আলীমের দাফন সোমবার

একাত্তরে গণহত্যার দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া আব্দুল আলীমের দাফন সোমবার হবে বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

নিজস্ব প্রতিবদেকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2014, 08:21 AM
Updated : 31 August 2014, 08:21 AM

আলীমের ছেলে ফয়সাল আলীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, জয়পুরহাটে তার বাবাকে সমাহিত করা হবে।

তিনি বলেন, “রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় বাবার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ বুঝে পেলে বাদ আসর বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি সংলগ্ন মসজিদে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

“সোমবার জয়পুরহাটে দলীয় কর্মীদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে সমাহিত করা হবে।”

আলীমের রায়ে আদালত বলেছিল, আলীমের ‘জঘন্য অপরাধের’ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হলেও বয়স ও স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

গত বছরের ৯ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর থেকে ৮৪ বছরের আলীম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন ওয়ার্ডে ছিলেন।

সেখানেই শনিবার বেলা সোয়া ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

এর আগে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে মঙ্গলবার তাকে আইসিইউতে নিয়ে ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়। এই কয়দিন তিনি লাইফ সাপোর্টেই ছিলেন।

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আলীমের আপিল সুপ্রিম কোর্টে রয়েছে। এর আগে ট্রাইব্যুনালে বিচারধীন অবস্থায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ কে এম ইউসুফের মৃত্যু হলে তার মামলার সেখানেই সমাপ্তি ঘটে।

একাত্তরে মুসলিম লীগ নেতা আলীমের বিরুদ্ধে আনা ১৭টি অভিযোগের মধ্যে জয়পুরহাটে সংঘটিত গণহত্যা, হত্যা, লুটপাটের নয়টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়।

১৯৩০ সালের ১ নভেম্বর জয়পুরহাটে জন্ম আলীমের। তার বাবা আবদুল ওয়াহেদ ছিলেন জয়পুরহাট শহরের থানা রোডের ইসলামিয়া রাইস মিলের মালিক। আদি বসত পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায় হলেও দেশবিভাগের পর ১৯৫০-৫১ সালে তাদের পুরো পরিবার তখনকার পূর্ব বাংলার (পাকিস্তান) জয়পুরহাটে চলে আসে।

আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেয়ার পর আইন পেশায় যোগ দেন আলীম। ১৯৫৮ সালে মুসলিম লীগে যোগ দেয়ার চার বছরের মাথায় দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি।

রায়ের দিন আদালতে নেয়া হচ্ছে আব্দুল আলীমকে

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতার সংগ্রাম যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, আলীম তখন কনভেনশন মুসলিম লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা এবং বগুড়া জেলা কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে।

সে সময় তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেন এবং পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য মহুকুমা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে রাজাকার বাহিনী গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দালাল আইনে একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছিল আলীমের বিরুদ্ধে।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর এবং ১৯৭৭ সালে দুই দফা জয়পুরহাট পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আলীম। ১৯৭৯, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে তিনি বিএনপির টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

জিয়াউর রহমানের সরকারে প্রথমে বস্ত্রমন্ত্রী এবং পরে যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন আলীম।