অপসংস্কৃতি যাতে ঘাড়ে চেপে না বসে: প্রধানমন্ত্রী

অপসংস্কৃতি যাতে ‘ঘাড়ে চেপে’ বসতে না পারে সে বিষয়ে নজর দিতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্যোগী হতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2014, 10:03 AM
Updated : 20 Nov 2014, 10:19 AM

পাশাপাশি যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে নতুনদের সামনে আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে শেখ হাসিনা বলেন, “উন্নত প্রযুক্তি এসেছে। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই দেশ এগিয়ে যাক।... ঐতিহ্য ধরে রেখে আধুনিকায়নের পাশাপাশি ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে নতুনদের আকৃষ্ট করতে হবে।”

পুরনো জিনিস ধরে রাখলে আধুনিক যুগে পিছিয়ে পড়তে হবে বলেও তিনি কর্মকর্তাদের সতর্ক করেন।

তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনী নিয়ে সত্যজিৎ রায়ের নির্মিত বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘জলসাঘরের’ কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পুরনো জিনিস সংরক্ষণ করতে হবে। পুরনো জিনিস ধরে রাখার চিন্তা আমাদের এগোতে দেবে না। তা না হলে সেই ‘জলসা ঘরের’ মতো আস্তে আস্তে সব ধসে পড়ে যাবে। নতুনদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।

“এজন্য সময়োপযোগী করা প্রয়োজন। আমরা আধুনিকায়নে যাব। ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করে আধুনিকায়নে এগিয়ে যেতে হবে।”

তবে সেই সুযোগে অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ যাতে না ঘটে, সেজন্যও কর্মকর্তাদের সতর্ক করেন তিনি।

“খেয়াল রাখতে হবে-অপসংস্কৃতি যাতে আমাদের ঘাড়ে চেপে বসতে না পারে। দেশজ সংস্কৃতি চর্চায় গুরুত্ব দিতে হবে, ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে।”

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় ১৯৯৬ থেকে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের তিন মেয়াদে দেশের সংস্কৃতির উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন এবং তথ্য প্রযুক্তি ব্যহার করে ও ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে তৃণমূলে দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেন।

“কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ওয়েবপোর্টাল ব্যবহার করছে আমাদের ছেলেমেয়েরা। এসব প্রযুক্তির মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের কাছে সংস্কৃতিকে সহজে পৌঁছে দিতে হবে।তাদের জন্য সে সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে।”

সংস্কৃতি চর্চায় গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সংস্কৃতি, সাহিত্য চর্চা- এগুলো আসলে মনের খোরাক। তা মনকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দেয়। পেটের ক্ষুধা মিটালে হবে না, মনের ক্ষুধাও মেটাতে হবে।”

যেসব দেশজ ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে, সেগুলো তুলে ধরে জনগণকে সচেতন করার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণার ওপরও গুরুত্ব দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন জাদুঘর, শাহজাদপুরে রবীন্দ্র কাচারিবাড়ি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি সংরক্ষণ ও নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত ভবন নির্মাণের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতা বাংলাদেশের মানুষকে সব সময় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

“আমরা জয় বাংলা স্লোগান দেই, এ স্লোগানই তো নজরুলের। এটা অনেকে হয়তো জানে না। জয় বাংলা জাতীয় কবি কাজী নজরুলের কাছ থেকে পাওয়া।”

জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী দশম সংসদ নির্বাচনের পর্যায়ক্রমে সব মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে আসেন তিনি।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সচিব রনজিৎ বিশ্বাসসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।