সশস্ত্র বাহিনী জনগণের পাশে থাকবে, আশা প্রধানমন্ত্রীর

জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণে সশস্ত্র বাহিনী সব সময় দেশের জনগণের পাশে থাকবে বলে প্রত্যাশা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Dec 2014, 09:46 AM
Updated : 18 Dec 2014, 05:43 PM

ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স ২০১৪ এবং আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স ২০১৪-এর সনদ বিতরণ শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর জš§। শুরু থেকেই আমাদের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সর্বদা তাদের পাশে থেকেছেন।

“আমি আশা করছি ভবিষ্যতেও সশস্ত্র বাহিনীর এই ভূমিকা অটুট থাকবে।”

একটি পেশাদার ও প্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তার সরকারের কাজ করে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “জাতীয় বাজেটে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য আমরা বর্ধিত হারে অর্থ বরাদ্দ করে যাচ্ছি।”

সফলতার সঙ্গে ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স সম্পন্ন করা ৭৭ জন বৃহস্পতিবার সকালে মিরপুরের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে সনদ গ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৮ জন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল, নৌ বাহিনীর ৪ জন কমোডর, বিমান বাহিনীর ৩ জন গ্রুপ ক্যাপ্টেন, সিভিল সার্ভিসের ১১ জন, পুলিশের একজন ডিআইজি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ডিজি এবং ভারত, পাকিস্তান, চীন, মিশর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, তানজানিয়া, কুয়েত, জর্দান ও সৌদি আরবের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর ২৮ জন কর্মকর্তা এবারের এনডিসি কোর্সে অংশ নিয়েছিলেন।

অন্যদিকে এ বছর আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্সে (এএফডব্লিউসি) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৬ জন লেফটেন্যান্ট কর্নেল, বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর দুই জন ক্যাপ্টেন ও তিন জন কমান্ডার এবং বিমান বাহিনীর দুই জন গ্রুপ ক্যাপ্টেন ও তিন জন উইং কমান্ডার অংশগ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই এক বছরের এনডিসি ও এএফডব্লিউ কোর্স শেষ করায় প্রশিক্ষণার্থীদের অভিনন্দন জানান।

সনদপ্রাপ্তদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “উন্নত প্রশিক্ষণ এবং পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমেই ব্যক্তি এবং দলগত উৎকর্ষ অর্জন সম্ভব।

“আমি বিশ্বাস করি আপনাদের মেধা, শ্রম এবং প্রশিক্ষণ লব্ধ জ্ঞান দিয়ে আপনারা যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এখন অনেক বেশি প্রস্তুত।”

‘একটি উন্নততর ও পরস্পরের সাথে সম্পৃক্ত’ বিশ্বে বসবাস করার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেই বিশ্বও বিভিন্ন কারণে সুরক্ষিত নয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিয়ম-নীতি প্রভাব ফেলে। যার ফলে উন্নত দেশের অনেক অভিঘাতের প্রতিই থাকে তারা অরক্ষিত।

“এই পরিস্থিতিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য তাদের অর্থনীতিকে বহুমুখী ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নিজেদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা আবশ্যক।”

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী বিভিন্ন নিরাপত্তাজনিত সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

একটি সমন্বিত আঞ্চলিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “আমি আনন্দিত যে, আমরা সে লক্ষ্য বাস্তবায়নের সূচনা প্রত্যক্ষ করছি।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বর্তমানে আমরা একটি বহুমাত্রিক বিশ্বে বসবাস করছি, যেখানে সর্বদা পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি পরস্পরের সংযোগকে বৃদ্ধি করছে। উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের পথ দেখাচ্ছে। আবার মাঝে মাঝে প্রতিকূল পরিবেশও তৈরি করছে।”

পরিবর্তনশীল পরিবেশে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার উৎসাহিত করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন শেখ হাসিনা।

সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র অন্তর্ভুক্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৬ সালে নৌ-বাহিনীতে সাবমেরিন সংযোজন করা হবে।

ভৌগোলিক অবস্থান বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বর্তমানে আঞ্চলিক সংহতি জোরদার করতে বাংলাদেশ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।”

শেখহাসিনা বলেন, “সফলতার পাশাপাশি দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কিছু কিছু চ্যালেঞ্জও আমাদের সামনে উপস্থিত হচ্ছে। এসব চ্যালেজ্ঞ মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুত হতে হবে।”

ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা বজায় রেখে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালনে সক্ষম বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

“আমি আশা করি, তারা তাদের জ্ঞান, ইচ্ছা ও অঙ্গীকারকে কাজে লাগিয়ে জনগণের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন নিশ্চিত করবে এবং স্থিতিশীলতা রক্ষা করবে।”

অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের কমান্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোল্লা ফজলে আকবর স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এইচ এম এরশাদ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিনবাহিনী প্রধান, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং এনডিসির ফ্যাকাল্টি সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

পরে প্রধানমন্ত্রী সবার সঙ্গে চা চক্রে মিলিত হন এবং কেক কাটেন।