জবি’র ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস শিক্ষামন্ত্রীর

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বেদখল’ হলগুলো ফিরিয়ে দেয়া এবং আন্দোলনে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর পুলিশি হামলার  ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Feb 2014, 12:29 PM
Updated : 24 Feb 2014, 07:43 PM

সোমবার রাতে প্রথমে জবি শিক্ষকদের ১৫ সদস্যের একটি দল এবং পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি দলের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শিক্ষামন্ত্রীর হেয়ার রোডের বাসভবনে জবি শিক্ষকদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রথম বৈঠকটিতে বসেন মন্ত্রী।

বৈঠক শেষে জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি সরকার আলী আক্কাস সাংবাদিকদের বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। শিক্ষকদের ৮ দফা দাবির বিষয়ে তিনি আন্তরিকতার সাথে পদক্ষেপ নেবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।” 

এর ঠিক একটু পরেই জবি’র আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল শিক্ষামন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে ছয় দফা দাবিসহ একটি স্মারকলিপি দেয়। শিক্ষামন্ত্রী তাদেরকেও হল ফিরিয়ে দেয়ার এবং পুলিশি হামলার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন।

ছাত্র প্রতিনিধির মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি আল আমিন মাহাদী, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম সজীব, সাংবাদিক সমিতির সভাপতি কাজী মোবারক হোসেনসহ ১৫ জন।

এর আগে সচিবালয়ে জগন্নাথের আন্দোলন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক জমি ও অবকাঠামো থাকলেও সেসব বেহাত হয়েছে।

“আমরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি ফেরত চাই। দখল হওয়া হল ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।”

তখন হল উদ্ধারে প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানান নাহিদ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে তিব্বত হলসহ অবৈধ দখলে থাকা ছাত্রবাসগুলো উদ্ধারের দাবিতে চলতি মাসের শুরু থেকে নতুন করে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, ঢাকা-৭ আসন থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সাংসদ হাজি সেলিম ২০০০ সাল থেকে তিব্বত হল দখল করে রেখেছেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রোববার পুরান ঢাকার ইসলামপুর এলাকায় ওই হলের সামনে বিক্ষোভ শুরু করলে তাদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। পুলিশের রাবার বুলেট ও টিয়ার শেলে এক শিক্ষকসহ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিও ছাত্রদের সঙ্গে আন্দোলনে থাকার ঘোষণা দেয়।

এদিকে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরা সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন। একই সময়ে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ দেখায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমানের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। পরিস্থিতি ‘সহনশীল’ রাখার চেষ্টা হচ্ছে।

তিনি বলেন, “প্রয়োজনে ঢাকার আশেপাশে আবাসিক হল স্থাপনের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য আমরা জমি খুঁজছি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী।

পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বেদখল হয়ে যাওয়া ছাত্রহলগুলো ঘুরে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়টি ছাত্রহল ও কর্মচারী আবাস বেদখল হয়ে আছে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পাটুয়াটুলী ওয়াইজঘাট এলাকার জিএল পার্থ লেইনে ৮ দশমিক ৮৮৯ কাঠা জামিতে তিব্বত হল সাংসদ হাজী সেলিম ২০০০ সাল থেকে দখল করে আছেন। হলের মূলভবনের বেশিরভাগ অংশ ভেঙে তিনি স্ত্রীর নামে ‘গুলশানআরা সিটি মার্কেট’ নির্মাণ করেছেন।

অবশ্য হাজী সেলিএমর দাবি, ওই জমি তার নিজের।

আরমানিটোলার এসি রায় রোডে আবদুর রহমান হলটি এখন পুলিশ সদস্যদের আবাস হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আরমানিটোলা মাহুতটুলির ১, শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী রোডের ৪০ কাঠা জমিতে শহীদ আনোয়ার শফিক হলটি স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে।

যদুনাথ বসাক লেন, টিপু সুলতান রোডের সাইদুর রহমান হল ও রউফমজুমদার দুটির বর্তমানে কোনো অস্তিত্বই নেই। সাইদুর রহমান হলের জমিতে এখন হার্ডওয়ারের দোকান রয়েছে।

পাটুয়াটুলীর ১৬ ও ১৭ নম্বর রমাকান্ত নন্দী লেনের শহীদ আজমল হোসেন হল দখল করে একসময় পুলিশ সদস্যদের কিছু পরিবার থাকত। এর কিছু অংশে গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন সমিতি। ১৯৯৬ সালে এর একাংশ দখল করেন স্থানীয় মোশারফ হোসেন খান।

বংশালের ২৬, মালিটোলায় বজলুর রহমান হলের ভবনে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে শহীদ জিয়াউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ১৯৮৫ সালে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের ছাত্ররা হলটি ছাড়তে বাধ্য হন।

গোপীমোহন বসাক লেনের নজরুল ইসলাম হলের ২০ কাঠা জমিতে গড়ে ওঠেছে জামেয়া শরীয়াবাগ জান্নাত মাদ্রাসা ও এতিমখানা। সাবেক কমিশনার আওলাদ হোসেন দিলীপ এর তত্ত্বাবধান করেন। হলটির একাংশ দখল করে ভবন নির্মাণ করেছেন বিটিভির সাবেক ক্যামেরাম্যান গোলামুন্নবী।

তাঁতীবাজারের ঝুলনবাড়ী লেইনে শহীদ শাহাবুদ্দিন হল দুই যুগেরও বেশি সময় পুলিশের দখলে ছিল। ২০০৯ সালের জুনে আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল হক এর দখল নেন।

পাটুয়াটুলীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ছয়তলা আবাসস্থলের জায়গায়  তৈরি হয়েছে ক্রাউন মার্কেট। জনৈক ওবায়দুল্লাহ এর মালিকানার দাবিদার। একসময় ছাত্রহল হিসেবেও ব্যবহৃত হতো ভবনটি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হাবিবুর রহমান হলটিও দীর্ঘদিন স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে ছিল। ২০১২ সালের প্রথম দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীরা হলটি উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্থান্তর করে।

এছাড়া বাণীভবন নামের ভবনটিও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের দখলে রয়েছে। এক সময়ের এই ছাত্র হলে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা বাস করছেন।