এখন ঘরে ফেরা

ঈদের আগে এক/দুদিন অফিস এবং তার আগে দুদিন সরকারি ছুটি থাকায় বৃহস্পতিবারই ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে ঘরমুখো মানুষ।

মঈনুল হক চৌধুরী কামাল তালুকদার ও গোলাম মুজতবা ধ্রুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 July 2014, 03:57 PM
Updated : 24 July 2014, 04:15 PM

সকাল থেকেই রাজধানীর বাস, ট্রেন ও লঞ্চ স্টেশনগুলোতে যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়। দুপুরে ভিড় কম থাকলেও  সন্ধ্যার পর থেকে যাত্রীদের উপস্থিতি বাড়ার পাশাপাশি টার্মিনাল সংলগ্ন এলাকায় যানজটও হয়।

এদিনও আগাম টিকিটের জন্য বাস ও ট্রেন স্টেশনে দেখা গেছে অনেকের আনাগোনা।

ঈদ উপলক্ষে ৫০ লাখের বেশি মানুষ অর্থাৎ অর্ধেক মানুষ রাজধানী ছাড়েন বলে ধারণা ঢাকা মহানগর পুলিশের।

এদিন স্টেশনগুলোতে এখনো যাত্রীদের ভিড় ততটা না হলেও শনি-রোববারের দিকে তা বাড়তে শুরু করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাস কাউন্টারের কর্মীরা জানান, ঈদ উপলক্ষে ঢাকা ছাড়া শুরু হলেও  আগাম টিকিটের যাত্রীরাই বেশি বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন।

কর্মজীবীদের অনেকে রোববার অফিস শেষে বাড়ি ফিরবেন বলে মনে করছেন তারা।

তবে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ধারণা,  শুক্র ও শনিবারই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করবেন।

বাস টার্মিনালে বাড়ছে মানুষ

গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়ে দেশের সব রুটে। বিকালের দিকে সেখানে তেমন ভিড় চোখে পড়েনি।

বিআরটিসির বাসচালক মিজানুর রহমান জানান,  গত তিন দিনে রাস্তায় কোথাও তেমন যানজটে পড়েননি। তবে ঢাকা থেকে বের হতেই বেশি সময় লাগে।

“যাত্রীর ভিড় এখনো সেভাবে শুরু হয়নি। তবে আগামী দুই/একদিনের মধ্যেই চাপ বেড়ে যাবে,” বলেন ঢাকা-আগৈলঝাড়া রুটের এই গাড়িচালক।

এরই মধ্যে ২৩ থেকে ২৮ জুলাইয়ের আগাম টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে বলে জানান ঢাকা-বগুড়া-নওগাঁ-রংপুর রুটের পরিবহন টিআর ট্রাভেলসের গাবতলী কাউন্টারের ব্যবস্থাপক আরিফ।

তিনি বলেন, “সপ্তাহের শেষ কার্য‌্দিবস গেল আজ (বৃহস্পতিবার)। এখন ঢাকা ছাড়তে শুরু করছে মানুষ। স্টেশনে তেমন ভিড় না থাকলেও শনি-রোববার থেকে শুরু হবে আসল ভিড়।”

গাবতলী টার্মিনালের বাস-ট্রাক মালিক সমিতির নেতা নুরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা ফাঁকা হতে শুরু করেছে মাত্র। এখনো যাত্রীদের চাপ শুরু হয়নি। রাস্তাঘাটেও যানজটের খবর কম আসছে। মানুষের দুর্ভোগও কম।

“তবে কয়েকদিন পরে ভিড় বাড়বে। বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ এখনো শুনিনি। এ ধরনের অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে আমরাও উদ্যোগ নেব।”

রাজধানীর গাবতলীর একাধিক বাস কাউন্টারের কর্মীরা জানান, ঘরমুখো মানুষের একটি বড় অংশ এখনো টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি।

তাই শেষ মুহূর্তে লোকাল গাড়িতে চাপ বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা।

নওগাঁ রুটের নওগাঁ ট্রাভেলসের টিকিট মাস্টার ইয়াসির বলেন, এখনো তাদের বাসে তেমন ভিড় হচ্ছে না। তবে শনি-রোববারে লোকাল গাড়িতেও ভিড় বাড়বে।

“সবাই ভালো গাড়ির পেছনে ছুটছে। ওখানে টিকিট নেই। আর আমরা যাত্রী পাচ্ছি না। আশা করি ২৭ তারিখ থেকে ভালো যাত্রী পাবো।”

এদিকে ঈদে যানবাহনে অতিরিক্ত চাপ ঠেকাতে সরকারের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। স্টেশনগুলোতে চলছে তদারকি।

ঈদ উপলক্ষে কোথাও যাতে শৃঙ্খলা ভঙ্গ না হয় সেজন্য মোবাইল মনিটরিং টিম, জেলা প্রশাসন , হাইওয়ে পুলিশ, র‌্যাব ও জেলা পুলিশসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা যৌথভাবে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন যোগাযোগমন্ত্রী।

এদিকে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে এখনো প্রস্তুত নয় মহাসড়কগুলো। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ইট-বালু ফেলে চলছে খানা-খন্দ ভরাটের কাজ, সামান্য বৃষ্টিতেই যা আবার আগের অবস্থায় চলে যাচ্ছে। তবে এ সময়ে সড়ক যান চলাচলের উপযোগী রাখার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।

এ বিষয়ে যোগাযোমন্ত্রী বলেন, “এসময় বৃষ্টি হচ্ছে। চ্যালেঞ্জ হলেও এটি অতিক্রম করতে হবে। যেখানে সমস্যা হচ্ছে, সেখানেই মেরামত করা হচ্ছে। জনগণের জন্য সড়ক ‘ই্উজেবল’ করে রাখাই এখন মূল কাজ।”

 

আগাম টিকিটের ট্রেন যাত্রীদের যাত্রা শুরু

 ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের আগাম টিকিট পাওয়া যাত্রীরা ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন। গত ২০ জুলাই অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রথম দিন যেসব যাত্রী টিকেট পেয়েছেন তারা কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বৃহস্পতিবার নির্ধারিত দিনে যার যার গন্তব্যে যাত্রা করেছেন।

বেলা দেড়টার দিকে কমলাপুরে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় চোখে না পড়লেও আগাম টিকেট বিক্রির শেষ দিনে কাউন্টারগুলোয় যথারীতি ছিল যাত্রীদের দীর্ঘ সারি। তবে বিকাল থেকে স্টেশনে ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকে।

শেষ দিনে বিক্রি হয়েছে ২৮ জুলাইয়ের টিকেট। এছাড়া গত সোম, মঙ্গল ও বুধবার যথাক্রমে ২৫, ২৬ ও ২৭ জুলাইয়ের টিকেট দেয়া হয়েছে।

আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের শিক্ষক মো. ইজারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাবনায় পরিবারের সঙ্গে ঈদ করবো বলে ২০ তারিখই সিল্কসিটি ট্রেনের অগ্রিম টিকেট কিনেছিলাম। ট্রেন ছাড়বে আড়াইটায়। স্টেশনে ভিড় হতে পারে তাই একঘণ্টা আগে এসেছি।” 

কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. খায়রুল বাশার জানান, ঈদে যাত্রীরা ট্রেনে বাড়ি যেতে শুরু করেছে। যাত্রীদের ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করতে রেল কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা ও চেষ্টার অভাব নেই।

আগামী ২৬ জুলাই ঈদের পর সাতদিন পর্যন্ত ঢাকা থেকে পার্বতীপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও খুলনার উদ্দেশ্যে তিনটি বাড়তি ট্রেন চলবে বলে জানান তিনি।

রেল কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী, ঈদের সময় এবার বিভিন্ন গন্তব্যের ট্রেনে ১৬৬টি অতিরিক্ত কোচ এবং অতিরিক্ত লোকোমোটিভ সংযোজন করা হবে।

ট্রেন ও যাত্রীদের বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবারও কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ট্রেন যেসব স্টেশনে যাতায়াত করবে সেখানকার প্রহরীদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

“অনেক সময় দেখা যায়, বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন থামার আগে বা ট্রেন থামলে ট্রেনে ইট পাটকেল ছোড়া হয়। এটি যেন না হয় সেজন্যই এ উদ্যোগ।”

ঈদ উপলক্ষে কমলাপুর স্টেশনেও নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

কমলাপুর থানার ওসি আবদুল মজিদ বলেন, “টিকেট কালোবাজারি এবং স্টেশনে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে স্টেশনে সবসময় পুলিশ মোতায়েন থাকবে।”

যাত্রী পরিবহন নির্বিঘ্ন করতে রেলকর্মীদের ঈদের ছুটি আগেই বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

প্রচণ্ড ভিড় না হলেও সদরঘাটে বাড়তি যাত্রী

ঈদের দুই/এক দিন আগের মতো প্রচণ্ড ভিড় না হলে বেশ সংখ্যায় যাত্রী চোখে পড়েছে সদরঘাটে।

সকালে যাত্রীতে ঠাসা থাকলেও দুপুরে যাত্রীর চাপ কমে যায়। আবার বেলা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীর চাপও বাড়ে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ)পরিবহন পরিদর্শক মো. সোলায়মান বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে যাত্রীদের প্রচণ্ড চাপ ছিল। তবে দুপুরে যাত্রী সংখ্যা কমে যায়। বিকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের চাপ ফের বাড়তে শুরু করে।

দিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর‌্যন্ত সদরঘাট থেকে ৩৬টি লঞ্চ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। আর রাতে ছাড়ার অপেক্ষায় রয়েছে আরো ২৬টি লঞ্চ।

বুধবার সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায় ৬৫টি লঞ্চ।

টিপু লঞ্চের ব্যবস্থাপক ফারুক হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বৃহস্পতিবার তাদের চারটি লঞ্চ সদরঘাট থেকে হাতিয়ার দিকে ছেড়ে যায়। যাত্রীর সংখ্যা বেশ ছিল।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন সংস্থার (বিআইডাব্লিউটিসি) সহকারী মহাব্যবস্থাপক শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ বলেন, প্রতিদিন তিনটি সরকারি জাহাজ (স্টিমার) সদরঘাট থেকে দক্ষিণাঞ্চলের উদ্দেশে ছাড়ছে। তবে সরকারি জাহাজে যাত্রী সংখ্যা তেমন পাওয়া যাচ্ছে না।

মাহমুদুল হাসান নামে একজন সরকারী চাকরিজীবীর সঙ্গে কথা হয় সদরঘাটে। দুই ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে বরিশালের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “রোববারের ছুটি নিয়েছি। আজও তো অফিস করলাম। তাই যাওয়ার কষ্ট থেকে বেঁচে গেলাম।”

বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম-পরিচালক সাইফুল ইসলাম খান বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা ও হয়রানি ঠেকাতে প্রতিটি ঘাটে র‌্যাব, পুলিশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত রয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে কোনো লঞ্চ যাতে ছেড়ে না যায় সেদিকে কঠোর নজরদারি রয়েছে।