প্রকাশের পরপরই নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ১৪ জনের নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তাদের অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় আদালত।

ওইদিন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক, সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান, সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ ও আমেনা মহসিন, বাংলাদেশ শিশু বিকাশ কেন্দ্রের ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর ডা. নায়লা জামান খান, ড. শাহনাজ হুদা, পরিবেশ আন্দোলনকর্মী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক আসিফ নজরুল, মানবাধিকারকর্মী জাকির হোসেন, সংগীত শিল্পী অরূপ রাহী, লেখক শাহীন আক্তার ও অধিকারকর্মী ইলিরা দেওয়ান আদালতের ক্ষমা পান।

এরপর ৩ মার্চ নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে রেহাই পান বিবৃতিদাতা আরও ১০ জন।

এরা হলেন- যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেইট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের শিক্ষক ড. আলী রিয়াজ, ড. পারভিন হাসান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির ফিরদৌস আজিম, প্রকাশক মহিউদ্দিন আহমেদ, মানবাধিকার আইনজীবী ড. ফস্টিনা পেরেইরা, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক নূর খান লিটন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সামিয়া হক, ড. সেঁউতি সবুর, তাসমিন সারা সাহাবুদ্দীন ও লেখক তাহমিমা আনাম।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দিনা এম সিদ্দিকী ক্ষমাপ্রার্থনা করলে ১৮ মার্চ তাকেও অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় ট্রাইব্যুনাল।

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ কয়েকজন ট্রাইব্যুনালে ব্যাখ্যা দাখিল করে বলেছিলেন তারা নিজেরাই এর ওপর শুনানি করবেন।

পরে জাফরউল্লাহ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বিবৃতিতে যা লেখা হয়েছে তাতে আদালত অবমাননার মতো কিছু ছিল না বলে তিনি মনে করেন। এ বিষয়টি আদালতে জমা দেওয়া ব্যাখ্যাতেও তিনি উল্লেখ করেছেন।