প্রতি একরে পানির দাম চার হাজার টাকা বাড়লেও বাড়েনি ধানের দাম। পানির পেছনে এই বাড়তি খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন রংপুর অঞ্চলের চাষিরা।
যাদের নিজের সেচযন্ত্র নেই তাদের বাড়তি সেচ খরচ জোগান দিতে কমদামে আগাম ধান বিক্রি করতে হচ্ছে।
সেচযন্ত্রের মালিকরা বলছেন, ডিজেল, বিদ্যুৎ, সেচযন্ত্র ও খুচরা যন্ত্রাংশের দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা পানির দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন। তবে খরা পরিস্থিতি বিরাজ করলে পানির দাম আরও বাড়তে পারে বলেও আভাস দিয়েছেন সেচযন্ত্র মালিককরা।
রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুস্করণী ইউনিয়নের ধাপেরহাট গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তার বলেন, “জের মেশিন (সেচযন্ত্র) নাই। অন্যের মেশিন থাকি পানি কিনে বোরো আবাদ করেন।
“গত বছর এক একর জমিত বেচন (চারা) নাগা থাকি ধান পাকার আগ পর্যন্ত পানি কিনতে খরচ পচ্চিলো ৪ হাজার টাকা। জমি তৈয়ার করা, পানি, সার, কীটনাশক কিনা ও ধান কাটা মাড়াই করি এক মণ ধানে উৎপাদন খরচ পচ্চিলো ৭৫০ টাকা। ধান বেচাচি ৭০০ টাকা মণ দরে।
“এবছর মেশিনলারা (সেচযন্ত্রের মালিক) এক একর জমিত পানি দেওয়ার জন্য রেট বান্ধি দেচে ৮ হাজার টাকা। পানির দাম দুইগুণ বাড়াইচে; কিন্তুক ধানের দামতো বাড়ে নাই।”
পানির দাম জোগাতে কমদামে আগাম ধান বিক্রি করেছেন বলে জানান কৃষক আব্দুস সাত্তার।
বদরগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের আমরুল বাড়ি গ্রামের কৃষক আইয়ুব আলী বলেন, “এবার পানির দাম দুইগুণ বাড়াইচে। দাম বাড়ছে সার, কীটনাশক, কিষাণের। ক্ষেত পরিচর্যাসহ ধান কাটা মাড়াই খরচ তো আছেই। বেশি টাকা খরচ করি লোকসান খাই। যে কারণে এবার অর্ধেক জমিতে পাট চাষ করার সিদ্ধান্ত নিচি।”
পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়নের দেউতি গ্রামের সেচযন্ত্রের মালিক আবুজার রহমান মাষ্টার বলেন, “পানির ক্রেতার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এবছর আরও ৩টি ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিন বসানো হয়েছে। বর্তমানের ৫টি স্যালো মেশিন দিয়ে নিজের জমি ছাড়াও এলাকার ১৩০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের জমিতে পানি সেচ দিচ্ছি।”
পানির দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত বোরো মৌসুমে ডিজেলের লিটার ছিল ৬৪ টাকা ২৫ পয়সা। গত বছরের অক্টোবরে দাম বাড়িয়ে করা হয় ৬৮ টাকা ২৫ পয়সা। এছাড়া শ্যালো মেশিন ও খুচরা যন্ত্রাংশের দামও বেড়েছে দ্বিগুণ। সেচযন্ত্র চালাতে এবং পানি সরবরাহ করতে লোক রাখতে হয়।
সব মিলিয়ে একর প্রতি আট হাজার টাকায় পানি বিক্রি করার পরও পোষাচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক প্রতীক কুমার মন্ডল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বোরো আবাদ পানিনির্ভর। সেচযন্ত্রের দাম বৃদ্ধির কারণে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের পক্ষে তা কেনা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তারা অন্য সেচযন্ত্র মালিকের কাছ থেকে পানি কিনে আবাদ করে থাকেন।
এ বছর সেচযন্ত্রের মালিকরা পানির দাম দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের আওতায় রয়েছে রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা জেলা।
ওই কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এসব জেলায় কৃষকের সংখ্যা ১২ লাখ ৯৬ হাজার ৯৪১ জন। এরমধ্যে ৮ লাখ ৩৮ হাজার ৫৬১ জনই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক, যাদের নিজস্ব সেচযন্ত্র নেই। আলু ও বোরোচাষ মৌসুমে তারা মাঝারি ও বড় কৃষকের সেচযন্ত্র থেকে পানি কিনে চাষাবাদ করে থাকেন।
ওই পাঁচ জেলায় এবছর ১১ লাখ ৮৮ হাজার ৭১২ একর জমিতে বোরোচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।