`সমন্বয়হীনতায় ধ্বংসের মুখে হালদা'

কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতার কারণে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র চট্টগ্রামের হালদা নদী ধ্বংসের হুমকির মুখে রয়েছে বলে বলে মনে করছে হালদা নদী রক্ষা কমিটি।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 May 2014, 02:05 PM
Updated : 28 May 2014, 02:05 PM

বুধবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে ‘হালদার সমস্যা ও উত্তরণ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে কমিটি হালদা রক্ষায় কয়েকটি সুপারিশ তুল ধরে।

এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে হালদা নদীতে রাবার ড্যাম, কংক্রিট ড্যাম, স্লুইচ গেইট নির্মাণ বন্ধ, অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও ড্রেজিং বন্ধে পরিবেশ আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত, হলদা নদীকে ‘প্রতিবেশ সংকটাপন্ন’ এলাকা হিসেবে ঘোষণা এবং মা মাছের সমীক্ষা পরিচালনা করা।  

সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণী বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, “হালদা নদী থেকে প্রাপ্ত ডিম, উৎপাদিত রেণুর পরিমাণ এবং এখান থেকে উৎপাদিত মাছের হিসাব করলে দেখা যায়, জাতীয় অর্থনীতিতে বছরে হালদার অবদান ৮০০ কোটি টাকা।”

“এছাড়া বন্দর নগরী চট্টগ্রামের ৭০ লাখ মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা মেটানোর প্রধান উৎসও এ হালদা নদী। যেখান থেকে চট্টগ্রাম ওয়াসা মোহরা পানি শোধনাগারের মাধ্যমে প্রতিদিন দুই কোটি লিটার পানি উত্তোলন করে।

মনজুরল কিবরিয়া বলেন, বর্তমানে এ নদী প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে মহা সংকটের সম্মুখীন।

এজন্য তিনি ভুজপুর রাবার ড্যাম, হারুয়াল ছড়ি রাবার ড্যাম, হালদা সম্প্রসারণ সেচ প্রকল্প, ড্রেজার দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন, রেসাংগিরি নিশ্চিন্তাপুর সেচ প্রকল্প এবং অবাধে মা মাছ শিকারকে দায়ী করেন।

এসব ড্যাম ও সেচ প্রকল্প নির্মাণের জন্য হালদা কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেন তিনি।

হালদা নদীর বিভিন্ন স্থানে স্থাপনা করা হচ্ছে উল্লেখ করে কমিটির উপদেষ্টা সভাপতি ও ইস্টডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক সিকান্দার খান বলেন, মন্ত্রী-এমপিরা ভোট ব্যাংক বাড়ানোর জন্য এসব করেন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম কলেজের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, হালদা রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ।

ঘূর্ণিঝড় মহাসেন আঘাতের আসঙ্কায় মাছ ধরার ট্রলার এবং লাইটারেজ জাহাজগুলো নিরাপদ স্থানে অবস্থান করে। ছবিটি কর্ণফুলী শাহ আমানত ব্রিজ এলাকা থেকে তোলা।

কর্ণফুলী বাঁচাতে এখনই পরিকল্পনা: মেয়র

কর্ণফুলী নদী চট্টগ্রাম নগীর সব ধরনের ভর্জে্যর ভাগাড়ে পরিণত হলেও শুধু জোয়ারভাটার কারণেই নদীটি এখনও বেঁচে আছে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম মঞ্জুর আলম।  

তাই কর্ণফুলীর দূষণ রোধে এখনই পরিকলপনা নিতে হবে বলে মনে করেন তিনি। 

বুধবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মিলনায়তনে পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রামের উদ্যোগে ‘কর্ণফুলীকে বুড়িগঙ্গা হতে দেব না’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

মেয়র বলেন, “দিনে ১৫০০ টন বর্জ্য সংগ্রহ করে সিটি কর্পোরেশন। এগুলোর কিছু যায় কর্ণফুলীতে।  

“নগরীর পয়ঃবর্জ্য, গৃহস্থালির বর্জ্যের পাশাপাশি কারখানা ও জাহাজের বর্জে্যর ভাগাড় এই কর্ণফুলী। তবে এখনও জোয়ারভাটা আছে বলেই এটি বেঁচে আছে।”

নগরীতে আধুনিক বর্জ্য ব্যৗবস্থা তৈরিতে জাইকার সঙ্গে আলোচনা চলছে জানিয়ে মঞ্জুর আলম বলেন,

জাইকার সঙ্গে এ ব্যপারে চুক্তি হয়ে গেলে কর্ণফুলীর দূষণ অনেকটা রোধ হবে।

সভায় নদী দুষণের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জাফর আলম বলেণ, এখনই উদ্যোগ না নিলে কর্ণফুলীকে বাঁচানো কঠিন হয়ে যাবে।

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন প্রকৌশলী অধ্যাপক মঞ্জুরুল ইসলাম, সিটি করপোরেশনের সচিব রশিদ আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার মজুমদার, প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী।