আদালতপাড়ায় লতিফ গুঞ্জন

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দেশে ফেরা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী আগাম জামিন চাইতে হাই কোর্টে এসেছেন বলে সোমবার দিনভর গুঞ্জন চললেও তার দেখা মেলেনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2014, 05:57 AM
Updated : 24 Nov 2014, 10:21 AM

হজ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য মন্ত্রিত্ব ও আওয়ামী লীগের সদস্য পদ হারানো এই সাংসদের জামিনের কোনো আবেদনও জমা পড়েনি বলে অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।

অবশ্য ওই গুঞ্জনেই লতিফকে প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে মিছিল করেছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।

এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে রোববার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছানোর পর থেকে তিনি কোথায় আছেন, সে বিষয়েও কিছু জানা যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধানমণ্ডির বাড়িতে তিনি ওঠেননি। লতিফ সিদ্দিকীর মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি তা ধরেননি।

হজ নিয়ে মন্তব্যের কারণে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে অন্তত দুই ডজন মামলা হয়েছে টাঙ্গাইলের সাংসদ লতিফের বিরুদ্ধে। এসব মামলায় তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাংসদ ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক নূরুল ইসলাম সুজনকে উদ্ধৃত করে সকালে কয়েকটি টেলিভিশন ও অনলাইনের খবরে বলা হয়, জামিন চাইতে লতিফ হাই কোর্ট প্রাঙ্গণে এসেছেন। সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে তারা এ বিষয়ে আবেদন করবেন। 

সংবাদ মাধ্যমগুলোর ওই খবরে লতিফের আদালতে আসার গুঞ্জন জোর হাওয়া পেলেও ঘণ্টাখানেক পর সুজন বিষয়টি অস্বীকার করেন।

সাংবাদিককে তিনি বলেন, “লতিফ সিদ্দিকী নামে আমার কোনো মক্কেল আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তার জন্যও কেউ যোগাযোগ করেনি। তার সঙ্গে আমার কথাও হয়নি। তিনি হাই কোর্টে এসেছেন এমন কথাও আমি কাউকে বলিনি।”

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সুজন বলেন, “যারা বলছে, তারা নিজ দায়িত্বে বলছে।”

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদেরকে জামিন আবেদনের কোনো অনুলিপি দেওয়া হয়নি। জামিন আবেদন করা হয়েছে বলে কোনো খবর আমরা জানি না।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কে কোন দল করে সেটা আমরা দেখি না। দেখবও না। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।”

এদিকে লতিফের আসার খবরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিএনপিপন্থি একদল আইনজীবী।

বিএনপিপন্থি আইনজীবী গাজী কামরুল ইসলাম সজল বলেন, “আমরা শুনতে পেয়েছি, লতিফ সিদ্দিকী হাই কোর্টে এসেছেন। তাকে যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানেই প্রতিরোধ করা হবে। এই নাস্তিক, ধর্ম অবমাননাকারী উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেতে পারে না।”

‘লতিফ সিদ্দিকীর চামড়া, তুলে নেব আমরা’/‘ধর্ম নিয়ে অবমাননা, চলবে চলবে না’- সহ বিভিন্ন স্লোগান শোনা যায় এই মিছিলে।

গত সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে এক সভায় হজ নিয়ে বক্তব্যের জেরে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন লতিফ সিদ্দিকী। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য পদ থেকেও তাকে সরানো হয়।

ফাইল ছবি

গত ২৮ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে ওই অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকী বলেছিলেন, “আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীর যতটা বিরোধী, তার চেয়ে বেশি হজ আর তাবলিগের বিরোধী। ”

এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, বিপুল সংখ্যক মানুষ হজে যাওয়ায় দেশের অর্থ আর শ্রম শক্তির ‘অপচয়’ হয়।

তার এই বক্তব্য প্রচার হলে তা নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। বিভিন্ন ইসলামী দল লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে কর্মসূচিও দেয়।

এরই মধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয় লতিফ সিদ্দিকীকে। আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকেও তাকে বাদ দেওয়া হয়।

এই ডামাডোলের মধ্যে দেশে না ফিরে প্রায় দুই মাস ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করেন লতিফ সিদ্দিকী। সাংবাদিকদের প্রশ্নে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছে সে অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

টাঙ্গাইলে প্রভাবশালী সিদ্দিকীদের জ্যেষ্ঠ ভাই ৭৭ বছর বয়সী লতিফ সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতি) আসন থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য হয়েছেন।

গত মহাজোট সরকারের পাট ও বস্ত্রমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন লতিফ সিদ্দিকী। শেখ হাসিনা টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর চলতি বছরের শুরুতে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাকে।