বেইলি রোডের সেই স্কুলটি আবার হচ্ছে

সর্বোচ্চ আদালতের এক আদেশের পর রাজধানীর বেইলি রোডে উচ্ছেদ হওয়া বিদ্যালয়টির ভেঙে ফেলা ভবন পুনরায় নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Oct 2014, 11:19 AM
Updated : 30 Oct 2014, 11:30 AM

হাই কোর্টের এক আদেশে ওই জায়গাটি গার্লস গাইড কর্তৃপক্ষ দখল নিয়ে বিদ্যালয় ভবন ভেঙে ফেলার পর সাত মাস ধরে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করে আসছে শিক্ষার্থীরা।

‘সামাজিক শিক্ষাকেন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামে ওই বিদ্যালয়ে ৫২ জন শিক্ষার্থী এবং চার জন শিক্ষক রয়েছেন।

বিদ্যালয় ভবন ভেঙে দেওয়ার পর বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় হাই কোর্টের ওই রায়ের  বিরুদ্ধে আপিল করে।

শুনানির পর আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ গার্লস গাইড অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে দেওয়া হাই কোর্ট বিভাগের রায় স্থগিত করে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালত মন্ত্রণালয়ের আপিলের আবেদন গ্রহণ করে হাই কোর্টের রায় স্থগিত করেছেন।”

এর ফলে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই স্থানটিতে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম চলতে আর বাধা নেই, বলেন তিনি।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব সন্তোষ কুমার অধিকারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আপিল বিভাগের আদেশের পর এখন বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তা শিগগিরই নেওয়া হবে।

“দ্রুত বিদ্যালয়ের অবকাঠামোও নির্মাণ করা হবে।”

মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, বিদ্যালয়টি ভেঙে দেওয়ায় গার্লস গাইড কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ মামলা করারও চিন্তা করছেন তারা।

রমনা থানার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সামাজিক শিক্ষাকেন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ জায়গা দখল করে গালর্স গাইড।এতে ৫২ জন শিক্ষার্থী এবং চার জন শিক্ষক রয়েছেন।

যুগ্মসচিব সন্তোষ জানান, বাংলাদেশ গার্লস গাইড অ্যাসোসিয়েশন ১৯৬২ সালে সামাজিক শিক্ষাকেন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু বিদ্যালয়টি পরিচালনার দায়িত্ব নিতে ১৯৬৭ সালে সংস্থাটি তৎকালীন পৌরসভা ও শিক্ষা বিভাগের শরণাপন্ন হয়।

বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোকে শেখ মুজিবুর রহমান সরকারিকরণের ঘোষণা দেওয়ার পর ১৯৭৪ সালে অন্য বিদ্যালয়ের সঙ্গে জাতীয়করণ হয় এই বিদ্যালয়টির, সেই সঙ্গে বিদ্যালয়ের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিও সরকারের দখলে আসে।

১৯৮৯ সালে গার্লস গাইড তাদের জমি থেকে বিদ্যালয়টি সরিয়ে নিতে তৎকালীন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগে আবেদন দিয়ে জানায়, এই বিদ্যালয়ের কারণে তাদের সংস্থার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এরপরেও কোনও কাজ না হওয়ায় ২০০২ সালে সংস্থাটি সরকারকে চিঠি দিয়ে পল্টনের নিধু স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে সামাজিক শিক্ষাকেন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে একীভূতের দাবি জানায়।

এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ ২০০২ সালে বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের জন্য আদেশ জারি করে। কিন্তু স্থানীয় সুধী সমাজ বিদ্যালয়টি না সরানোর পক্ষে অবস্থান নিয়ে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন।

ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে হাই কোর্ট বিদ্যালয় স্থানান্তরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগের আদেশ বাতিল করে। তখন গার্লস গাইড কর্তৃপক্ষ ওই আদেশের বিরুদ্ধে রিট আবেদন করে।

ওই আবেদনে এ বছরের মার্চ মাসে হাই কোর্ট বিদ্যালয়টি স্থানান্তরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগের বাতিল হওয়া আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করে।

এরপর ওই আদেশের ভিত্তিতে গার্লস গাইড কর্তৃপক্ষ গত রোজার ঈদের ছুটিতে বিদ্যালয়টি ভেঙে দেয়।