আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন মতিউর রহমান

‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের’ একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ছয় দিনের মাথায় ঝালকাঠির আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান।

ঝালকাঠি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2015, 06:50 AM
Updated : 27 Jan 2015, 08:14 AM

জেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. আরিফুজ্জামান মঙ্গলবার  তার জামিন মঞ্জুর করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীদের আবেদনে সাড়া দিয়ে মতিউর রহমানকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকেও অব্যাহতি দিয়েছেন বিচারক।

‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার’অভিযোগে স্থানীয় এক আইনজীবীর করা মামলায় তিন দফা তলবে হাজির না হওয়ায় গত ২১ জানুয়ারি মতিউর রহমান ও মজিদ খান নামের এক আলোকচিত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।

বেলা ১১টার দিকে ঝালকাঠির আদালতে উপস্থিত হন মতিউর রহমান। ২০ মিনিট পর মামলার শুনানি শুরু হয়।

আইনজীবী আব্দুর রশীদ শিকদার ও মানিক আচার্য তার পক্ষে শুনানি করেন।

জামিনের পর মতিউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই মামলাটি মিথ্যা। মজিদ খান নামের কোনো আলোকচিত্রী প্রথম আলোয় নেই।”

কয়েকটি প্রতিবেদনে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার’ অভিযোগ এনে গত ৯ অক্টোবর  এ মামলা দায়ের করেন মো. বণি আমিন বাকলাই নামের ওই আইনজীবী।  মামলা আমলে নিয়ে আসামিদের ১৬ নভেম্বর আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেন বিচারক। ওই দিন হাজির না হওয়ায় পরে দুই দফায় ১১ ডিসেম্বর ও ১৮ জানুয়ারি হাজির হতে বললেও আসামিরা যাননি। এরপর তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানির দিন রয়েছে।

প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২৯৫ ও ২৯৮ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

দণ্ডবিধির ২৯৫ (ক) ধারায় অন্যের ধর্ম বিশ্বাসের অবমাননা ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে বিদ্বেষমূলক কোনো কাজ করলে দুই বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানার বিধান রয়েছে।

আর দণ্ডবিধির ২৯৮ ধারায় বলা হয়েছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে বিদ্বেষমূলক শব্দ উচ্চারণ করলে এক বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানা হতে পারে।

অভিযোগ

সম্পাদক মতিউর রহমানকে ‘মস্কোপন্থী সৌখিন কমিউনিস্ট’ অভিহিত করে মামলায় বলা হয়, ২০০৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর রম্য সাময়িকী আলপিনে হযরত মুহম্মদ (স.) কে নিয়ে ব্যঙ্গ কার্টুন প্রকাশ করা হয়।

“২০১৩ সালের ১১ মার্চ প্রথম আলোর রম্য সাময়িকী রস আলোর ৫ নম্বর পাতায় পবিত্র কোরআনের সুরা লোকমানের ২৭ নম্বর আয়াতের অর্থ হুবহু তুলে দেয়।এতে শুধু আল্লাহ তায়ালার গুণ বর্ণনার জায়গায় সরকারের গুণের কথা লিখে দেওয়া হয়।আল কোরানের আয়াতের অর্থ হুবহু নকল করে ফান করা হয়েছে, যা অকল্পনীয়।”

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত একটি ছবির কথা উল্লেখ করে মামলায় বলা হয়, “বেশ কিছু নারীর কপালে লাল টিপ ও সিঁদুর এঁকে দিয়ে ফটোসপ করা ওই ছবিটি দিয়ে একটি ম্যাসেজ দিতে চেয়েছিল যে,  শতকরা ১০ ভাগের মতো ভোট পড়েছে, যার বেশিরভাগই ছিল হিন্দু ভোটার।

“এই সাম্প্রদায়িক উস্কানির পরিপ্রেক্ষিতেই বিএনপি-জামায়াত কয়েক ঘণ্টা পর যশোর ও দিনাজপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ করে।”

এসবের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাদী বণি আমিন বাকলাই।