রায়ের পর শাহবাগে আনন্দ মিছিল

যুদ্ধাপরাধে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর শাহবাগে আনন্দ মিছিল করেছেন গণজাগরণ মঞ্চসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Oct 2014, 11:46 AM
Updated : 29 Oct 2014, 06:55 PM

বুধবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার পরপরই জাতীয় যাদুঘরের সামনে থেকে এ আনন্দ মিছিল বের হয়। মিছিল নিয়ে শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড় ঘুরে আবার শাহবাগে ফিরে আসেন নেতাকর্মীরা।

আনন্দ মিছিল বের করার আগে রায়ের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, “ আজকে এ বিচারে আমরা আনন্দিত হয়েছি। কারণ  প্রত্যাশিত রায় পেয়েছি।

“এ সকল নরপশু মানুষ হত্যা করে বাংলাদেশে যে বিভীষিকাময় অবস্থা তৈরি করছিল, স্বাধীনতাকে দুঃসহ করেছিল-তার সর্বোচ্চ শাস্তি হয়েছে।”

দ্রুত সময়ের মধ্যে রায় কার্যকরের দাবি জানান তিনি।

ইমরান বলেন, “যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলেছিল। আর এই  দীর্ঘ সময় পরে আমাদের কাঙিক্ষত বিচার পেয়েছি, যে বিচার ন্যায়বিচারকে নিশ্চিত করেছে। আর তা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের জনগণের রাজপথে থাকা ও তাদের ত্যাগের কারণে।”

আপিলে দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীর সাজা কমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে ইমরান বলেছেন, “আমাদের একটি ব্যথার জায়গা রয়েছে। একজন নরপশু দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো প্রমাণিত হয়েছে ট্রাইব্যুনালে। তারপরেও সর্বোচ্চ শাস্তি আমরা পাইনি। সেই ব্যথা এখনও আমাদের রয়েছে।”

নিজামীর রায়ের প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামীর ডাকা তিন দিনের হরতাল প্রত্যাখ্যান করে বিকালে সংবাদ সম্মেলন করেন ইমরান।

তিনি বলেন, এই হরতাল প্রতিরোধে সারাদেশে গণজাগরণ মঞ্চ মিছিল কর্মসূচি পালন করবে।

হরতালবিরোধী মিছিলের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার, রবিবার ও সোমবার সকাল ১০টায় শাহবাগেও অবস্থানও থাকবে বলে জানান ইমরান।

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ ছয় দফা দাবি আদায়ে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত ‘জাগরণ যাত্রা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল গণজাগরণ মঞ্চ। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই ‘জাগরণ যাত্রা’ শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে।

এদিকে রায়ের পর দুপুরে আনন্দ মিছিল শেষে শাহবাগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন কামাল পাশা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন গণজাগরণ মঞ্চের অন্য অংশের নেতাকর্মীরা।

ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে কামাল পাশা  বলেন, “যুদ্ধাপরাধী নিজামীর রায ঘোষিত হয়েছে মৃত্যুদণ্ড।  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত সুপ্রতিষ্ঠিত ট্রাইব্যুনাল তা আজকের দিনে দিয়েছে।”

দ্রুত রায় বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে তিনি  বলেন, “আমরা কাগুজে রায় দেখেছি। আমরা আর কাগজে রায় দেখতে চাই না। বাস্তব রায় চাই। কাগজে- কলমে ফাঁসি চাই না, বাস্তবে ফাঁসি চাই। আমরা দেখতে চাই- নিজামীকে লটকে দেওয়া হয়েছে।”

এর আগে বুধবার বেলা ১১টার দিকে ইমরানের নেতৃত্বে জাতীয় জাদুঘরের দক্ষিণ পাশে অবস্থান নেয়  নেতাকর্মীরা। এ সময় বেশ কয়েকটি মাইকে নিজামীর ফাঁসির দাবিতে তাদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।

এ সময় কামাল পাশার নেতৃত্বে জাতীয় জাদুঘরের বাম পাশে অবস্থান নেয় মঞ্চের অন্য অংশ। তারাও বেশ কয়েকটি মাইকে নিজামীর ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দেয়।

এই দুই অংশের মাঝে জাসদ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও অপরাজেয় বাংলা নামে একটি সংগঠনের সদস্যরা একাত্তরে আল-বদর প্রধান নিজামীর ফাঁসি চেয়ে বিক্ষোভ করে।

গত বছর ট্রাইব্যুনালের রায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধী জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ ছাত্র জনতার সমাবেশ থেকে গড়ে ওঠে গণজাগরণ মঞ্চ।  তাদের আন্দোলনের মুখে আইন সংশোধন করে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষেরও আপিলের সুযোগ দেওয়া হয়। আপিলের রায়ে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড হওয়ার পর তা কার্যকর করা হয়।  

নিজামীর ফাঁসির রায়ে আনন্দ মিছিল করেছে ছাত্রলীগও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে মিছিলটি বের হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে চারুকলা অনুষদের সামনে সমাবেশ করে তারা।