খালেদা জিয়ার তৃতীয় আবেদনও খারিজ

জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলাতেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা আপিলের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Nov 2014, 04:36 AM
Updated : 30 Nov 2014, 06:39 AM

প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ রোববার এই আদেশ দেয়।

এর আগে গত ২৫ নভেম্বর এ আদালতই জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলা নিয়ে খালেদার করা দুটি আপিলের আবেদন খারিজ করে।

গত সপ্তাহে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলায় খালেদার আবেদনের শুনানি করে আদেশের জন্য ৩০ নভেম্বর দিন রেখেছিল আদালত।

আদালতে খালেদার পক্ষে খন্দকার মাহবুব হোসেন, দুদকের পক্ষে মো. খুরশীদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানিতে অংশ নেন।

খালেদার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদেশের পর সাংবাদিকদের বলেন, জিয়া পরিবারকে ‘রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে’ মামলা দুটি করা হয়েছে। কোনো ভিত্তি না থাকা সত্ত্বেও সরকার মামলাগুলো দায়ের করে।

“আইন অনুসারে যেভাবে করার কথা ছিল সেভাবে এই দুই মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়নি। আমরা মনে করেছিলাম, নিম্ন আদালত স্বাধীনভাবে বিচার করতে না পারলেও উচ্চ আদালত পারবে।

“আমরা হাই কোর্টে এসেছিলাম। হাই কোর্ট আমাদের আবেদন খারিজ করে দেয়। এরপর আমরা আপিল বিভাগে যাই। আপিল বিভাগ দুই মামলার আবেদন আলদাভাবে শুনানি করে। তাই আমরা আশাবাদী হয়েছিলাম।

“কিন্তু আদালত আজ আমাদের সেই আবেদনও খারিজ করে দেয়। আমরা সর্বোচ্চ আদালতেও বিচার পেলাম না।”

খালেদার আইনজীবী বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫২৬ ধারায় তারা এ মামলায় অভিযোগ গঠনকারী বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে হাই কোর্টে দুটি আবেদন করেছেন।

“সেগুলোর শুনানি না হওয়া পর্যন্ত নিম্ন আদালতে বিচারিক কার্যক্রম চলতে পারে না।.... আল্লাহ আমাদের সঙ্গে রয়েছে, আশা করি ভবিষ্যতে আমরা বিচার পাব।”

খালেদার অপর আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকনও আদালতের রায়ে হতাশা প্রকাশ করেন।

দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, “আদালত খালেদা জিয়ার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। এই মামলায় আগেও কোনো স্থগিতাদেশ ছিল না, এখনো নেই।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বিচারিক আদালতের বিচারক নিয়ে কোনো আবেদন আমরা পাইনি। আমাদেরকে অনুলিপি দেওয়া হয়নি। হাই কোর্টে আবেদন দিয়ে থাকলেও তাতে নিম্ন আদালতে মামলা চলতে কোনো সমস্যা নেই। মামলার কার্যক্রম বন্ধ করতে হাই কোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ পেতে হবে।”

বিএনপি প্রধানের পক্ষে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী ও ব্যারিস্টার এহসানুর রহমানও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এহসানুর রহমান জানান, বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে তাদের আবেদনটি বিচারপতি সৈয়দ এবি মাহমুদুল হক ও বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরীর আদালতে শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ আমলে নেওয়ার আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে করা খালেদার আবেদন ২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর খারিজ হয়ে যায়।  আর জিয়া এতিমখানা ও জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলায় অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তার দুটি আবেদন হাই কোর্ট খারিজ করে গত ২৩ এপ্রিল।

হাই কোর্টের ওই তিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন নিয়েই সর্বোচ্চ আদালতে এসেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

ফাইল ছবি

দুদকের দায়ের করা জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট ও জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সোয়া পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। এ দুটি মামলা বর্তমানে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ বাসুদেব রায়ের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।

এ দুই মামলায় অভিযোগ গঠনকারী বিচারকের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেও সর্বোচ্চ আদালতে এসেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন, তবে তার আবেদন নাকচ হয়ে যায়।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে।

এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়।

দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ ২০১০ সালের ৫ অগাস্ট বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন।

মামলার অপর আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।

তারেক রহমান উচ্চ আদালতের জামিনে গত ছয় বছর ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন। সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আছেন জামিনে। বাকি দুজন পলাতক।

২০১১ সালের ৮ অগাস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ।

তেজগাঁও থানার এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত  কর্মকর্তা।

এ মামলার অপর আসামিরা হলেন- খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

এদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু হতেই পলাতক। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে। খালেদাসহ বাকি দুই আসামি জামিনে রয়েছেন।

গত ১৯ মার্চ এ দুটি মামলায় অভিযোগ গঠন করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিচার শুরু করে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত।