রমনার বোমা মামলায় ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড

এক যুগের বেশি সময় আগে রাজধানীর রমনা বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় রায়ে হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নানসহ আটজনের মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2014, 06:32 AM
Updated : 23 June 2014, 05:29 PM

সোমবার ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিনের দেয়া এই রায়ে সন্তোষ জানিয়েছে বর্ষরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন ছায়ানট। অন্যদিকে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন আসামিরা।

রায়ে মুফতি হান্নান ছাড়া মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিতরা হলেন- আকবর হোসেন, আরিফ হাসান সুমন, মো. তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, আবদুল হাই ও শফিকুর রহমান।

যাবজ্জীবন দণ্ড দেয়া হয়েছে শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল, সাব্বির, শেখ ফরিদ, আব্দুর রউফ, ইয়াহিয়া ও আবু তাহেরকে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আটজনের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদেরও একই অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে, অনাদায়ে অতিরিক্ত এক বছর কারাভোগ করতে হবে।

১৪ আসামির পাঁচজন পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, আবু বকর, শফিকুর রহমান ও আবদুল হাই।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হান্নান, আকবর ও আরিফ বোমা হামলার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। রায়ের সময় এই তিনজনসহ কারাগারে থাকা নয় আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়।

২০০১ সালে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বোমা মেরে হত্যা করা হয় ১০ জনকে। হুজির শীর্ষ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ১৪ জঙ্গিকে এ মামলার আসামি করা হয়েছিল।

এই বছর রমনায় ছায়ানটের বর্ষবরণের অনুষ্ঠান

মামলার বিবরণে বলা হয়, পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান ‘ইসলামবিরোধী’ বিবেচনা করে ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালানো হয়। হামলায় ঘটনাস্থলেই নয়জনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে মারা যান একজন।

এ ঘটনায় নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র চন্দ ওই দিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন।

হত্যামামলায় রায় ঘোষণা হলেও বিস্ফোরক মামলাটি ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।

আলোচিত এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা বারবার পরিবর্তন, সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল, বারবার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও তদন্ত কর্মকর্তাদের আদালতে সাক্ষ্য দিতে না আসা ইত্যাদি কারণে মামলার বিচার শুরু হতে বিলম্ব হয়।

ঘটনার প্রায় আট বছর পর দুই মামলায় ১৪ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

এর আগে থানা, ডিবি পুলিশ মামলার তদন্ত করে। মামলার অষ্টম তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফ ২০০৮ সালের ৩০ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

বোমা বিস্ফোরণের সময়ের চিত্র

দুটি মামলারই অভিযোগপত্র একসঙ্গে দাখিল করা হয়। পরে বিচারের জন্য মামলা দুটি ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে যায়। ওই আদালতে একই বছরের ১৬ এপ্রিল পৃথকভাবে মামলা দুটিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করা হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের সিদ্ধান্তে হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩-এ এবং বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ পাঠানো হয়।

দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী, ১৩৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার শেষ না হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী মামলা দায়রা আদালতে ফেরত যায়। ফলে হত্যা মামলাটি আবার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা আদালতে স্থানান্তর হয়।

গত বছরের ২৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।

এরপর গত ১০ নভেম্বর আসামি আত্মপক্ষ সমর্থন করে ফৌজদারি কার্য়বিধির ৩৪২ ধারায় জবানবন্দি দেন।

মামলার নথিতে ৮৪ জন সাক্ষীর নাম উল্লেখ থাকলেও রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৬১ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।