রোববার বিকালে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মাশফিকুল ইসলামের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন এই ঘটনায় গ্রেপ্তার নগরীর মাঝিরঘাটের আবাসিক হোটেল আকাশের কর্মচারী মো. মনির।
গত ৪ মে নগরীর সিআরবি এলাকা থেকে মায়ার লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ওই দিন নগরী থেকে অর্ধশত কিলোমিটার দূরে মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ বাজারে হাবিব নামে একজনের লাশ পাওয়া যায়।
হাবিবের লাশের সূত্র ধরেই মায়া হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন হয় বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার শাহ আব্দুর রউফ।
হাবিব যৌনকর্মীদের দালাল হিসেবে কাজ করতেন বলে প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। তার লাশের সূত্র ধরে শনিবার বিকালে মনিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। একদিন বাদে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তি দেন।
পুলিশ কর্মকর্তা রউফ বলেন, হাবিব আকাশ হোটেলে ঢাকা থেকে মেয়ে এনে সরবরাহ করত। গত ৩ মে বিকালে তিনি মায়াকে ওই হোটেলে আনেন।
“প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, হোটেল মালিক মো. বাহারের বিকৃত যৌন চাহিদা পূরণ না করায় মায়া ও হাবিবকে হত্যা করা হয়,” বলেন তিনি।
জবানবন্দিতে মনির বলেন, বিষয়টি নিয়ে হৈ চৈয়ের হুমকি দিলে ওই রাতে হোটেলে অবস্থানকারী স্থানীয় সন্ত্রাসী বাচার কথায় মায়াকে প্রথম মারা হয়। এরপর হাবিবকেও মেরে ফেলা হয়।
কোতোয়ালি থানার এসআই কামরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেয়েটি ও হাবিব হোটেল মালিককে দেখা নেয়ার হুমকি দিলে বাহার ও বাচা তাদের প্রাণে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে।”
জবানবন্দিতে আকাশ হোটেলের কর্মচারী মনির এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত বেলাল, বাবলু, জহির, খোরশেদ নামে চারজনের নামও বলেন।
মনির স্বীকার করেন, ওই সময় তিনি মায়ার পা চেপে ধরেছিলেন।
মায়াকে হত্যার পর বাচাসহ অন্যরা ২১৪ নম্বর কক্ষে আটকে রাখা হাবিবকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে এবং বিছানার চাদর পেঁচিয়ে মারা হয় বলে মনির দাবি করেছেন।
এর পর লাশ দুটি গাড়িতে তুলে প্রথমে মায়ার লাশ সিআরবি এলাকায় এবং পরে হাবিবের লাশ মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জে ফেলে আসা হয় বলে পুলিশ কর্মকর্তা রউফ জানান।
হাবিবের লাশ উদ্ধারের পর তার কথিত স্ত্রী তা সনাক্ত করেন।
এরপর গত ১০ মে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ নগর পুলিশের সহায়তায় আকাশ হোটেলে অভিযান চালিয়ে বাচা, হোটেল মালিক বাহার, হোটেল ব্যবস্থাপক গোলাম মাওলা বাবলু ও খোরশেদ, হোটেল কর্মচারী জহির উদ্দিন, হোটেলের দারোয়ান স্বপন চন্দ্র দাশ, আবুল কালামকে গ্রেপ্তার করে।
এদের মধ্যে স্বপন, বাবলু, আবুল কালাম ও খোরশেদ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
পুলিশ কর্মকর্তা রউফ বলেন, “এই চার জনের জবানবন্দিতে হাবিব হত্যার ঘটনাটি উঠে এলেও মায়াকে হত্যার বিষয়টি আসেনি। মনিরকে গ্রেপ্তারের পর মেয়েটির হত্যার রহস্য বের হয়ে আসে।”
এদিকে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ গ্রেপ্তারকৃতদের হত্যা মামলায় আসামি করলেও হোটেল মালিক বাহারকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখায়।
তবে মনিরের জবানবন্দি ও মেয়েটির হত্যার ঘটনায় বাহারকে আসামি করা হবে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা রউফ।