এছাড়া দেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আদিবাসীদের সম্পদ দখলের উদ্দেশে এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রভাবেই সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি আদিবাসীদের উপরও বারবার হামলার ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন তারা।
এছাড়া বিচারহীনতার সংস্কৃতি দুর্বৃত্তদের এসব হামলায় আরও উৎসাহিত করছে বলেও মন্তব্য করেন অনেকে।
দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায় সাঁওতাল আদিবাসীদের গ্রামে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের প্রতিবাদে আদিবাসী সংগঠনগুলোর আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে এসব কথা বলেন তারা।
গত ২৪ জানুয়ারি সকালে পার্বতীপুরের মোস্তফাপুর ইউনিয়নের আদিবাসী সাঁওতাল অধ্যুষিত হাবিবপুর গ্রামে (আদিবাসীদের কাছে ‘চিড়াকূটা’ নামে পরিচিত) হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।
হামলায় গ্রামবাসীদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করার পাশাপাশি লুটপাট, একজন গর্ভবতী সাঁওতাল নারীকে ধর্ষণসহ অন্যান্য সাঁওতাল নারীকে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক মেসবাহ কামাল বলেন, “দেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সাঁওতাল আদিবাসীদের গ্রামের হামলা চালানো হয়। তারা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য, নিজেদের নারীদের নিরাপত্তার জন্য হতে অস্ত্র তুলে নেয়। নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কোনো অপরাধ না।
“আদিবাসীদের উপর যতো হামলার ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর বিচার করতে এবং আদিবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রকে তৎপর হতে হবে, এজন্য যথাযোগ্য ব্যবস্থা নিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, মূলত আদিবাসীদের জমি দখলের জন্যই বারবার রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে তাদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো হয়। ফলে আদিবাসীদের জমি নিয়ে যে সমস্যাগুলো সেসব সমাধানের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো সমতলেও ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।
ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, “এর আগে সংখ্যালঘুদের উপর যতো হামলা হয়েছে তার কোনো বিচার হয়নি। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি দুর্বৃত্তদের উৎসাহিত করে।
“ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে যারা কাতরাচ্ছে তারা বিএনপি-আওয়ামী লীগ বোঝে না, এই দুই দলের দুই নেত্রীকেও তারা চিনে না আমি নিশ্চিত। তবে তারা খেয়ে-পড়ে ভালোভাবে বাঁচতে চায়। রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে যেই আদিবাসীরা শত শত বছর ধরে যে ভূমিতে আছে, চাষবাস করে খাচ্ছে, সেই জমি থেকে তাদের উচ্ছেদ করার জন্য বারবার হামলা চালানো হচ্ছে।”
আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সভাপতি সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, “আদিবাসী বিষয়ক ভূমি কমিশন বাস্তবায়ন করতে হবে, নাহলে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ হবে না।”
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, “শুধু আদিবাসী হিসেবে না, দেশের একজন নাগরিক হিসেবেও আমরা এসব হামলা, নির্যাতনের বিচার চাই। নাগরিক হিসেবে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকার সুনিশ্চিত হোক, তা চাই।”
সমাবেশে চিড়াকূটা গ্রামে হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসী পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসন, আদিবাসী প্রামের নারী-পুরুষ-শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, আদিবাসীদের সঙ্গে চলমান বিবাদমান জমি বিষয়ে নিস্পত্তি, খাসজমি আদিবাসীদের মধ্যে বণ্টনের ব্যবস্থার দাবিও জানানো হয়।
মানববন্ধনে অংশ নেয় বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, কাপেং ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদসহ আরও কয়েকটি আদিবাসী সংগঠন।