ঢাকায় হলো রিকশা উৎসব

তিন চাকার রিকশায় মুগ্ধ জাপানি চলচ্চিত্র নির্মাতা সিসালা অমি কিতাজিমার উদ্যোগে দ্বিতীয় বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো ‘ঢাকা রিকশা ফিয়েস্টা’।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2014, 08:21 PM
Updated : 18 April 2014, 08:21 PM

শুক্রবার সকালে রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে রিকশাচালকদের নিয়ে এই প্রতিযোগিতামূলক   উৎসবের আয়োজন করা হয়, যাতে অংশ নেন পাঁচজন জাপানি নাগরিকও।  

কয়েক বছর আগে ঢাকা এসে পরিবহন হিসেবে রিকশার অনন্য বৈশিষ্ট্য এবং এর চালকদের ব্যবহারে মুগ্ধ হন বলে জানান জাপানের চলচ্চিত্র নির্মাতা অমি কিতাজিমা। প্রবল আকর্ষণ থেকে তৈরি করেন রিকশা নিয়ে ভিডিওচিত্রও।

তারপর গত বছর প্রথমবারের মতো আয়োজন করেন রিকশা ফিয়েস্টার। ওই আয়োজনে বিপুল সাড়া পাওয়ায় এবছর আবারো এ উদ্যোগ নেন বলে জানান চলচ্চিত্রকার অমি কিতাজিমা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “প্রচণ্ড তাপদাহ কিংবা মুষলধারে বৃষ্টি, কোনোটাই যেন রিকশাচালকের গতিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতে তাদের কোথাও যেতে বলা হলে তারা হাসিমুখে রাজি হয়ে যান।

“অথচ আমার জাপানের মত একটি উন্নত দেশে এটি কল্পনাও করা যায় না।”

উৎসবে ১০৪ জন চালক ৪২টি রিকশা নিয়ে স্প্রিন্ট ও ম্যারাথন ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতা করেন।

দ্রুতগতির প্রতিযোগিতা স্প্রিন্টে প্রতিদ্বন্দ্বীদের ৫০০ মিটার রিকশা চালাতে হয়, যাতে অংশ নেন ২১ জন চালক। আর ২০ কিলোমিটার রিকশা চালানোর ম্যারাথন ক্যাটাগরিতে অংশ নেন ৮৪ জন চালক।

সংসদ ভবন থেকে আগারগাঁও ঘুরে শিশু মেলা হয়ে কলেজ গেট ও আসাদ গেট হয়ে আবার সংসদ ভবন ছিল তাদের রুট। এভাবে চারবারে তারা ২০ কিলোমিটারের ‘ম্যারাথন’ শেষ করেন।

ম্যারাথন ক্যাটাগরিতে অংশ নেন পাঁচজন জাপানি চালকও। তারা প্রত্যেকেই ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।  

এই পাঁচজন মিলে নিজেরাই একটি রিকশা তৈরি করে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।

অংশগ্রহণকারী ইয়াতা তমোহিরো বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকার রিকশা ভ্রমণ খুব আনন্দের । বিশেষ করে বৃষ্টির সময়। এটি এমন একটি যান যার জন্য রোদ-বৃষ্টি কোনটাই বাধা হয় দাঁড়ায় না।”

চাকরির ফাঁকে অবসরে রিকশা তৈরি এবং চালনা শিখে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

উৎসবে অংশ নেয়া বাংলাদেশি চালক হামিদুল ক্লান্তির মধ্যেও যেন আনন্দ খুঁজে পান।

তিনি বলেন, “রিকশা নিয়ে উৎসব হবে কখনো চিন্তাও করিনি। যখন জানলাম যে জাপানিরা আমাদের রিকশা নিয়ে উৎসব করবে তখন অনেকটা কৌতুহলবশত অংশ নিয়েছি। এখন দেখছি ভালোই লাগছে।”

উৎসবের অন্যতম উদ্যোক্তা সলিমুল্লা কাজল রকি বলেন, “বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরার অংশ হিসেবে এই রিকশা প্রতিযোগিতার আয়োজন। এটি এমন একটি বাহন যা দেশের ৬৪ জেলাতে উপস্থিত, অথচ বিশ্বের অন্য কোনো দেশে নাই।”

তিনি বলেন, “আমাদের পর্যটন শিল্পকে আকৃষ্ট করতে ‘এক জেলা, এক পণ্য’ কৌশল রয়েছে। সামগ্রিকভাবে দেশের পর্যটনকে বিশ্বের দোরগোঁড়ায় পৌঁছে দিতে রিকশা উৎসবকে বেছে নিয়েছি।”

প্রতিযোগিতার ম্যারাথন বিভাগে অংশ নেয়া প্রত্যেক চালকই এক হাজার করে টাকা পান।

আর দুই বিভাগে বিজয়ী প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান অধিকারীরা যথাক্রমে ৫০ হাজার, ৩০ হাজার ও ২০ হাজার টাকা করে পুরস্কার পান।

সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের কাছ থেকে পুরস্কার নেন তারা।