‘জঙ্গি’ সাজিদের ‘ভাই’ নারায়ণগঞ্জে আটক

পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বোমা হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন প্রধান আসামি শেখ রহমতুল্লাহ সাজিদ ওরফে মাসুমের ভাইকে নারায়ণগঞ্জের ফরাজিকান্দা থেকে আটক করেছে র‌্যাব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2014, 08:33 AM
Updated : 16 Nov 2014, 08:32 AM

র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সোমবার রাতে মো. মোনায়েম ওরফে মনোয়ার হোসেন ওরফে মনাকে আটক করা হয়।

র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, ভাইয়ের জঙ্গি কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই মোনায়েমকে আটক করেছেন তারা।

ভারতের গোয়েন্দারা বাংলাদেশের দুই নেত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে যাদের কথা বলে আসছিলেন, সাজিদ তাদেরই একজন।

ভারতের কর্মকর্তারা বলছেন, ৪০ বছর বয়সী বাংলাদেশি নাগরিক সাজিদ জেএমবির কমান্ডার  এবং বর্ধমান বিস্ফোরণের পেছনের মূল ব্যক্তি। তার বিষয়ে তথ্য দিতে ১০ লাখ রুপি পুরস্কারের ঘোষণা ছিল।

গত শনিবার কলকাতা বিমানবন্দর থেকে সাজিদ ও জিয়াউল হক নামের আরেকজনকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশ। ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

সাজিদকে ইতোমধ্যে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন এনআইএর গোয়েন্দারা। তারা বলছেন, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন ও কাশ্মিরের জঙ্গিদের সঙ্গে মিলে পশ্চিমবঙ্গে একটি জঙ্গি ঘাঁটি গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশে কোনঠাসা জেএমবি। এর অংশ হিসাবে মুর্শিদাবাদের একটি মাদ্রাসাকে ঘিরে জঙ্গি তৎপরতা চালিয়ে আসছিলেন সাজিদ।

গত ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে দুজন নিহত হওয়ার পর ভারতে তার তদন্তে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে আসে।

যে বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে, সেখান থেকে দুই নারীকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ; যারা জেএমবির সঙ্গে যুক্ত এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাড়ি জমিয়েছিলেন বলে ভারতের গোয়েন্দাদের দাবি।

ভারতের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, বর্ধমান বিস্ফোরণের তদন্তে তারা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে হত্যায় জঙ্গিদের একটি পরিকল্পনাও জানতে পেরেছেন।

ভারতের শীর্ষ বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ রহমতুল্লাহ সাজিদ ওরফে মাসুম ওরফে বুরহান শেখকে নারায়ণগঞ্জের ফরাজিকান্দার মানুষ চিনত মাসুদ রানা ওরফে মাসুম নামে।

তার ভাই ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি মোনায়েম ওরফে মনাকে (৪৫) উদ্ধৃত করে সোমবার আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, তাদের বাবা মারা যাওয়ার পর ৪ ভাই, ৪ বোনের মধ্যে সবার ছোট মাসুমকে (সাজিদ) ঢাকার একটি মাদ্রাসায় পাঠানো হয়। সেখানেই সে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।

“বছর আট-দশ পরিবারের সঙ্গে মাসুমের সম্পর্ক নেই। শুনেছিলাম সে আফগানিস্তানে চলে গিয়েছে। বেঁচে আছে কিনা তা-ও জানতাম না। এখন শুনছি, সে ভারতে ধরা পড়েছে।”

এরপর মঙ্গলবার দুপুরে র্যা বের পক্ষ থেকে মোনায়েম ওরফে মনাকে আটকের বিষয়টি জানানো হয়, যদিও তার ১২ ঘণ্টা আগেই আটকের বিষয়টি প্রকাশ করে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আনন্দবাজার। 

এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাসুম ওরফে সাজিদের পরিবারের অন্য সদস্যেরা আত্মগোপন করেছেন। ফরাজিকান্দায় তাদের পৈত্রিক বাড়িতে এখন আছেন কেবল শেফালি ও রোকেয়া নামের দুই নারী। এর মধ্যে শেফালি মনার স্ত্রী।

আনন্দবাজার বলছে, বাংলাদেশের মাসুম ভারতে গিয়ে সাজিদ নাম নেন এবং পরে বুরহান শেখ নামে ভারতীয় পরিচয়পত্রও তৈরি করে।  বুরহান আসলে তাদের আরেক ভাইয়ের নাম, যিনি মালয়েশিয়ায় চাকরি করতেন।

“ফরাজিকান্দার বাসিন্দাদের দাবি, মাসুম যে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তা তারা জানতেন। তবে সে যে এত বড় জঙ্গি নেতা তা তাদের জানা ছিল না। তাদের দাবি, মাসুমের কাজকর্মে মনাও মদত দিতেন। ১৯৯৭-এ চট্টগ্রামে প্রচুর বিস্ফোরক, ডিটোনেটর, জেহাদি বইসহ গ্রেপ্তার হয় মাসুম। তখন মনাই তাকে জামিনে ছাড়ান। পরে অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয় মাসুম। তখন পৈত্রিক জমি বিক্রি করে ফের তার জামিনের ব্যবস্থা করেন মনা। শেষ পর্যন্ত মাসুম দুবাই যাওয়ার কথা বলে বাড়ি ছাড়ে।”