ঢাকাগামী বাস চলছে না রংপুরে, দুর্ভোগে যাত্রীরা

বিভিন্ন দাবিতে জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকা ধর্মঘটের কারণে রংপুর জেলা থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

রংপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Sept 2014, 05:43 AM
Updated : 16 Sept 2014, 07:53 AM

মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে। তবে ঢাকার পথে পণ্যবাহী ট্রাক এবং রংপুর শহরের ওপর দিয়ে উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী সব বাস চলাচল করছে।

জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এম এ মজিদ সোমবার রাতে রংপুর শহরের সাতমাথায় ইউনিয়নের শাখা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ধর্মঘটের ঘোষণা দেন।

সংগঠনের কার্যালয়ে হামলা, যানবাহন ভাংচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় জড়িতরা গ্রেপ্তার না হওয়া এবং ক্ষতিপূরণ না দেওয়ায় এই ধর্মঘট ডেকেছে মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন।

ইউনিয়ন নেতা মজিদ বলেন, “ধর্মঘট চলাকালে দিবা ও নৈশ কোচ ঢাকায় যাবে না, রংপুরে আসবেও না। তবে আন্তঃজেলা সকল যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।”

শ্রমিকদের দাবি নিয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে প্রশাসনের বৈঠক হয়। বৈঠকে ক্ষতিগ্রস্ত যানবাহনের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য মালিক সমিতিকে বলা হয়।

সে অনুযায়ী জেলা মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা সোমবার রংপুরে আসেন।

মজিদ বলেন, “রাতে আমরা শ্রমিক নেতারা তার সঙ্গে দেখা করে ক্ষতিপূরণ চাইলে তিনি না করে দেন। আমরা ধর্মঘটে যাওয়ার কথা বললে তিনি আমাদের ওপর গুলি চালানোর জন্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন।”

এর প্রতিবাদের প্রথম পর্যায়ে ঢাকাগামী বাস ধর্মঘট ডাকা হয়েছে, পরে রংপুর বিভাগের আট জেলায় সব যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দেন এই শ্রমিক নেতা। 

এ বিষয়ে মসিউর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সোমবার রাতে বলেছিলেন, “শ্রমিকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দেলের জের ধরে হামলা হয়েছে, অথচ দায়ী করা হচ্ছে মালিক সমিতিকে। এরপরও আমি দেড় লাখ টাকা দিতে চেয়েছি, কিন্তু তারা ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করলে আমি না করে দিয়েছি।”

গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়ার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, “কথায় কথায় ধর্মঘট ডেকে মানুষকে দুর্ভোগে ফেলার অধিকার কারো নেই। ধর্মঘটের নামে যারা অরাজকতা সৃষ্টি করবে তাদের কঠোর হাতে দমন করার জন্য জেলা প্রশাসক পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছিলাম।”

এদিকে আকস্মিক ধর্মঘট ডাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।

নগরীর কামারপাড়া ঢাকাগামী বাসস্ট্যান্ডে বাসের অপেক্ষায় থাকা আকরামুল হক বলেন, “চাকরির ইন্টারভিউ দিতে বেলা সাড়ে ১১টার বাসে ঢাকা যাব বলে রোববার টিকেট করেছি। স্ট্যান্ডে এসে জানতে পারলাম বাস ধর্মঘট। বুধবার সকালে লিখিত পরীক্ষা। এখন কিভাবে যাবো ভেবে পাচ্ছি না”।  

অসুস্থ মাকে নিয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে যাবেন কলেজ শিক্ষক তাহমিদুল আলম। সকালে বাসস্ট্যান্ডে এসে জানতে পারেন বাস বন্ধ। পরে মাইক্রোবাস ভাড়া করে মাকে নিয়ে রাজধানীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন বলে জানান তিনি।

টিআর ট্রাভেলসের কর্মচারী বোমবাট রায় বলেন, “যারা অগ্রিম টিকেট করেছেন তাদের টিকেট ফেরত দেওয়া হচ্ছে।”

গত ৬ সেপ্টেম্বর শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে সভা করছিলেন।

শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের অভিযোগ, সভা চলাকালীন রাত সাড়ে ৮টার দিকে মালিক সমিতির চেইন মাষ্টাররা অতর্কিতভাবে ঢুকে তাদের ওপর হামলা চালায়। তারা শ্রমিক কার্যালয়ের সামনে রাখা ইউনিয়নের নেতাদের ১১টি মোটর সাইকেল ভাংচুর করে এবং আব্দুল মজিদের প্রাইভেটকার আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।

এই ঘটনার প্রতিবাদে ৭ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে রংপুর বিভাগের আট জেলায় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছিল শ্রমিক ইউনিয়ন। পরে ওই দিন দুপুরে প্রশাসন দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেওয়ায় বিকালে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।