হাসিনা-খালেদাকে হত্যার ষড়যন্ত্রের ‘হোতা’ গ্রেপ্তার 

বাংলাদেশের দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে হত্যার ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে যাদের নাম বলছিলেন ভারতের গোয়েন্দারা, তাদের মধ্যে একজন পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছেন।

নয়াদিল্লি ও আসাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Nov 2014, 11:59 AM
Updated : 9 Nov 2014, 03:47 PM

গ্রেপ্তার শেখ রহমতুল্লাহ সাজিদের বিষয়ে তথ্য দিতে ১০ লাখ রুপি পুরস্কারের ঘোষণা ছিল। ৪০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি বাংলাদেশি এবং জেএমবির কমান্ডার বলে ভারতের গোয়েন্দাদের দাবি।

সাজিদের সঙ্গে জিয়াউল হক নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ। তিনিও জঙ্গিদের সঙ্গে জড়িত বলে গোয়েন্দারা বলছেন।

পশ্চিমবঙ্গে এই দুজনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি পাশের রাজ্য আসামে শুক্রবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাজিনা বেগম নামে ৩০ বছর বয়সী এক নারীকে।

সাজিনার স্বামী শাহানূর আলমের বিষয়ে তথ্য দিতে এনআইএ’র পুরস্কারের ঘোষণা রয়েছে। তার মাথার দাম ধরা হয়েছে ৫ লাখ রুপি।

গত ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে দুজন নিহত হওয়ার পর ভারতে তার তদন্তে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে আসে।

যে বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে, সেখান থেকে দুই নারীকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ; যারা জেএমবির সঙ্গে যুক্ত এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাড়ি জমিয়েছিলেন বলে ভারতের গোয়েন্দাদের দাবি।

ভারতের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, বর্ধমান বিস্ফোরণের তদন্তে তারা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে হত্যায় জঙ্গিদের একটি পরিকল্পনাও জানতে পেরেছেন।

সাজিদ ও জিয়াউলকে গ্রেপ্তার এই তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে মনে করছেন এনআইএ গোয়েন্দারা। 

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কয়েক দিন আগে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ সাজিদকে গ্রেপ্তার করে। তবে তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা হয়নি।”

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের ঊধ্বতন কর্মকর্তা রাজীব কুমার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাজিদ জেএমবির মজলিসে শূরার সদস্য। তার বাড়ি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলায়।”

মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলায় আশ্রয় নেওয়া সাজিদকে শনিবারই গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেন রাজীব কুমার, যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বলেছিলেন, তাকে গ্রেপ্তার করা হয় কয়েকদিন আগে।

সাজিদকে গ্রেপ্তারের পর এনআইএ গোয়েন্দারা আটক করে জিয়াউলকে। তিনি সাজিদের পাশাপাশি সন্দেহভাজন ১২ জনের দুজন রেজাউল করিম ও ইউসুফ শেখের ঘনিষ্ঠ বলে এআইএ জানিয়েছে।

সাজিদের মতো ইউসুফ শেখের মাথার দামও ১০ লাখ রুপি, রেজাউলের মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছে ৩ লাখ রুপি।

পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা জিয়াউল শিমুলিয়া ও মুকিমনগর মাদ্রাসায় জঙ্গিদের প্রশিক্ষণে জড়িত থাকার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন বলে এনআইএ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। 

আসামের বাসিন্দা শাহানূর আলমের মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছে ৫ লাখ রুপি। তার স্ত্রী সাজিনাকে শুক্রবার সন্ধ্যায় গৌহাটির বাস টার্মিনাল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে আসাম পুলিশ জানিয়েছে। 

আসামের পুলিশ উপপ্রধান পল্লব ভট্টাচার্য রয়টার্সকে বলেন, বিশেষ এক অভিযানে ওই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই নারী ভারতবিরোধী যুদ্ধ চালাতে অস্ত্র সংগ্রহ করছিলেন।

আসামের পুলিশকে নিয়ে এনআইএ গোয়েন্দা এবং কেন্দ্রীয় পুলিশের একটি বিশেষ ইউনিট সাজিনাকে গ্রেপ্তারে এই অভিযান চালায়।

সাজিনাকে শনিবার গৌহাটির আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৪ দিনের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যায় জঙ্গিরা যে পরিকল্পনা করছে, তাতে সাজিনার সম্পৃক্ততা থাকতে পারে।”

তবে জঙ্গিদের অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে সাজিনার ভূমিকাকেই গুরুত্বপূর্ণ বেশি ভাবছে আসাম পুলিশের কর্মকর্তারা।

“আমরা নিশ্চিত যে স্বামীর (শাহানূর) সঙ্গে এই নারীও জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত ছিল,” বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন আসাম পুলিশের মুখপাত্র অপূর্ব জীবন বড়ুয়া।

বাংলাদেশ থেকে নারী জঙ্গিদের এপারে আনা এবং ‍ওপারে পাঠানোয় সাজিনার ভূমিকা ছিল বলেও এই পুলিশ কর্মকর্তার দাবি।

সাজিনা পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি তিন বছর আগে জেএমবিতে যোগ দেন।

গোয়েন্দারা বলছেন, স্বামী শাহানূরের দুটি ব্যাংক হিসেবের মাধ্যমে সাজিনা লেনদেন করতেন।

গত মাসে বর্ধমান বিস্ফোরণের পর তদন্তে এই দম্পতির নাম আসার পর বাসস্থল আসামের চোতালা গ্রাম থেকে তারা পালিয়ে যান।

শুক্রবার সাজিনার গুয়াহাটিতে আসার খবর পেয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দারা অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। তার সঙ্গে দুটি সন্তান ও আরও দুজন নারী ছিলেন।

গ্রামবাসী শাহানূরকে হাতুড়ে চিকিৎসক হিসেবে চেনেন। পুলিশ বলছে, চিকিৎসা পেশার আড়ালে আসলে জঙ্গি তৎপরতাই চালাতেন শাহানূর।

শাহানূরের ভাই জাকারিয়া আলীসহ পাঁচজনকে আগেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

বর্ধমান বিস্ফোরণের তদন্তের অংশ হিসেবে ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ বাংলাদেশেও আসতে চেয়েছে।

ভারতের গোয়েন্দাদের দাবি, বাংলাদেশে কোনঠাসা জেএমবি ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন ও কাশ্মিরের জঙ্গিদের সঙ্গে মিলে পশ্চিমবঙ্গে একটি জঙ্গি ঘাঁটি গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে।