সুন্দরবনে তেলে দুই ভোঁদড়ের মৃত্যু

সুন্দরবনের নদী-খালে ছড়িয়ে পড়া ফার্নেস অয়েল মিশ্রিত জলপানে দুটি ভোঁদড়ের মৃত্যু হয়েছে বলে বণ্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বাগেরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Dec 2014, 09:41 AM
Updated : 21 Dec 2014, 09:52 AM

সুন্দরবনের শেলা নদীতে ফার্নেস অয়েলবাহী ট্যাংকার ডুবির নয় দিন পর ওই নদী থেকেই থেকে মৃত ভোঁদড় দুটি উদ্ধার করা হয়।

বণ্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. জাহিদুল কবীর রোববার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সুন্দরবনে তেলবাহী ট্যাংকার ডুবির পর আমাদের বিভাগ বণ্যপ্রাণীর ক্ষয়ক্ষতি পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খানকে নিয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর আমাদের একটি দল সুন্দরবনে যায়।

“সেখানে গিয়ে শেলা নদীর আন্ধারমানিক এলাকায় নদীর পানিতে ভাসতে দেখে বনকর্মীরা ভোঁদর দুটির মৃতদেহ তুলে আনে। ভোঁদড় দুটির শরীরে র্ফানেস অয়েল লেগে ছিল। উদ্ধার হওয়ার অন্তত দুই তিন দিন আগে মারা গিয়েছিল।”

বণ্যপ্রাণী দুটির মৃত্যুর কারণ জানতে সেগুলোর ময়নাতদন্ত হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “বণ্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি  বিভাগের চিকিৎসক (ভ্যাটেনারি সার্জন) সৈয়দ হোসেন শুক্রবার ওই প্রাণী দুটির ময়নাতদন্ত করেন। তেল মিশ্রিত পানি খেয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি প্রতিবেদন দিয়েছেন।”

বন কর্মকর্তা জাহিদুল বলেন, “নদীর মাছ শিকার করে জীবন ধারণকারী প্রাপ্ত বয়স্ক ভোঁদড় দুটি যখন মাছ শিকার করছিল তখন ওই নদীর পানিতে তেল ভাসছিল। ওই তেল মিশ্রিত মাছ ও পানি খেয়ে বণ্যপ্রাণী দুটির মৃত্যু হয় বলে চিকিৎসক নিশ্চিত হয়েছেন।”

একসময় বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদীগুলোতে ভোঁদড়ের দেখা মিললেও এখন শুধু সুন্দরবনেই এর দেখা মেলে।

বাংলাদেশে এই প্রাণীটি মহাবিপন্ন প্রজাতি হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) তালিকায় রয়েছে।

গত ৯ ডিসেম্বর ভোরে সুন্দরবনের শেলা নদীতে সাড়ে তিন লাখ লিটারের বেশি ফার্নেস অয়েলবাহী ট্যাংকার ডুবির পর এই প্রথম কোনো বণ্যপ্রাণীর মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেল।

সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়া তেল মিশ্রিত জলপান করে অন্য কোনো জলজ বা বণ্যপ্রাণী অসুস্থ বা মারা গেল কি না তা অনুসন্ধানে বণ্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তিনটি দল কাজ করছে।

ছড়িয়ে পড়া তেলে সুন্দরবনে বসবাস করা বাঘ, হরিণ, শুকর বা পরিযায়ী (অতিথি পাখি) পাখির কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না তা জানতে চাইলে জাহিদুল কবীর বলেন, “এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে আমাদের একাধিক দল কাজ করছে। আমরা এখনো সুন্দরবনের নদী-খালে ছড়িয়ে পড়া তেল বণ্যপ্রাণীর শরীরে লেগে আছে এমনটি দেখতে পাইনি।

“সুন্দরবনের ভেতরে মিষ্টি পানির জলাশয় রয়েছে, যেখানে গিয়ে বাঘ ও হরিণ পানি পান করে থাকে। এরইমধ্যে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা সুন্দরবনে তেল বিপর্যয়ের ফলে সুন্দরবনের বণ্য ও জলজপ্রাণীর ওপর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির প্রভাব কী হবে তা নিয়ে কাজ শুরু করছে।”

অন্য যারা সুন্দরবনে কাজ করছেন তারা কোনো প্রাণীর গায়ে তেল লেগে থাকতে দেখলে বা তেলে কাবু কোনো প্রাণী দেখতে পেলে বণ্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগকে জানাতে অনুরোধ করেছেন ডিএফও মো. জাহিদুল কবীর। এ সংক্রান্ত যোগাযোগের জন্য ০১৭৭৮৪৫৪৪৯৯ মোবাইল নম্বরে ফোন করতে বলেছেন তিনি।