খুলনা প্যাকেজিংয়ের আইপিও: হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত

লাভ ‘ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো’ খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের (কেপিপিএল) পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের ওপর হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে দিয়েছে আপিল বিভাগ।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 May 2014, 08:57 AM
Updated : 8 May 2014, 11:23 AM

বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী হাই কোর্টের ওই আদেশ ২ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে দেন।

আদালতে কেপিপিএলের পক্ষে ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ।

এর আগে এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চ বুধবার এই কোম্পানির আইপিও সংক্রান্ত সব কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছিল। এই অংশটি স্থগিত করে দিয়েছে আপিল বিভাগ।

এর ফলে হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞা আর থাকল না বলে মনে করেন আবেদনকারী পক্ষের অন্যতদম আইনজীবী কাজী মো. আরিফুর রহমান।

হাই কোর্টের আদেশে রিট আবেদনের সঙ্গে যুক্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে কেপিপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়। এ জন্য তাকে সময় দেয়া হয়েছে এক সপ্তাহ।

গত রোববার এই কোম্পানি তাদের আইপিও আবেদন সংগ্রহ শুরু করে বলে জানান আরিফুর রহমান। আইপিও স্থগিতের নির্দেশের সঙ্গে একটি রুলও দেয় হাই কোর্ট।

ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের থেকে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের আইপিও আবেদন সংগ্রহে পরবর্তী কার্যক্রম বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে কেন নির্দেশনা দেয়া হবে না, তা জানাতে বলা হয় রুলে।

অর্থ সচিব, এসইসির চেয়ারম্যান, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সোনালী ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সোনালী ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ইস্যু ব্যবস্থাপককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

গত ৪ মে কেপিপিএলের আইপিও আবেদন জমা নেয়া শুরু হয়েছিল, যা ৮ মে পর্যন্ত চলার কথা।

কেপিপিএল তাদের আইপিওর ঘোষণাপত্রে কোম্পানির ব্যাপক মুনাফা হওয়ার কথা তুলে ধরার পর তা নিয়ে অনুসন্ধান চালায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

তাদের দাবির সঙ্গে কোম্পানির আকার ও বাজারের বাস্তবতার কোনো মিল খুঁজে পাওয়া না যাওয়ার পর তা নিয়ে গত ২৪ এপ্রিল সংবাদও প্রকাশ করা হয়।

এরপর অন্য সংবাদ মাধ্যমেও এই বিষয়টি আলোচনায় আসে। ‘কেপিপিএলের চাঁদাগ্রহণ শুরু আজ, ব্যবস্থা নেয়নি বিএসইসি’ শিরোনামে দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন যুক্ত করে হাই কোর্টে রিট আবেদনটি করা হয়।

সন্দেহ তৈরি হয়, এ রকম কোনো তথ্য প্রকাশ না করার বিধান থাকলেও প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কেপিপিএলের ৪০ কোটি টাকা তুলে নেয়া ঠেকাতে জনস্বার্থে এই রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. রায়হানুল মোস্তফা।

আদালতে আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন মো. জিয়াউর রহমান ও কাজী মো. আরিফুর রহমান।

আরিফুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আইপিওর ৪০ কোটি টাকা তুলতে প্রকাশিত কোম্পানিটির বিবরণীপত্র বা প্রসপেক্টাসে মিথ্যা তথ্য দেয়া হয়েছে। এখানে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও চার পরিচালকের স্থায়ী নিবাসের একটি ঠিকানা দেয়া হয়েছে, যেটি মূলত একটি আবাসিক হোটেল।

চলতি বছরের ৪ মার্চ বাজার থেকে ৪০ কোটি টাকার পুঁজি সংগ্রহের জন্য ৪ কোটি শেয়ার ছাড়তে বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছ থেকে অনুমতি পায় কেপিপিএল।

তাদের আইপিওর ঘোষণাপত্রে দেখা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে কেপিপিএলের আয় ছিল ৩৪ কোটি টাকা। কিন্তু পরের বছরেই মুনাফা আকাশচুম্বী হয়ে প্রায় আড়াইশ ভাগ বেড়ে ১১৯ কোটি টাকা হয়।

কেপিপিএল দাবি করে, তাদের প্যাকেজিং পণ্যের বিক্রি বেড়ে ২০০ কোটি টাকা হয়েছে। তবে তাদের এই দাবির সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন একই খাতের ব্যবসায়ীরা।