ঝুঁকি নিয়ে বিদেশযাত্রা ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রীর তাগিদ

দালালকে টাকা দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তরুণদের বিদেশযাত্রা ঠেকাতে সরকারের কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়নে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগী হতে বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Oct 2014, 09:35 AM
Updated : 30 Oct 2014, 01:41 PM

বৃহস্পতিবার যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই মন্ত্রণালয় থেকে পদক্ষেপ নিলে মানুষ আত্মঘাতি পথে এগোবে না।”

আর এ জন্য যুব সমাজকে যথাযথভাবে প্রশিক্ষিত করে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সম্পৃক্ত করার ওপর জোর দেন তিনি।

“আমরা চাই, তারা মাদক ও জঙ্গিবাদ থেকে সরে আসবে। সুস্থ জীবন যাপন করবে। নিজেদের জীবনকে উন্নত করবে এবং পরিবারকে শান্তি দেবে।”

মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে প্রধানমন্ত্রী তার প্রারম্ভিক বক্তব্যেই এ বিষয়ে যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, “অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। তারা যেন অবৈধভাবে না যায়। আমরা তো দেশে ব্যবস্থা করছি। তিন/চার লাখ টাকা দালালকে দিয়ে বিদেশে না গিয়ে তো দেশেই ওই টাকা দিয়ে কাজ করতে পারে।”

সম্প্রতি থাইল্যান্ডের জঙ্গল থেকে অবৈধভাবে সেদেশে যাওয়া ৭৮ জনকে উদ্ধার করা হয়, যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশি। এছাড়া ট্রলারে করে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সময়েও অনেককে আটক করা হয়েছে গত কয়েক মাসে।

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পাচার হয়, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।এর বাইরে একটি বড় অংশ কাজের খোঁজে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেন।

চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ‘ট্রাফিকিং ইন পার্সন’ প্রতিবেদনে বলা হয়, মানবপাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশ বর্তমানে যে ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে তা যথেষ্ট নয়। পাচার প্রতিরোধে যে পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তারা কাজ করছেন, তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণও নেই।

অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা বন্ধ করতে যুবকদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস সৃষ্টির ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন শেখ হসিনা।

দেশের ৪৯০টি উপজেলায় ‘মিনি স্টেডিয়াম’ নির্মাণে প্রকল্প নেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম করা হবে। চারদিকে দেয়াল করে বন্ধ করা হবে না। একদিকে ড্রেসিং রুম আর অফিস থাকবে। বাকি তিনদিক খোলা থাকবে।”

এসব মিনি স্টেডিয়ামের তালিকা চূড়ান্ত করে দিয়েছেন বলেও বক্তব্যে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশে ক্রীড়া উন্নয়নে আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “উপজেলা ও জেলাভিত্তিক প্রতিযোগিতা যতো হবে, সুপ্ত মেধাগুলো ততো বিকশিত হবে।”

তিনি বলেন, ফুটবলে বাংলাদেশ ‘যথেষ্ট’ পিছিয়ে আছে। ফুটবলের উন্নয়নে ‘নজর দেওয়া’ উচিৎ।

যখনই যে দল বাংলাদেশ থেকে বাইরে খেলতে যাবে, তারা যেন সে দেশের আবহাওয়া ও পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সময় পায়- সেজন্য একটু আগে দলকে বিদেশে পাঠানোর পক্ষে মত দেন প্রধানমন্ত্রী।

বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সব ইভেন্টে অংশ না নিয়ে নির্দিষ্ট ইভেন্টে দক্ষতা অর্জন করার ওপরও তিনি গুরুত্ব দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কয়েকটা বিষয়ে ঠিক করে গুরুত্ব দিতে হবে। কোন কোন বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করতে হবে- তা ঠিক করতে হবে। সব বিষয়ে করলে হবে না।”

১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ক্ষমতায় থাককালে দেশের ১৪টি জেলায় আবাসিক যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ২৮টি জেলা কার্যালয় ও ৪২৬টি উপজেলা কার্যালয় স্থাপন করার কথাও তিনি মনে করিয়ে দেন।

“সেসময়, ১৮ শ’র বেশি যুব সংগঠনকে আর্থিক অনুদান, প্রায় ১৪ লাখ বেকার যুবক ও যুবমহিলাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। যার মধ্যে সাত লাখ ২৪ হাজার ১৩৯ জন আত্মকর্মী তৈরি হয়। প্রশিক্ষিত যুবক ও যুবমহিলাদের মধ্যে আমরা ৩৬৮ কোটি টাকা ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করি।”

বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সাফল্যের বিবরণও তিনি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সামনে তুলে ধরেন।

গত ২৭ অক্টোবর জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জয় এবং সেদিনই শ্রীলংকার বিরুদ্ধে প্রীতি ম্যাচে বাংলাদেশ ফুটবল দলের জয়ে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বিরেণ শিকদার। মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, সচিব নূর মোহাম্মদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।