এটা গণহত্যা: প্রধানমন্ত্রী

অবরোধে গাড়িতে পেট্রোল বোমা ও আগুন দিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যার মধ্য দিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2015, 08:16 AM
Updated : 26 Feb 2015, 09:56 AM

বৃহস্পতিবার বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিষয়ক চতুর্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “এটা তো মানুষ খুন করা। এরা তো খুনের দায়ে অভিযুক্ত। এটা তো গণহত্যা করা। বিএনপি-জামাত জোট মিলে গণহত্যা চালাচ্ছে।”

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে এই ‘বীভৎস কর্মকাণ্ড’ বন্ধ করবে বলে আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আল্লাহ তাদের সুমতি দিক, তারা যেন এই ধরনের কাজ বন্ধ করে।

“এটা কোনো মানুষের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।”

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ হয়ে সারা দেশে লাগাতার অবরোধের ঘোষণা দেন। অবরোধের মধ্যেই হরতালের ডাক আসছে তাদের পক্ষ থেকে।

অবরোধ-হরতালের তেমন কোনো প্রভাব জনজীবনে না পড়লেও যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য যানবাহনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপে, অগ্নিসংযোগ ও হাতবোমার বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটছে।

প্রায় দুই মাসের অবরোধে সহিংসতায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই আগুনে পুড়ে মারা গেছেন।   

রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘সোসাইটি অফ প্লাস্টিক সার্জনস বাংলাদেশ’  আয়োজিত সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী।

পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যেটা অত্যন্ত অমানবিক, যেটা চিন্তাই করা যায় না। এই ভাবে মানুষ মানুষকে পুড়িয়ে মারবে?

“বাংলাদেশ এমন একটা দেশ, রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রাম ছিল। মানুষের জন্য রাজনীতি। মানুষের একটু সুন্দর জীবন দেওয়া, মানুষের ভালো করা, মানুষকে উন্নত জীবন দান করা, মানুষের সমস্যাগুলো দূর করা- এই তো রাজনীতির উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য কীভাবে হাসিল হবে যদি দেখি সেই সাধারণ মানুষকেই হত্যা করা হচ্ছে?”

হরতাল- অবরোধের ডাকে মানুষ সাড়া না দেওয়ায় আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “যেহেতু তাদের ডাকে জনগণ সাড়া দিচ্ছে না, তাদের হরতালও কার্যকর হচ্ছে না, অবরোধও কার্যকর হচ্ছে না; সেজন্য ভীতি সৃষ্টি করতে  মানুষের গায়ে পেট্রোল বোমা মারা হচ্ছে। মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে।

“বাসে সাধারণ যাত্রী চলাচল করে, সেখানে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। সাধারণ মানুষ যাচ্ছে- সেখানে পেট্রোল বোমা মারছে বা বোমা মারছে। এটা কোন ধরনের জুলুম?”

ক্ষোভের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মানুষের গা লক্ষ্য করে বোমা মারা হচ্ছে, পেট্রোল বোমা মারা হচ্ছে। মানুষকে পোড়ানো, মানুষকে মারা- এটাই হচ্ছে যেন আন্দোলন।নিরীহ, সাধারণ, খেটে খাওয়া মানুষের গায়ে আগুন দেওয়া হচ্ছে। ট্রেন লাইনের ফিস প্লেট খুলে, ট্রেন ফেলে, অ্যাকসিডেন্ট ঘটিয়ে মানুষ মারা। সিএনজি, রিকশা কোনো কিছু বাদ যাচ্ছে না। এমনকি লঞ্চেও আগুন দিচ্ছে।”

সম্প্রতি মুরগির বাচ্চা বোঝাই একটি ট্রাকে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

ওই ঘটনা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “মুরগির বাচ্চা নিয়ে যাচ্ছে। সেটাও রেহাই পায় নাই, আগুন দেওয়া হয়েছে। এটা কোন ধরনের বীভৎসতা?”

এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী হিসাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা কোন ধরনের রাজনীতি? এটা তো রাজনীতি না। এটা সম্পূর্ণ সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড।

“শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে পোড়ানো হচ্ছে।এটা সহ্য করা যায় না।এটা খুব দুঃখের, খুব কষ্টের।”

“একটা মানুষ কীভাবে অন্য মানুষকে পুড়িয়ে মারছে,” প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী।

৬ দশমিক ২ শতাংশ গড় প্রবৃদ্ধি অর্জন, মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা, মাথাপিছু আয় এক হাজার ১৯০ ডলারে উন্নীত, দারিদ্র্যের হার কমে ২৪ শতাংশে নেমে আসার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা যদি দেশ চালাতে ব্যর্থ হতাম- তাহলে বুঝতাম সরকার উৎখাতের আন্দোলন। বাংলাদেশে তো ব্যর্থতার কোনো চিহ্ন নেই।”

জনগণ ও দেশের স্বার্থে নয়, ব্যক্তি স্বার্থে বিএনপি-জামায়াত জোটের এই আন্দোলন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “মানুষ কেন এই কষ্ট ভোগ করবে? কেউ যদি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে- সেই ভুলের মাশুল কি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ দেবে? জনগণ কেন তাদের ভুলের মাশুল দেবে? এটাই হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাগ্য।”

৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের অংশ না নেওয়া তাদের রাজনৈতিক ভুল বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

হরতালের জন্য বারবার এসএসসি পরীক্ষা পেছানোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আন্দোলনের ফসল ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা নষ্ট হচ্ছে। আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জীবনটাকে ধ্বংস করে দিয়ে এটা কোন ধরনের আন্দোলন?”

অগ্নিদগ্ধদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।

আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের চিকিৎসা সেবার জন্য চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে। এই সীমিত সম্পদ নিয়েও আপনারা দিন-রাত খেটে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের যে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন সেজন্য আমি জাতির পক্ষ থেকে আপনাদের কৃতজ্ঞতা জানাই।”

সোসাইটি অফ প্লাস্টিক সার্জনস বাংলাদেশের সভাপতি সামন্ত লাল সেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, সংগঠনের মহাসচিব অধ্যাপক আবুল কালাম এবং সম্মেলন আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান অঞ্জন কুমার দেব বক্তব্য দেন।