‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শ্যাষ দ্যাখতে ভুট দিবার আইচি’

সহিংসতার শঙ্কার মধ্যে তীব্র শীত উপেক্ষা করেই রোববার সকালে কেন্দ্রে এসেছিলেন রাজশাহীর ষাটোর্ধ্ব জমিরউদ্দিন প্রামাণিক, যার আশা, এই নির্বাচনে ভোট দিলে যুদ্ধাপরাধের বিচার শেষ হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিএস এম নাদিম মাহমুদ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Jan 2014, 08:25 AM
Updated : 5 Jan 2014, 10:01 AM

রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে যে দুটিতে এবার ভোট হচ্ছে তার একটি রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের ভোটার তিনি।

সকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বের হয়েই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুক্তিযোদ্ধা জমিরউদ্দিন।

নিরুত্তাপ আর আতঙ্কের এই নির্বাচনে কেন ভোট দিতে এসেছেন- প্রশ্নটা আসতেই শীত আর বয়সের ভারে কাতর এই মুক্তিযোদ্ধার চোখেমুখে একাত্তরের আগুন। 

“যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের শ্যাষ দ্যাখতে ভুট দিবার আইচি। তেতাল্লিশ বছর আগত মোরা তাগের বিরুদ্ধে যুদ্ধু করচি, আইজ আবার যুদ্ধু করতে আইচি। ভুট দিইয়া উপযুক্ত জবাব দিমু,” বলেন তিনি।

নির্বাচনে বিএনপি না থাকার প্রসঙ্গ উঠতে তিনি বলেন, “শেখের (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) কতায় যুদ্ধে নামছিলাম। আইজ জীবনের শ্যাষ বয়সে শেখের বেটির কতায় ভুট দিচি। যারা দ্যাশকে পুড়িয়ে দিচ্চে, মানুষগুলানকে পুড়তাছে তারা তো একাত্তরের দুসর(দোসর)।”

নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে একই কেন্দ্রে জীবনে প্রথম ভোট দিতে আসলেও উচ্ছ্বসিত নওদাপাড়া আদর্শ ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র জুলফিকার আহমেদ হিমেল।

তিনি বলেন, “যেভাবে দেশে সহিংসতা চলছে তাতে ভেবেছিলাম জীবনের প্রথম ভোট দিতে পারবো না। কিন্তু প্রথমবারের মতো ভোট দিতে পেরে নিজের মধ্যে এক ধরনের আনন্দ বোধ করছি।”

ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থান দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

রাজশাহী-৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের আয়েন উদ্দিন (নৌকা), কলস প্রতীক নিয়ে মেরাজ উদ্দিন মোল্লা এবং জাতীয় পার্টির শাহবুদ্দিন বাচ্চু (লাঙ্গল)।

উচ্ছ্বাসের বিপরীত চিত্রও দেখা গেছে একই কেন্দ্রে। কথা হলো ভোট দিতে আসা হাতেগোনা কয়েকজন নারী ভোটারের একজন মোমেনা বেগমের সঙ্গে।

সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে নিজের হতাশা যেন উগরে দিলেন ৪০ বছর বয়সী এই নারী।

“জীবনে কয়েকবার ভোট দিয়েছি, কিন্তু এবারের ভোট প্যানসে(পানসে)মনে হচ্ছে। মিছিল-স্লোগান কম হলেও মার্কা হাতে পাইছি। সকালে ভোট দিতে এসে এখানেও দেখি লোকজন কম,” বলেন তিনি।

শ্যামপুর উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা শুভাশিস চন্দ্র মনে করেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারদের উপস্থিতিও বাড়বে।

রাজশাহী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। সকাল থেকে কোথাও বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

এর বাইরে রাজশাহী-৬ ভোট হচ্ছে। সেখানে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের শাহরিয়ার আলম ও প্রজাপতি প্রতীক নিয়ে রায়হেনুল হক রায়হান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেব লড়ছেন।

দুই আসনে মোট ভোটার পাঁচ লাখ ৯৩ হাজার ৫৩২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৯৬ হাজার ৬ জন এবং নারী ভোটর দুই লাখ ৯৭ হাজার ৫৩৬ জন।