গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে অবৈধভাবে ভারতে ঢোকার সময় উত্তর চব্বিশ পরগণার স্বরূপনগর সীমান্ত থেকে এক বাংলাদেশিকে আটক করে বি এস এফ।
পরে তাকে স্বরূপনগর থানায় হস্তান্তর করা হলে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা করে।
মামলায় ওই ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয় সুখরঞ্জন বালা হিসাবে, যদিও তার ঠিকানাসহ অন্যান্য তথ্য সুখরঞ্জন বালির সঙ্গে মিলে যায়।
সুখরঞ্জন বালি যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের তালিকাভুক্ত সাক্ষী হলেও পরে পক্ষ পরিবর্তন করেন বলে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের দাবি।
গত বছরের ৫ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ থেকে তিনি ‘নিখোঁজ’ হন। সাঈদীর আইনজীবীরা অভিযোগ করে আসছেন, সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজনই সুখরঞ্জনকে অপহরণ করেছে।
তবে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
ভারতের বসিরহাটের আদালত গত ৩ এপ্রিল সুখরঞ্জন বালাকে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠায় এবং সাজা শেষে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে বলে।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, ভারতের কারাগার থেকে বালি বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজে একটি চিঠি পাঠান, যাতে তিনি তাকে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে অপহরণের কথিত ঘটনা এবং কীভাবে তাকে ভারতে পাঠানো হয়- সেই বর্ণনা দেন।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের পক্ষ থেকে সুখরঞ্জনকে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।
কিন্তু কলাকাতার বাংলাদেশ মিশন বলছে, বালি বা বালা- কারো গ্রেপ্তার বা কারাদণ্ডের বিষয়ে কোনো তথ্য তাদের জানানো হয়নি।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সুখরঞ্জনের সাজার মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। সেক্ষেত্রে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ভারত সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়ার কথা।
কিন্তু এ বিষয়েও কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনকে কিছু জানানো হয়নি বলে কর্মকর্তারা জানান।
ভারত সীমান্ত থেকে বহু মানুষকে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেয়ার খবর মাঝেমধ্যেই গণমাধ্যমে আসে, যা পরিচিতি পেয়েছে ‘পুশব্যাক’ নামে। বিএসএফ কর্মকতারা বলছেন, অনুপ্রবেশকারীদের যথাযথ নিয়ম মেনে হস্তান্তর করতে গেলে অনেক ক্ষেত্রেই তার জাতীয়তার প্রমাণ নিয়ে বিজিবির পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়। এর মীমাংসা করে হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ করতে অনেক সময় লেগে যায়।
সে তুলনায় ওই ব্যক্তিকে সীমান্তের ‘নিরিবিলি’ জায়গা দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া অনেক সহজ, যা প্রায়ই করা হয় বলেও স্বীকার করেছেন বিএসএফ সদস্যরা।
সুখরঞ্জনের ক্ষেত্রেও যদি একই ঘটনা ঘটে, তাহলে যুদ্ধাপরাধ মামলার নিখোঁজ সাক্ষীকে নিয়ে ‘রহস্য’ চলতে থাকবে আরো অনির্দিষ্ট সময়।