কিশোরগঞ্জের দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার দুই সহোদর নাছির উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে ক্যাপ্টেন এটিএম নাছির ও শামসুদ্দিন আহম্মেদের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2014, 01:56 PM
Updated : 25 Nov 2014, 01:58 PM

তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, নির্যাতন,গণহত্যাসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হচ্ছে।

রাজধানী ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর সড়কে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সেইফ হোমে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত শেষের কথা জানান সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান।

তদন্ত প্রতিবেদনটি বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বরাবর দাখিল করা হবে বলেও জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সদস্য সানাউল হক ও তদন্ত কর্মকর্তা আতাউর রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে সানাউল হক বলেন, এ দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৬ জুন তদন্ত কাজ শুরু হয়। এক বছর ৫ মাস ১৮ দিন তদন্ত করে ২৪ নভেম্বর তদন্ত কাজ শেষ হয়। তাদের বিরুদ্ধে ৬০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ৪০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

তদন্ত সংস্থার তথ্যানুযায়ী, ১৯৭১ সালে নাছির উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে মো. নাছির ওরফে ক্যাপ্টেন এটিএম নাছির (৬২) ও শামসুদ্দিন আহম্মেদের (৬০) বাবা আব্দুল রাজ্জাক মুন্সী করিমগঞ্জ জামে মসজিদের ইমাম ছিলেন। সেসময় নাছির করিমগঞ্জ থানাধীন বিদ্যানগর গ্রামে মন্নান মহাজনের বাড়িতে এবং শামসুদ্দিন করিমগঞ্জের আতকাপাড়া গ্রামের তৈয়ব উদ্দিনের বাড়িতে লজিং থেকে লেখাপড়া করতেন।

মুক্তিযুদ্ধে শুরু হওয়ার পরে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীতে সহায়তা করার জন্য রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন।

দুই ভাই সশস্ত্র অবস্থায় করিমগঞ্জ থানা এলাকার বিদ্যানগর, আয়লা, রামনগর, কলাতলি ও করিমগঞ্জে হত্যা, নির্যাতন ও গণহত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ত হন বলে তদন্ত কর্মকর্তাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

তারা বলছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে নাসির উদ্দিন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে নিজের নাম-পরিচয় বদলে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে লেখাপড়া শেষ করেন। ভুয়া পরিচয় ও ঠিকানা দিয়ে সেনাবাহিনীতেও যোগ দিয়ে ১৯৯৪ সালের ৫ জুলাই কমিশন লাভ করেন তিনি।

২০০২ সালের ১৩ জানুয়ারি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট থেকে ক্যাপ্টেন হিসেবে অকালীন বাধ্যতামূলক অবসরে যান নাসির উদ্দিন। এরপর নিজের এলাকায় ফিরে যান তিনি।

আরেক ভাই শামসুদ্দিন বর্তমানে আইন পেশায় নিয়োজিত আছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

এ দুই আসামির বিরুদ্ধে ১২০ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদনের সঙ্গে চার খণ্ডে ৪৫০ পৃষ্ঠার নথি প্রস্তুত করা হয়েছে। তাদেরকে গ্রেপ্তারের জন্যও ট্রাইব্যুনাল বরাবর আবেদন করা হবে বলে তদন্ত সংস্থা জানিয়েছে।

দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ৫ অভিযোগ

অভিযোগ-১: ১৯৭১ সালের ২৭ অক্টোবর কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থানাধীন আয়লা গ্রামে নাছির উদ্দিন ও শামসুদ্দিনের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী লুণ্ঠন,অন্যায় আটক ও নির্যাতন চালায়। পরে মুক্তিযোদ্ধার পিতা আব্দুল বারেকসহ মো. হাবিবুল্লাহ, শেখ চান্দু মিয়া,শেখ মালেক, আফতাব উদ্দিন, সিরাজ উদ্দিন, আব্দুল জব্বার ও আব্দুল মজিদকে গুলি করে হত্যা করে। পরে এদের সবার লাশ পাওয়া গেছে।

অভিযোগ-২: ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর এটিএম নাছিরের নেতৃত্বে করিমগঞ্জ থানাধীন আয়লা গ্রামে লুণ্ঠন,অন্যায় আটক ও নির্যাতন চালায়। পরে মিয়া হোসেন নামের একজনকে গুলি করে হত্যা করে। পরে তার লাশ পাওয়া গেছে।

অভিযোগ-৩: ১৯৭১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর করিমগঞ্জের কলাতলি গ্রামে নাছির উদ্দিন ও শামসুদ্দিনের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী আব্দুল গফুর নামে একজনকে বাড়ি থেকে অপহরণ করে নির্যাতন চালায়। পরে খুদির জংগল ব্রিজে নিয়ে গুলি করে তাকে হত্যা করে। পরে তার লাশ পাওয়া গেছে। 

অভিযোগ-৪: ১৯৭১ সালের ২৩ অগাস্ট করিমগঞ্জের বাজার ঘাট থেকে নাছির উদ্দিন ও শামসুদ্দিনের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী ফজলুর রহমান মাষ্টার নামে একজনকে আটক করে কিশোরগঞ্জ আর্মি ক্যাম্পে পাঠায়। সেখানে তাকে নির্যাতনের পরে হত্যা করা হয়। তবে তার লাশ পাওয়া যায়নি।

অভিযোগ-৫:  ১৯৭১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর করিমগঞ্জের রামনগর গ্রামে শামসুদ্দিনের নেতৃত্বে তারই সহপাঠী পরেশ চন্দ্র সরকারকে আটক করে নির্যাতনের পরে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে তার লাশ পাওয়া গেছে।