‘কেউ যেন আর সাক্ষী না হয়’

সর্বোচ্চ আদালত যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়ায় হতাশ মামলার সাক্ষীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Sept 2014, 02:22 PM
Updated : 17 Sept 2014, 02:22 PM

মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে সাঈদীর আপিল শুনানির পর বুধবার আপিল বিভাগ সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়।

রায়ের পর মামলার অন্যতম সাক্ষী আব্দুল হালিম বাবুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঈদীর কুকর্মগুলো তুলে ধরলাম, কিন্তু এতে কি লাভ হলো? আইনের ফাঁক গলে সে বেরিয়ে গেল।

“এখন মানুষকে একটাই কথা বলতে চাই, কেউ যেন আর কোনোদিন রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে কোনো মামলায় সাক্ষ্য না দেয়। সাক্ষীদের অনেকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে তারা সবাই হতাশ।”

সরকার জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

“মন্ত্রী-মিনিস্টারদের কি? তারা তো পুলিশের নিরাপত্তা বলয়ে এসি রুমে বসে থাকেন। আমরা যারা সাক্ষী দিয়েছি, তাদের বাড়ীতে ঢুকে হত্যা করে যায়, তখন তো সরকারের দেখা পাওয়া যায় না।”

আপিল বিভাগের রায় শুনে কেঁদে ফেলেন গত বছরের ডিসেম্বর দুবৃত্তের হামলায় নিহত সাঈদীর মামলার অন্যতম সাক্ষী মোস্তফা হাওলাদারের ছেলে রিয়াজুল।

তিনি বলেন, “মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার কারণে আমার বাবাকে হত্যা করা হলো, অথচ নরপশুটার মৃত্যুদণ্ড হলো না।”

মামলার আরেক সাক্ষী মিজানুর রহমান তালুকদার বলেন, “মৃত্যুদণ্ড হলে খুশি হতাম। কিন্তু আদালত অন্তত তাকে সাজা দিয়েছে এটাই এখন সান্ত্বনা। সে (সাঈদী) যে ‘আল্লামা’ নামধারী একটা ভণ্ড, এটা মানুষ জানতে পেরেছে।”

আপিল বিভাগের রায়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ডা. এম এ হাসান।

একইসঙ্গে তিনি আন্তর্জাতিক মানের বিচারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য উপস্থাপনে সাক্ষীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করারও আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “একাত্তরে যারা একবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারা দ্বিতীয়বার সাক্ষ্য দিতে এসে সুরক্ষা পাচ্ছে না। তাদেরকে ব্যবহার করে একটি শ্রেণি লাভবান হবে, আর সাক্ষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা হতে পারে না।”