সাঈদীর আপিলের রায় যে কোনো দিন

জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিষয়ে আপিলের রায় যে কোনো দিন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 April 2014, 03:49 AM
Updated : 16 April 2014, 02:10 PM

ফাইল ছবি

বুধবার নথি তলবে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের দুটি আবেদন খারিজ করে দিয়ে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

এই আদেশের পর চূড়ান্ত রায়েও সাঈদীর সর্বোচ্চ শাস্তি বজায় থাকবে বলে আশা করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

অন্যদিকে সাঈদীকে আইনগতভাব শাস্তি দেয়ার কোন সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী এসএম শাহজাহান।

এর আগে রাষ্ট্রপক্ষ ইব্রাহিম কুট্টি হত্যা অভিযোগে স্বাধীনতার পর দায়ের হওয়া মামলার দালাল আইনে গঠিত স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের নথি তলবের আবেদন করে। অপরদিকে আসামিপক্ষ ওই মামলার (জিআর) রেজিস্ট্রার তলবের আবেদন করে।

এই দুই আবেদন খারিজের আদেশে বলা হয়, ‘বোথ দ্য পিটিশন আর রিজেক্টেড। জাজমেন্ট সিএভি।’ (উভয় আবেদন খারিজ করা হলো, রায় যে কোনদিন)।

এর আগে মঙ্গলবার এ মামলায় দণ্ডাদেশের বিষয়ে আপিলে উভয়পক্ষের শুনানি শেষ হয়। পরে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান না রেখে বুধবার উভয়পক্ষের এই দুটি আবেদনের বিষয়ে আদেশের দিন রাখা হয়।

গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের এ নেতাকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

‘দেলাওয়ার সাঈদী-শিকদার বিতর্ক’

রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখার পরও ঘুরেফিরে দেলাওয়ার সাঈদী-শিকদার বিতর্ক দুই পক্ষের মধ্যে ঘুরে ফিরে এসেছে।

এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, “তারা দেলাওয়ার মল্লিক-শিকদার ইত্যাদি কথা বলেছেন। জেরায় তারা আমাদের সাক্ষীদেরকে দিয়ে সাজেশন দিয়ে এ কথা বলানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমাদের সাক্ষীরা কোথাও এটা বলেনি।”

“বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে, তারা তাদের সাক্ষীদেরকে দিয়ে এটা বলানোর চেষ্টা করে নাই। তাদের সাক্ষীরা এ ব্যাপারে নিশ্চুপ।”

এ ব্যাপারে সাঈদীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, “যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে, সে সব ঘটনা সত্যি হতে পারে। তবে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী তাতে জড়িত নন। অভিযুক্ত হিসাবে দেলাওয়ার শিকাদারের পরিবর্তে দেলাওয়ার সাঈদীকে করা হয়েছে।”

এই বিচার ইতিহাস হয়ে থাকবে, এখানে ন্যায় বিচার করা হয়েছে কি-না, সেটা বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্ম গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে।

অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান বলেন, তারা কাদের মোল্লার সময়ও একই ধরণের বিতর্ক তোলার চেষ্টা করেছিলো। তারা তখনও বলেছিলো, কসাই কাদের আর কাদের মোল্লা এক নয়। কিন্তু সেটা তারা প্রমাণ করতে পারেনি।

‘সুবক্তা হলেও অপরাধীকে শাস্তি পেতে হবে’

‘ধর্মীয় বিষয়ে সুবক্তা’ হিসাবে সাঈদীর পরিচিতি পাওয়ার বিষয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “তিনি যত ভালো বক্তব্য দেন না কেন, অপরাধী হলে সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়।

“যদি প্রমাণ হয়, তিনি হত্যা করেছেন, ধর্ষণ করেছেন, কোন নারীকে বিদেশিদের হাতে তুলে দিয়েছেন,  দেশত্যাগে বাধ্য করেছেন, ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্মান্তরিত করেছেন, তাহলে তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।”

গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের এ নেতাকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের আনা ২০টি অভিযোগের মধ্যে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসাবালীকে হত্যা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘরে আগুন দেয়ার দুটি অভিযোগে তার মৃত্যুদণ্ড হয়।

আরো ছয়টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে আদালতে প্রমাণিত হলেও এর মধ্যেই ফাঁসির আদেশ হওয়ায় সেগুলোতে কোনো দণ্ড দেয়নি আদালত।

এই রায়ের বিরুদ্ধে গত ২৮ মার্চ আপিল করেন সাঈদী। অন্যদিকে প্রমাণিত হলেও সাজা না হওয়া ছয় অভিযোগে এই জামায়াত নেতার শাস্তি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর এই মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়। প্রথমে আসামিপক্ষ রায়, সাক্ষ্য ও জেরা উপস্থাপনের পর গত ২৯ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন আইনজীবী এসএম শাহজাহান।

আসামিপক্ষের পর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছে রাষ্ট্রপক্ষ।

মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম রায়ে গত ২১ জানুয়ারি জামায়াতের সাবেক রুকন আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ আসে। পলাতক থাকায় তিনি এর বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেননি।

৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। তবে আপিল শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট গত ১৭ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত রায়ে কাদের মোল্লাকেও মৃত্যুদণ্ড দেয়। ১২ ডিসেম্বর ওই দণ্ড কার্যকর হয়।

তৃতীয় রায়ে সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এরপর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের আরো ছয়টি রায় দেয়া হয়।