পদ্মায় বিশ্ব ব্যাংককে ঠেকাতে ‘ইন্ধন’ ছিল: হাসিনা

পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থ আটকাতে ‘কোন কোন মহলের’ ইন্ধন ছিল বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2014, 09:47 AM
Updated : 23 Oct 2014, 11:19 AM

তিনি বলেছেন, দশম সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সহিংস কর্মকাণ্ড এবং ‘ওই মহলের’ তৎপরতার উদ্দেশ্য ছিল একই।

বৃহস্পতিবার রেল মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে পদ্মাসেতু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রেলের জন্য খরচটাও বেড়ে গিয়েছিল, খরচ বাড়ার কারণে বিশ্ব ব্যাংক যখন এগিয়ে আসল, তাদের সহযোগিতা নিতে গেলাম। পরবর্তীতে একটা সময় দুর্নীতি টুর্নীতি হাবি-জাবি বলে-টলে চেষ্টা করল এটাকে ঠেকাতে।”

দুর্নীতির ‘ষড়যন্ত্রের’ কথা বলে বিশ্ব ব্যাংক প্রথম পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করে। অনেক নাটকীয়তার পর গত বছর জানুয়ারিতে ওই প্রকল্পে তাদের অর্থ না নেয়ার সিদ্ধান্ত জানায় সরকার।

এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এটা অন্য কারণে, প্রকৃত দুর্নীতি কোনো কিছুই হয়নি। কেউ বের করতে পারেনি।

“কিন্তু বিষয়টা ছিল একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে। ঠিক যে উদ্দেশ্য নিয়ে বিএনপি গাড়ি পোড়াল বা রেল পোড়াল, ঠিক সেই রকমই উদ্দেশ্যে কোন কোন মহল থেকে এ ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। আমরা সেটা চ্যালেঞ্জ দিয়েছি, নিজের অর্থেই পদ্মা সেতু করবো।”

রেল মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে রেলের উন্নয়নে নিজের ভাবনা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো পদ্ধতি ভেঙে রেলকে উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম চারটি অঞ্চলে ভাগ করলে আরো উন্নত সেবা দেয়া সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।

“আমাদের দেশের রেলের যাত্রা শুরু ব্রিটিশ আমল থেকে। সেজন্যই এটাকে পূর্বাঞ্চল-পশ্চিমাঞ্চল এভাবে করা হয়েছে। আমি মনে করি এখন বাংলাদেশের কথা চিন্তা করে এটাকে নতুনভাবে ডিমারকেশন করা দরকার এবং আরো কয়েকটা অঞ্চলে ভাগ করা দরকার।

“বাংলাদেশের মানচিত্র অনুযায়ী উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম এই চারটি ভাগে ভাগ করে কার্যক্রম চালালে রেল আরো বেশি সেবা দিতে পারবে বলে আমি মনে করি,” উপস্থিত রেলমন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন তিনি।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলে রেল ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরু হয়েছে। কাজেই দক্ষিণাঞ্চলে কিন্তু রেল যাচ্ছে। পর্যায়ক্রমিকভাবে এটা আমরা আরো দক্ষিণে নিয়ে যাবো।”

দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালী ও বরগুনায় পায়রা বন্দর, নৌ ঘাঁটি, জাহাজ নির্মাণ কারখানাসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো ও শিল্প গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

বিনিয়োগ টানতে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য রেলপথটাকে আরো উন্নত করা, যা জনগণের যোগাযোগকে আরো সুন্দর করবে, পাশাপাশি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উৎসাহিত করছি।

“বিনিয়োগ করতে গেলে প্রথমে দেখে-পণ্যটা পরিবহন হবে কীভাবে। পণ্য পরিবহন ও রপ্তানি করতে গেলে সবার আগে দেখবে বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ ভালো আছে কি না।”

দেশের সাত বিভাগে সাতটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরো ১৩টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

“এই বাংলাদেশের উন্নয়ন করা খুব কঠিন কাজ না। এটা আমরা করতে পারবো। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে, এই ধারা আমাদের বজায় রাখতে হবে। আর বজায় রাখতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন দরকার।”

রেল কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “যোগাযোগের ক্ষেত্রে রেলকে আমি সব থেকে গুরুত্ব দিই। আমি মনে করি আপনাদের জন্য একটা মেসেজ। আপনারা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন।”

আগামীতে রেলকে আরো সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখন থেকে যত রেললাইনের ডিজাইন হবে সব আমরা ডুয়েল গেজে করব। শুরুতেই আমাদের করে ফেলা ভাল যাতে ভবিষ্যতে কাজে লাগে।

“আমরা মনে করছি, বাংলাদেশের রেলওয়েটা সবটা মিলে ডুয়েল গেজে চলে যেতে পারি। কারণ মাথায় রাখতে হবে- আমরা এখানেই পড়ে থাকবো না। আমাদের অর্থনীতি আরো এগোবে। আমরা আরো উন্নত হব।”

জামালপুর ও গাইবান্ধার মধ্যে একটি বহুমুখী টানেল নির্মাণের পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “ওই টানেল রেলপথসহ বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী হবে।”

একনেকে পাশ হওয়া চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণে গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

এ প্রকল্পকে মিটার গেজ থেকে ডুয়েল গেজে রূপান্তরের জন্য সংশোধনী আনতে এবং ঢাকার আশপাশের জেলাশহরগুলোর সঙ্গে কমিউটার ট্রেন সার্ভিস বাড়ানোর নির্দেশ দেন তিনি।

এসময় শেখ হাসিনা রেলের উন্নয়নে গত সাড়ে পাঁচ বছরে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন।

ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০১১-২০১৫) রেলের জন্য ১২১০ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ, ৫০৬ কিলোমিটার রেলপথ ডাবল লাইনে উন্নীতকরণ এবং ১৫৩৫ কিলোমিটার রেলপথ সংস্কারের কথা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ এবং রেলের মাস্টার প্ল্যান কার্যকর করতে নির্দেশ দেন।

রেলের নিরাপত্তা বাড়াতে আরো নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ এবং কমিউনিটি পুলিশ গঠনেরও পরামর্শ দেন তিনি।

এছাড়া রেলের জমি উদ্ধার এবং রেলপথকে নিরাপদ করতেও নির্দেশ দেন তিনি।

“আপনারা রেলের জায়গা দখলমুক্ত যেরকম শুরু করেছেন, দখলমুক্ত করতে হবে। আর এই রেললাইনের পাশে বস্তি করে অ্যাক্সিডেন্ট ঘটানো, রেল স্পিডে চলতে পারে না; এটা কিছু উদ্যোগ আপনারা নিয়েছিলেন, এটা কিন্তু আপনাদের করতে হবে,” বলেন তিনি।

দখল ও দুর্ঘটনা ঠেকাতে রেললাইনের দুই পাশে তারকাঁটার বেড়া দেয়ারও নির্দেশ দেন তিনি।